অনুনমেয়তা যেন তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোথাও যেন মন টেকে না তার। গল্পের শুরুটা হয়েছে ১৭ বছর বয়সে। পর্তুগালে মাঠ গরম করে বেড়াচ্ছিলে। অনেক ক্লাবের আগ্রহ থাকলেও ১৭ বছরের বালককে নিয়ে বাজি নিতে রাজি নন কেউ। কিন্ত অখ্যাত রোনালদোকে ঠিকই চিনে নিয়েছিল ফার্গুসনের জুড়ির চোখ। ম্যানচেস্টারে আসলেন অখ্যাত হয়ে, বিদায় নিলেন বীরের বেশে। কিন্ত রূপকথা তখনো বাকি। জেতার বাকি আরো অনেক কিছু, কারণ এখন সে সর্বকালের শ্রেষ্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে বসতি গড়েছেন। আসলেন রোনালদো, সাথে নিয়ে আসলেন অল হোয়াইটসদের ভাগ্যবিধাতাকে। দলকে জেতালেন, নিজেও জিতলেন; কাটিয়ে দিলেন ৯টি বছর। কিন্ত সুখের সংসারে ভাঙ্গনের সুর হয়ে আসল য়্যুভেন্তাস। ভক্তরা গুজব বলেই উরিয়ে দিতে চাইল কারণ বার্নাব্যুর সম্রাটকে যে তারা চায়না হারাতে! কিন্তু আশাহত হতে হল আমাদের। কারণ এই দলবদল সম্ভবত কেউই স্বপ্নেও ভাবেনি। এর জন্য অবশ্য মিডিয়াও কম দায়ী না। ফি মৌসুম শেষেই তার দলবদলের খবর বর্ষা মৌসুমে বারিষের মতই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। তাই রিয়াল এবং য়্যুভেন্তাসের তরফ থেকে আসা অফিসিয়াল বিবৃতিটি শুধু সমর্থকদেরই না, বিস্মিত করেছে সতীর্থদেরও।
বিদায়লগ্নে খোলা চিঠিতে মাদ্রিদের প্রতি ভালোবাসার কথা অকপটেই জানিয়েছেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবল তারকা। তার বিদায়ে কিছুটা হলেও যে রঙ্গ হারাবে লা লিগা তা নিশ্চিত। কিন্তু প্রায় একদশক বার্ন্যাবু মাতানো রোনালদোই তাগিদ অনুভব করছিলেন নতুন চ্যালেঞ্জের।
ব্যাক্তিগত বা দলীয় সবখানেই নয় বছরে সাফল্যের ভেলায় ভেসেছেন তিনি। রিয়ালের জার্সি গায়ে চারবার ব্যালন ডি’অর, একমাত্র খেলোয়াড় হিসাবে দুবার ফিফার বেস্ট, একাধিকবার করে পিচিচি এবং ইউয়েফা বর্ষসেরার মুকুটই যা বলার বলে দিচ্ছে। দুটি লা লিগা, টানা তিনটিসহ চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং আরো বেশ কিছু দলীয় সাফল্য বয়ান দিচ্ছে রিয়ালের জন্য রোনালদো কতটা কি ছিলেন। অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন, অসংখ্য রেকর্ড করে নিয়েছেন নিজের; এমন একজনের বিদায় রিয়াল স্কোয়াডকে নতুন করে সাজতেই বাধ্য করবে।
রিয়াল প্রেসিডেন্ট পেরেজ রোনালদোর প্রশংসায় বরাবরই ছিলেন পঞ্চমুখ। একাধিকবার প্রকাশ্যে নিয়েছেন রিয়াল কিংবদন্তি ডি স্টিফানোর পাশেই রোনালদোর নাম। রোনালদোর বিদায় বার্তাতেও ছিল না কোনো ক্ষোভ বা কোনো ইঙ্গিত। বরং শেষ করেছেন আলা মাদ্রিদ বলেই। কিন্তু তারপরও বিদায় যে বেদনার।
সম্পুর্ন ভিন্ন চিত্র য়্যুভেন্তাসে। রোনালদোর আগমন ধ্বনি নিশ্চিত হবার সাথে সাথে ইতালিয়ান ক্রীড়া দৈনিকগুলোর শিরোনাম হয়েছেন তিনি। য়্যুভেন্তাস সমর্থকরাও প্রহর গুণছেন রোনালদো ম্যাজিকের সাক্ষী হবার। দিবালা-রোনালদোর জুটি নিয়ে ইতোমধ্যেই শিহরীত বোদ্ধারা। ইউনাইটেড এবং মাদ্রিদের হয়ে একের পর ইতিহাস গড়া রোনালদোর পদার্পনে য়্যুভেন্তাসের হাওয়া বদল হয় কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।