‘ডিকলোনাইজিং দ্যা মাইন্ড’ গ্রন্থের লেখক ‘নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গো’ওকে ভারতীয় অনলাইন স্ক্রল ডটইন এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আফ্রিকার অবশ্যপাঠ্য উপন্যাসগুলো কী কী। তিনি সাতটি বিখ্যাত আফ্রিকান উপন্যাসের নাম বলেছেন। এবং সেই সাতটি উপন্যাস নিয়ে তিনি কথাও বলেছেন তাদের সাথে। নিম্নে জবানের পাঠকদের জন্য নগুগির জবানিতে দেয়া উপন্যাসগুলোর বর্ণনা তুলে ধরা হল।
গড‘স বিটস অফ উড এবং শালা, সেমবেন উসমান
১৯৬০ সালে প্রকাশিত হওয়া, ‘গডস বিটস অফ উডস’র লেখক সেমবেন উসমান ফরাসি ভাষাভাষী আফ্রিকান লেখকদের মধ্যে অন্যতম। সেনেগালের একজন জেলের ছেলে সেমবেন। ফ্রেঞ্চ শিক্ষকের প্রতিবাদ করায় তাকে তার কলোনিয়াল স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাক্রমে সেমবেন ফ্রেঞ্চ আর্মিতে যোগদান করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যায় ফ্রেঞ্চ আর্মির সাথে। যুদ্ধের পরে তিনি ডাকার ফিরে আসেন এবং সেখানে রেইলরোড আন্দোলনে অংশ নেন। গডস বিটস অফ উডস এর গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল এটাই। উপন্যাসটি ফ্রেঞ্চ ভাষায় প্রকাশিত হয়।
আমি এই লেখকের আরেকটি উপন্যাসের কথা বলব। আগের বইয়ের তুলনায় ছোট হলেও, বইটির গল্প অবলম্বনে সিনেমা হয়েছে। উপন্যাস ‘সালা’র মুলচরিত্রে রয়েছে সদ্য ৩য় বিবাহ করা একজন ব্যবসায়ী। বিয়ের দিন পুরুষত্বহীনতায় ভুগতে থাকা এই ব্যবসায়ী যেকোন উপায়ে রোগ থেকে নিরাময়ের খোঁজ করছে।
এ ওয়াক ইন দ্য নাইট এন্ড আদার স্টোরিজ, অ্যালেক্স লা গুমা
অ্যালেক্স লা গুমা একজন দক্ষিণ আফ্রিকান লেখক। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মিকি আদোনিস। শেতাঙ্গ বসের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মিকি আদোনিসের রাত কাটে এখন তার ঘেঁটোতে পায়চারি করে যেখানে সে বসবাস করে। কিন্ত এই ঘেঁটোতে হেঁটে রাত কাটানো মানুষ মিকি একা নয়। উপন্যাসটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া অবিচারেরই চিত্রায়ণ। লেখকের সাথে আমার শেষ দেখা হয় ১৯৬২ সালে। এখন সে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকেন না। ১৯৬৬ সালে উপন্যাসটির লেখক লা গুমাকে জোরপূর্বক দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বের করে দেয়া হয়।
দ্য বিউটিফুল ওয়ানস আর নট ইয়েট বর্ন, আয়ি কিউই আরমাহ
আরমাহ, ঘানার একজন লেখক, বিউটিফুল ওয়ানস প্রকাশ করেন ১৯৬৮ সালে। পরবর্তীতে এটা ‘হ্যানিমেন আফ্রিকান রাইটার সিরিজ’ এর ব্যানারে প্রকাশিত হয়। বইটি পশ্চিম আফ্রিকার সংকটকেই প্রতিনিধিত্ব করে। বইয়ের মুল চরিত্র অজ্ঞাতনামা একজন মানুষ যিনি স্বাধীনতা পরবর্তী প্রেক্ষাপটের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বইয়ের নাম খেয়াল করুন, এটা beautiful নয়, beautyful।
ওম্যান অ্যাট পয়েন্ট জিরো, নাওয়াল এল সাদাভি
আমার বন্ধু, বিখ্যাত মিসরীয় লেখক এবং ডাক্তার, নাওয়াল এল সাদাভি তার জীবনে অনেক বিখ্যাত বই লিখেছেন। অনেক। তার অনেক বইয়ের মধ্যে যে বইটার কথা আমি বলব সেটা হচ্ছে ‘ওম্যান অ্যাট পয়েন্ট জিরো’। মিসরের কুখ্যাত আল কানাতির কয়েদখানার মৃত্যুদণ্ড সাজা পাওয়া একজন কয়েদী ফিরদোউসের গল্প। মনরোগবিদ এল সাদাভি গবেষণার উদ্দেশ্যে তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। পিম্প অর্থাৎ দেহব্যবসায় তার দালালকে হত্যার অপরাধে ফিরদৌসের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির কাছে জীবন ভিক্ষার সুযোগও ফিরদৌস ফিরিয়ে দেয়। সে মৃত্যুকে ভয় পায় না বরং স্বাগতম জানানোর অপেক্ষায় আছে। খুবই সহজ বর্ণনামুলক কিন্ত পাওয়ারফুল বই।
হাফ অফ আ ইয়েলো সান, চিমামান্ডা আদিশি নগোজি
সমসাময়িক সময়ের মধ্যে আমার চিমামান্ডা আদিশির কথা বলতেই হবে। তার প্রতিভা অসামান্য। বাইয়াফ্রান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত তার এই উপন্যাস এক কথায় অতুলনীয়। আমি তার নতুন উপন্যাস ‘আমেরিকানাহ’ পড়ার অপেক্ষায় আছি যেন আমি দুইটার মধ্যে তুলনা করতে পারি। নতুন প্রজন্মকে খুব ভাল বুঝি না আমি। আমি আশাবাদী যে তারা আমাদের থেকে আরো সাহসী এবং গবেষণামূলক। এছাড়া আমি তরুণ কেনিয়ান লেখক বিনইয়াওয়াংগা ওয়াইনাইনাকেও যুক্ত করতে চাইব। কিন্ত ওয়াইনাইনা উপন্যাস লেখে না। তার নন ফিকশন ‘ওয়ান ডে আই উইল রাইট এবাউট দিস প্লেস’ খুবই চিত্তাকর্ষক। আশা করি ও ভবিষ্যতে উপন্যাসও লিখবে।
নাইরোবি হিট, মুকোমা ওয়া নগুগি
এবং শেষমেষ আমি বলব আমার ছেলে মুকোমা রচিত অনুসন্ধানমূলক উপন্যাস নাইরোবি হিট। আফ্রো আমেরিকান গোয়েন্দা ইশমায়েলকে ডাকা হয় একটা খুনের তদন্তে। আফ্রিকার শান্তি কর্মী কিংবদন্তী জসুয়া হাকিজিমানা উগ্র শ্বেতাঙ্গদের শহরে একটা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জেনোসাইড এন্ড টেস্টিমনি’ বিষয়ক কোর্স করান। একদিন তার ঘরের দরজায় এক যুবতীর লাশ পাওয়া গেলে তলব পড়ে গোয়েন্দা ইশমায়েলের। এই উপন্যাসের পরবর্তী সিকুয়েল ব্ল্যাকস্টার নাইরোবি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির প্রভাষক, মুকোমা, কেনিয়ান সাহিত্যে নতুন গতির সঞ্চার করে। বইটি জার্মান ভাষায় বেস্টসেলার হয়েছে।