আমাদের দেশে জনপ্রিয় খেলা বলতে ক্রিকেট এবং ফুটবল। শীতকাল আসলে এক আধটু ব্যাডমিন্টন। সেক্ষেত্রে টেনিস খেলাটা একটা নির্দিষ্ট মানুষের সৌখিনতা বলা যায়। তাইতো ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ এবং টেনিসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর উইম্বলডন একই সাথে চললেও সবার নজর ফুটবলেই আবদ্ধ। কিন্ত আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা না থাকলেও বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটা খেলা হচ্ছে টেনিস। টেনিস জগতের সবচেয়ে ধ্রুপদী, মর্যাদাসম্পন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা হচ্ছে উইম্বলডন।
উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন টেনিস প্রতিযোগিতা। প্রতিবছরের জুনের শেষ দিকে শুরু হয় দুই সপ্তাহব্যাপি চলে। আজ থেকে একশো একচল্লিশ বছর আগে, ১৮৭৭ সালের ৯ই জুলাই লন্ডনের ওরপল রোডের সবুজ ঘাসের ওপর গড়িয়েছিল পৃথিবীর প্রাচীন খেলাধুলার আসরগুলোর মধ্যে অন্যতম এই উইম্বলডন।
সর্বপ্রথম এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৭ সালের ৯ জুলাই। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উইম্বলডন এলাকায় বাৎসরিকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় শহরের নাম অনুসারে এই প্রতিযোগিতার নাম হয়ে যায় উইম্বলডন। প্রথম দিকে শুধুমাত্র শৌখিন মানুষেরা অংশগ্রহণ করত এই টুর্নামেন্টে। নির্দিষ্ট করে বললে বলা চলে সৌখিন পুরুষেরা অংশগ্রহণ করত। কারণ তখনও টেনিসে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল না। ঠিক ৭ বছর পর, ১৯৮৪ সালে মেয়েদের জন্যেও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে দ্বৈত টুর্নামেন্টের প্রচলন হয় উইম্বলডনে।
উইম্বলডন জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় ব্রিটেনজুড়ে। ১৯০০ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়ে গেলেও তখনো ছিল না কোন পেশাদার খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ। ব্রিটেনের বাইরে থেকেও খেলোয়াড়েরা আসতেন না। ছিল না কোন প্রাইজমানিও। ১৯২২ সালে উইম্বলডনের মাঠ স্থানান্তর করে ওরপল রোড হতে চার্চ রোডে আনা হয়। ১৯৫০ সালের দিকে আকাশপথে চলাচল সুবিধাজনক হলে তখন ব্রিটেনের বাইরে থেকেও খেলোয়াড়েরা অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। কিন্ত তখনও শুধু অপেশাদার ও শৌখিন খেলোয়াড়েরাই এতে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। ১৯৫৯ সালে উইম্বলডনে পেশাদার খেলোয়াড়দের সংযুক্তির আবেদন নাকচ করে দেয় এসোসিয়েশন।
পরবর্তীতে আবারো আবেদন করা হলে ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্যের টেনিসের অভিভাবক সংস্থা ‘লন টেনিস এসোসিয়েশন’ পেশাদার খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। তখন থেকেই উইম্বলডনে পেশাদার খেলোয়াড়দের নজর পড়ে থাকে। সেবার প্রথমবারের মত পেশাদার খেলোয়াড়েরা অপেশাদার খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিযোগিতা করে। ১৯৬৮ সালে টেনিসের সবচেয়ে মর্যাদার এই আসরে পেশাদার এবং শৌখিন উভয়ের জন্যই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রাইজমানি দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়। পেশাদার যুগের প্রথম টাইটেল জয় করেন রড লেভার (পুরুষ) এবং বিলি জিন কিং (মহিলা)। বিলি জিন কিং একই সাথে মহিলা দ্বৈত শিরোপাও জয় করেছিলেন রসি কাসালের সাথে।
এভাবেই শুরু হয় উইম্বলডনের পেশাদার যুগের পথ চলা। ১৯৬৮ সালে পুরো টুর্নামেন্টে প্রাইজমানি ছিল মাত্র ২৬ হাজার পাউন্ড। আজকে ৫০ বছর পরে উইম্বলডনের এক আসরে মোট প্রাইজমানি দেয়া হয় ৩ কোটি ১৬ লাখ পাউন্ড (২০১৭ উইম্বলডন অনুযায়ী)। একক চ্যাম্পিয়নের প্রাইজমানি ২২ লাখ পাউন্ড এবং রানার-আপ ১১ লাখ পাউন্ড। ২০১৮ সালে ১৩২ তম আসরে এই প্রাইজমানি আরো বাড়িয়ে ৩ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উইম্বলডন হচ্ছে একমাত্র টেনিস টুর্নামেন্ট যেখানে মহিলা এবং পুরুষ উভয় খেলোয়াড় সমান প্রাইজমানি পেয়ে থাকে। ২০০৭ সাল থেকে সমান প্রাইজমানির প্রবর্তন করা হয়। এর আগে মহিলাদের প্রাইজমানি কম ছিল যেহেতু মহিলা এককের খেলা হয় ৩ সেটে এবং পুরুষদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম সময় মাঠে থাকতে হয়। তাই এই সমান প্রাইজমানি নিয়ে এখনো সমালোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।
উইম্বলডনে আম্পায়ার বা রেফারি এবং লাইন্সম্যান সকলেই বিশেষ ধরণের গাঢ় সবুজ ও ফিকে লাল রঙের পোশাক পরিধান করেন। খেলোয়াড়রা সাদা পোশাক পরেন। উইম্বলডন কোর্টে কোনো বিজ্ঞাপন চিত্র থাকে না। উইম্বলডন হচ্ছে একমাত্র টেনিস টুর্নামেন্ট যেখানে ঘাসের পিচে খেলা হয়। তাই ২০০৯ সাল থেকে সেন্টার কোর্টে ছাদের আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছে খেলা চলাকালীন বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবার জন্য। দুই সপ্তাহব্যাপি এই টেনিস প্রতিযোগিতা জুনের শেষ দিকে শুরু হয়ে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন
পুরুষ : রজার ফেদেরার (সর্বোচ্চ অষ্টমবার)
পুরুষ দ্বৈত : লুকাস কুবোট ও মার্সেলো মেলো
নারী : গারবিন মুগুরুজা (দ্বিতীয়)
নারী দ্বৈত : একাতেরিনা মাকারোভা ও এলেনা ভাসনিনা
মিশ্র দ্বৈত : মার্টিনা হিঙ্গিস ও জিমি মারে