রাত পোহালেই শুরু হবে ফাইনালের দিন, তারপর পর্দা নামবে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা বিশ্বকাপের। কল্পনাকেও হার মানানো সাফল্যে প্রথমবার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া, ওদিকে দ্বিতীয়বার বিশ্বজয়ের নেশায় বুঁদ ফ্রান্স। রেফারি বাঁশি বাজাবেন, যুদ্ধ শুরু হবে। একটা সময় শেষ হবে। মাঠের তারকাদের নিয়ে ব্যস্ত হবে সবাই। কিন্তু, আসল যে জিনিসটি, ‘ফুটবল’ সেটি পড়ে রইবে একপাশে। মাঠের সত্যিকারের আনসাং হিরো তো ওই চর্মগোলক। তাকে নিয়েই টুকটাক…
• নাম : অ্যাডিডাস টেলস্টার ১৮
• ডিজাইনার : রোল্যান্ড রন্ডলার
• প্রস্তুতকারক : অ্যাডিডাস
• বল উন্মোচন : ৯ নভেম্বর, ২০১৭
• পেছনের গল্প…
১৯৭০ সাল থেকে ফিফা বিশ্বকাপের বল প্রস্তুতের দায়িত্ব ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসের ওপর ন্যস্ত। এবারের আসরের বলের ডিজাইনও করা হয়েছে সত্তরের বলের আদলে। ‘টেল’ শব্দ নেওয়া হয়েছে টেলিভিশন থেকে, ‘স্টার’ মানে তারকা। বলের সাদাকালো ডিজাইন করা হয়েছে টিভি টেলিকাস্ট নিয়ে। তখন রঙিন টিভির প্রচলন তেমন ছিল না। ‘সাদাকালো পর্দায় ফুটবল তারকাদের মাঠ দাঁপাতে দেখা যাচ্ছে’, বলের প্রতীকী অর্থতে ফুটে উঠেছে এমনটাই।
• পাকিস্তান এবং ফুটবল!
অবাক হচ্ছেন? ফিফা র্যাংকিংয়ে দুইশতম দলের সঙ্গে বিশ্বকাপের সম্পর্ক কী? তারা তো মেগাআসরে খেলার যোগ্যতাই অর্জনে ব্যর্থ। তারপরও পাকিস্তান বিশ্বকাপে থাকছে। প্রতি পাসে, প্রতি থ্রো, প্রতি গোল, গোলরক্ষকের দুর্দান্ত সেইভে। পাকিস্তান থাকছে প্রতি ন্যানোসেকেন্ড, পিকোসেকেন্ডে। তারা ছাড়া বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবে না! বিশ্বকাপের বল যে তৈরি হচ্ছে তাদের হাতেই! পাকিস্তানের শিয়ালকোটে রয়েছে ক্রীড়াসামগ্রী তৈরির বিশাল বাজার। সর্বপ্রথম ১৯৮২ বিশ্বকাপে বল বানায় তারা। তারপর থেকে নিয়মিতভাবে নিভৃতে চালিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট চর্মগোলক তৈরির কাজ। লা লিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেসলিগা, লিগ ওয়ানসহ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বলের যোগানও যায় শিয়ালকোট থেকেই। শিয়ালকোট বিশ্বের শিল্পোন্নত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার দশ শতাংশ আয়ের উৎস শিয়ালকোটের শিল্প পল্লী! দুনিয়ার যত ফুটবল দেশে দেশে বিদ্যমান, শিয়ালকোট দেয় তার ৭০ ভাগের যোগান। বিশ্বকাপ ফুটবলের একবিংশতম আসরে না থেকেও আছে তারা, তাদের বানানো চর্মগোলকে আগুন ধরিয়েই রাশিয়ার হাঁড়কাপানো শীতে একমুঠো উষ্ণতার আঁচ মেখে অমরত্বের পথে রওনা দেবেন কেউ কেউ, কেউ কেউ লিখতে বসবেন ইতিহাস।
• অ্যাডিডাস টেলস্টার ১৮
বিশ্বকাপের এবারের আসরে প্রথমবারের মতো থাকছে ‘ভিএআর বা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি’ সিস্টেম। রয়েছে গোল লাইন প্রযুক্তি। আর এসব কারণে অনুমিতভাবেই বলটিতেও থাকছে বিশেষ ফিচার। ম্যাচের অফিশিয়াল বলে লাগানো হয়েছে সেন্সর, যা আপনি আপনার স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। এই প্রযুক্তির নাম হচ্ছে এনএফসি, যার পূর্ণরূপ ‘নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন’। দর্শকদের জন্যও রয়েছে বিশেষ আয়োজন। ফিফার অফিশিয়াল বল নিয়ে নানান কারিকুরি করে সে ভিডিও পাঠিয়ে দিতে পারবে ফিফার কাছে। পরবর্তীতে সেসবের উপর হবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, ঘোষিত হবে বিজয়ী। টেলস্টার ১৮ মূলত নতুন কোন ডিজাইন নয়। ১৯৭০ বিশ্বকাপের বলেই সংযোজন-বিয়োজন ঘটিয়েছেন ‘রোল্যান্ড রন্ডলার’। সাদাকালো বলে লেগেছে রঙের ছোঁয়া। ২০১৭ সালের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ-আল জাজিরা ম্যাচে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার ব্যবহার করা হয় অ্যাডিডাস টেলস্টার ১৮ বলের।