বিশ্বকাপের শুরুতে তো দুর, কোয়ার্টারের মাঝেও বোধয় কেউ ক্রোয়েশিয়া-ফ্রান্স ফাইনাল কল্পনা করেনি। তারুণ্য নির্ভর ফ্রান্স আর অপর দিকে ক্রোয়াটদের সোনালী প্রজন্ম; আজকে মস্কোতে ইতিহাস রচনার ফাইনালে মুখোমুখি দুই দল।
বিষয়টি বিস্ময়কর ঠেকলেও ক্রোয়েশিয়া নিজ কর্মগুণেই ফাইনালে। কেউ যদি বলে থাকেন যে ক্রোয়েশিয়া তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে এই অসাধ্য সাধন করেছে তাহলে তাকে নতুন করে ভাববার অনুরোধ জানাবো। হ্যাঁ, ক্রোয়েশিয়া হয়ত নামে খুব বড় কোনো শক্তির মুখোমুখি হয়নি; কিন্তু এটি করার জন্য তারা গ্রুপ পর্বে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। এর পরের পথটিও সহজ ছিল না। দুটি ম্যাচ পেনাল্টি শ্যুট আউটে এবং একটি অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলেই ফাইনালে পা রেখেছে দালিচের শিষ্যরা।
ক্রোয়েশিয়া শুধু ফুটবলীয় স্কিলই না; দেখিয়েছে মানসিক জোরও। পরপর নক আউটের দুটি ম্যাচ পিছিয়ে থেকে পেনাল্টিতে জিতে আসতে অসাধারণ স্নায়ুর জোর লাগে। এমনটি যারা একবার না ইতিহাসের প্রথম দল হিসাবে করে দেখিয়েছে তাদের ফাইনাল খেলাটা ফ্লুক বলা বোধয় বিবেচকের কাজ হবে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জ্বর নিয়েও ১২০ মিনিট খেলা রাকেটিচ এবং রাশিয়ার বিপক্ষে পায়ে ক্র্যাম্প নিয়েও দুটি সেভের পর পেনাল্টি ঠেকিয়ে সুবাসিচ দেখিয়ে দিয়েছে এ দলটি জয়ের জন্য কতটা ক্ষুধার্ত।
অপর দিকে ফ্রান্সও যে যোগ্য দল হিসাবেই ফাইনালে উঠেছে তা নিয়ে কারো মধ্যেই দ্বিধা নেই। নক আউটে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং বেলজিয়ামের মত দলকে হারিয়ে ফাইনালে এসেছেন দেশম শিষ্যরা। এমন তিনটি দলকে যারা পরপর তিন ম্যাচে হারাতে পারে তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে কে?
শুধু ফলাফলের দিক দিয়েই না, খেলা দিয়েও সবাইকে মুগ্ধ করেছেন এমবাপ্পে-গ্রিজম্যানরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিরা বিপক্ষে ২-১ গোলে পিছিয়ে পরার পর যে খেলাটা ফ্রান্স খেলেছিল সেটিই যথেষ্ট তাদের পক্ষ্যে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। মাঠে যেমন খেলোয়াড়রা তেমনি মাঠের বাইরে দেশমও মুগ্ধ করেছেন অসাধারণ কৌশলের ক্রমাগত প্রদর্শনী দেখিয়ে। কখনো অল আউট অ্যাটাক, কখনো বা দুরন্ত গতির পাল্টা আক্রমণ; ফুটবলের সকল কৌশলেই যেন সমান স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ফ্রান্স।
ফাইনালের মত ম্যাচে ফেভারিট বাছাই করা সব সময়ই কঠিন। বিশেষ করে দুটি দলই যখন নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দেখিয়েই ফাইনালে এসেছে। তবে, কাগজ কলমের হিসাব এগিয়ে রাখবে ফ্রান্সকেই। পগবা-এমবাপ্পের মতন খেলোয়াড়রা যে দলে, এবং যখন তারা দারুণ ছন্দে তখন অন্য কাউকে ফেভারিট বলাও কঠিন।
কিন্তু দালিচের দল এই সহজ হিসাবটি এত সহজে করতে দিবে বলে মনে হয় না। তারকাদ্যুতিতে পিছিয়ে থাকলেও কার্যকারিতার দিক দিয়ে দালিচ শিষ্যরা নিজেদের বেশ ভালোমতই চিনিয়েছেন। ফ্রান্সকে জিততে হলে ক্রোয়াটদের বিপক্ষে নিজেদের সেরা ফুটবলটাই খেলতে হবে। টুর্নামেন্ট পরিক্রমাই বলে দিচ্ছে শেষ মুহুর্তের আগ পর্যন্ত খেলা ছাড়তে জানে না ক্রোয়েশিয়ার এই দলটি।
দেশম না দালিচ? নতুন করে ইতিহাস কে লিখবেন সেটি জানার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘন্টার। যেই জিতুক, পুরো টুর্নামেন্টেই দুটি দল যেভাবে খেলেছে সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ফাইনালটি যে হবে দেখার মত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।