ফ্রান্স ১ – ০ বেলজিয়াম
উমতিতি ৫১’
• দু’ দলের মধ্যে এটি ছিল ৭৪তম লড়াই।
• ‘৮৬ বিশ্বকাপের পর দু’ দলের মধ্যে এটাই ছিল প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। দুবারই জয়ী দলের নাম ফ্রান্স।
• ২০১৫ সালে সর্বশেষ সাক্ষাতে বেলজিয়াম জিতেছিল ৪-৩ গোলে।
• নক আউট পর্বে (ইউরো এবং বিশ্বকাপ) শেষ ছয় ম্যাচে সাত গোল করেছিলেন গ্রিজম্যান। এবং বেলজিয়াম এর হয়ে শেষ ১৩ ম্যাচে সরাসরি ২০ টি গোলে অবদান রেখেছিলেন লুকাকু।
বিশ্লেষকদের মতে ম্যাচটি হবার কথা ছিল অন্যতম সেরা ম্যাচ। মাত্র একটি গোলেই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হলেও বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণকে ভুল বলার সুযোগ নেই। আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ, চোখ ধাঁধাঁনো সেভ, ট্যাক্টিসের লড়াই; কি ছিল না ম্যাচটিতে? সে লড়াইয়ে বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মকে বেদনার নীলে রাঙ্গিয়ে মস্কো যাত্রা নিশ্চিত করল লেস ব্লুজরা।
ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়া একমাত্র গোলটি আসে ৫১ মিনিটে। তার আগে পরে দু’ দলই পেয়েছে গোল করার বেশ কয়েকটি ভাল সুযোগ। বিশেষ করে ফ্রান্স। কিন্তু কর্তোয়ার তীক্ষ্ণ নজরকে ফাঁকি দিতে পারেননি কেউই। অপর দিকে বেলজিয়ামকে হতাশ করেছেন হুগো লরিস।
গোলরক্ষকদের জিকির শুরুতেই হলেও দিনশেষে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দেশমের ট্যাক্টিসই। ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-৩-৩ এ খেলা বেলজিয়াম ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ৩-৫-২ ফর্মেশনে। সামনে হ্যাজার্ড আর লুকাকু এবং পিছন থেকে সাহায্য করার জন্য বাড়তি সংযোজন ডেম্বেলে। কিন্তু পগবা এবং কন্তেকে ডিফেন্সিভ মিডে রেখে মাঝ মাঠ থেকে বেলজিয়ামের বলের জোগান পুরোটাই অকেজো করে দিয়েছিলেন দেশম। যার রেশ থাকল ম্যাচের শেষেও। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি গোল করা দলটি ফ্রান্সের বিপক্ষে জাল খুঁজে পেল না একবারও। ফলে আরো একবার হতাশা নিয়েই ঘরে ফিরল বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্ম।
শুধু ট্যাক্টিসই না, মাঠের লড়াইয়েই বেহতার দল হিসাবেই মস্কো যাত্রা নিশ্চিত করেছে তারুণ্য নির্ভর ফরাসি দলটি। পাল্টা আক্রমণে গতির ঝড় তুলে বেশ ভাল মতই বেলজিয়ামের রক্ষণের পরীক্ষা নিয়েছেন এমবাপ্পে-গ্রিজম্যানরা। ১-০ স্কোর লাইন হয়ত অন্য রকম বার্তা দিচ্ছে কিন্তু পরবর্তী ম্যাচের জয়ী দলের জন্য যে এ জুটি একটি বড় দুশ্চিন্তার নাম হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত। কর্তোয়ার অসাধারণ কিছু সেভ এবং জিরুর অমার্জনীয় ভুলগুলো না হলে ফলাফল অন্যরকমই হতে পারত।
হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনরা শেষ দিকে যে চেষ্টাটা চালিয়েছেন তা কাজে আসেনি ফ্রান্সের জমাট রক্ষণের দৃঢ়তায়। উমতিতি-ভারান জুটি বেশ ভালই ভরসা যোগাবে দেশমকে। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে রবার্তো মার্টিনেজের খেলোয়াড় বদল। পুরো ম্যাচেই ফ্লপ চ্যাডলিতে শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখা এবং মার্টিনেজকে অনেক পরে নামানোটার ব্যাখ্যা তিনিই ভাল দিতে পারবেন। অপর দিকে দেশমের প্রত্যেকটি চাল কাজে লেগেছে চোখে পড়ার মত করে।
ম্যাচ শেষে দেশমকে ঘিরে ফরাসিদের উল্লাস এবং ডি ব্রুইন-হ্যাজার্ডদের শূন্য দৃষ্টিই বলে দিচ্ছিল যা বলার। ফ্রান্সের তরুণ প্রজন্মের সামনে আরো একবার বিশ্বজয়ের হাতছানি এবং দেশমের সামনে ইতিহাস গড়ার। তার আগে যে মাত্র দুজনই পেরেছিলেন অধিনায়ক এবং কোচ হিসাবে বিশ্বকাপের শিরোপা উচিয়ে ধরতে। দেশম ইতিহাস গড়তে পারবেন কি না তার চেয়ে বড় প্রশ্ন কে থামাবে এই দুর্দান্ত ফ্রান্সকে?
ম্যাচসেরা : স্যামুয়েল উমতিতি (ফ্রান্স)