যে তিনটি কারণ সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে দুই দলের

যে তিনটি কারণ সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে দুই দলের

বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে এর মানে দলগুলি অনেক ঝঞ্জাট অতিক্রম করে এসেছে। যোগ্যতা অর্জনের পথ পরিক্রমায় সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে কিছু করে দেখাতে পারার আত্মবিশ্বাস। আর মাত্র একটি ধাপ, বাঁধা পেরুতে পারলেই অমরত্ব। বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া নিজেদের জাত চিনিয়েছে। অজস্র কারণ আছে তাদের পক্ষে বাজি ধরার। সেখান থেকে তিনটে করে কারণ তুলে ধরা হল

★ ফ্রান্স

দৃঢ়তা

টুর্নামেন্টে কিক অফের বাঁশি বাজার পর থেকেই ছুটছে ফ্রেঞ্চ ট্রেন। রক্ষণ থেকে আক্রমণ, প্রতি বিভাগেই সবটা নিংড়ে দিচ্ছেন সবাই। আসরে সর্বোচ্চ ৪৮টি ব্যাক পজিশন ডুয়েল জিতেছে কান্তে। গোলরক্ষকের সঙ্গে পালন করছেন অধিনায়ত্ব। হুগো লরিস ভড়কে না গিয়ে দ্বিগুণ দায়িত্বশীলতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। ফরাসি তেকাঠি বরাবর বিপক্ষের নেওয়া সর্বশেষ সাত অন টার্গেট শটের প্রত্যেকটি প্রতিহত হয়েছে লরিস ওয়ালে। মিডফিল্ডে পগবা, আক্রমণে গ্রিজ্জি, এমবাপ্পেরা ফুটছেন তারুণ্যের টগবগে রক্তে। আর্জেন্টিনা ম্যাচে জোড়া গোল দিয়ে এমবাপ্পে ভাগ বসিয়েছে পেলের ছয় দশক পুরনো রেকর্ডে! আজ এরা নিজ নিজ জায়গায় আরেকবার দৃঢ়তার পরিচয় দিলে বিশ বছর পর ফ্রান্সের ট্রফি কেবিনেটে আরেকটি বিশ্বকাপ আসা সময়ের ব্যাপার।

টিম স্পিরিট

দিদিয়ের দেশম বিশ্বকাপ শুরুর আগে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন রীতিমত। অভিজ্ঞদের দেশে রেখে একদল আনাড়ি তরুণ নিয়ে পাড়ি জমান রাশিয়ায়। আজ মাস দেড়েক পর দেশম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বাজিতে তিনি জিতে গেছেন। তারুণ্যের ঝান্ডা উড়িয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে তাঁবু গেড়েছে তার সৈন্যরা। ‘বিশ্বকাপ প্রতিভাকে নয়, মনে রাখে শুধু দলকে’। সেমির আগে এমনটি বলেছিলেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্তিনেজ। তার কথার প্রতিফলন এবারের ফ্রান্স দলে। একসু্তোয় গাঁথা এগারো জন। পাভার্ড, ভারানে, উমতিতিদের মতো ডিফেন্ডারদের ম্যাচ উইনিং গোলগুলি বলে দেয়, কেবল ফরোয়ার্ড লাইন আটকালেই অকেজো নয় এই ফ্রান্স।  দলের বোঝাপড়া অসাধারণ, প্রত্যেকে অবদান রাখছেন যার যার জায়গা থেকে।

ইতিহাস

ইতিহাস, ঐতিহ্যে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে বহু ক্রোশ এগিয়ে ফ্রান্স। ফরাসিরা যেখানে খেলছে তৃতীয় ফাইনাল, সেখানে ক্রোয়াটদের এটাই প্রথম। ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ২০০৬ সালেও খেলেছে ফাইনাল। একমাত্র বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক দেশম আজ কোচের ভূমিকায়। জিতলেই মারিও জাগালো এবং ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর তৃতীয়জন হিসেবে খেলোয়াড়-কোচের দ্বৈত ভূমিকায় বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন। ইতিহাস তাই বড় অনুপ্রেরণা হয়ে সাহস যোগাবে ‘লা ব্লুদের।

★ ক্রোয়েশিয়া

অবিশ্বাস্য যাত্রা

১৪ জুন আপনাকে যদি কেউ বলত, ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালে খেলবে ক্রোয়েশিয়া; হেসোই উড়িয়ে দিতেন। খোদ ক্রোয়াটরাই উড়িয়ে দিত সম্ভবত। কিন্তু একমাস পর সেই রূপকথা আজ জলজ্যান্ত সত্য। অবিশ্বাস্য যাত্রায় অনন্য এক মহাকাব্য রচনা করে ফাইনালে কোচ দালিচের দল। এতটুকুই যথেষ্ট ফাইনালে নামার আগে।

মানসিক শক্তি

পরিসংখ্যান, ইতিহাস, ঐতিহ্যে পিছিয়ে থাকতে পারে; তবে মানসিকতায় নিঃসন্দেহে এগিয়ে ক্রোয়াট শিবির। নকআউটে তিন ম্যাচেই অতিরিক্ত সময়ে খেলা নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে ম্যাচ বের করে আনা একটি দল শারীরিক দিক দিয়ে যেমনই থাকুক, মানসিক দিক দিয়ে চাঙ্গা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় হার না মানা চরিত্র, তাহলে তো কথাই নেই। অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে আমাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রমাণ করেছি’! ব্যস, আর মাত্র এক ম্যাচে প্রমাণ করতে পারলেই কেল্লাফতে।

অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিশ্বাস

ফ্রান্স যদি চায় তারুণ্যে ভর দিয়ে বিশ্ব জয় করতে, ক্রোয়েশিয়া চাইবে অভিজ্ঞতার সম্মিলন ঘটাতে। দেশমের শক্তি যদি হয় উত্তাল কৈশোরের রক্ত, দালিচের ভরসা পোঁড় খাওয়া ঘামে। ক্রোয়াট শিবিরের সবচেয়ে তারকা লুকা মদ্রিচ যেমন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, তেমনি সহযোদ্ধা মানজুকিচ, রাকিতিচ, পেরিসিচরাও অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। আজ রাতে ভাত্রেনিদের সেরা অস্ত্র আত্মবিশ্বাস। প্রথমবার ফাইনালে ওঠা, গ্রুপ পর্ব থেকেই নিজেদের জাত চেনানো। ফুটবলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়, এই মন্ত্রে উজ্জীবিত ক্রোয়েশিয়া আজ পাশার দান উল্টে দিলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।