একের পর এক বিস্ময়ের জন্ম দেয়া রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত চার দল। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফাইনালটি হতে পারে দুটি সোনালী প্রজন্মের মধ্যে অথবা দুটি দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে। বেলজিয়াম এবং ক্রোয়েশিয়ার সোনালী প্রজন্ম যখন স্বপ্ন দেখছে নতুন করে ইতিহাস রচনা করবার তখন ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের তারুণ্য নির্ভর দল প্রহর গুণছে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে মাতবার। সেমির লড়াই শুরু হবার আগে দেখে নেয়া যাক চারটি দলের শক্তির দিকগুলো।
ফ্রান্স
তারুণ্য নির্ভর ফ্রান্স দলটির রয়েছে প্রতিপক্ষের শক্তি বুঝে নিজেদের খেলার ধরণ বদলে ফেলবার আশ্চর্য ক্ষমতা। নক আউটের প্রথম ম্যাচে ৪-৩-৩ এ নির্ভর করা দেশম উরুগুয়ের বিপক্ষে দলকে খেলিয়েছেন ৪-২-৩-১ এ। ফলাফলই বলে দিচ্ছে ভিন্ন দুটি ফর্মেশনেও কতটা ভাল খেলতে পারে এই দলটি। পগবা, গ্রিজম্যান, এমবাপ্পের মত খেলোয়াড়রা মুহুর্তেই বদলে দিতে পারেন ম্যাচের চিত্র। সাথে হুগো লরিসের নেতৃত্বে জমাট রক্ষণভাগ। এমন একটি দলকে হারানো যে কারো জন্যই বেশ কঠিনই হবে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
ইংল্যান্ড
স্বপ্নের ফানুস উড়িয়ে বড় আসরগুলোতে অংশ নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাবার ধারাবাহিক চিত্রটি বদলে দিয়েছেন সাউথগেটের শিষ্যরা। ট্রাইবেকারে প্রথমবারের মত জয় বলে দিচ্ছে এ দলটির চাত্রিরিক দৃঢ়তার কথাও। অন্যান্য ইংলিশ দলের সাথে এ দলটির পার্থক্য যেন সাদা চোখেই ধরা পড়ে। দারুণ ফর্মে রয়েছেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন এবং গোলরক্ষক পিকফোর্ড। বারের নিচে এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণের সামনের দুজনের এমন ফর্ম নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ডকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে। সেই সাথে রয়েছে প্রতিটি বিভাগেই চমৎকার সব খেলোয়াড়।
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের এই সোনালী প্রজন্মকে ঘিরে বহুদিন ধরেই স্বপ্ন দেখে আসছে সমর্থকরা। কিন্তু এর আগে বিশ্বকাপ এবং ইউরোতে সেমির আগেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল ডেভিলসদের। প্রতিভায় স্বয়ংসম্পূর্ণ দলটিকে এক সুতোয় বাধার কাজটি বেশ চমৎকারভাবেই করেছেন রবার্তো মার্টিনেজ। যার ফলাফল আসরের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করা। ফ্রন্ট থ্রির হ্যাজার্ড, লুকাকু এবং ডি ব্রুইনি নিজেদের দিনে ধসিয়ে দিতে পারেন যে কোনো দলকেই। একই সাথে জাপানের বিপক্ষে স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচটিতে দু’ গোলে পিছিয়ে পড়ে অসাধারণ জয় নিয়ে ফেরাটা আত্মবিশ্বাসের পালে বাড়তি হাওয়া জোগাবে। চলতি বিশ্বকাপেই বেলজিয়ামের হয়ে গোল করেছেন ভিন্ন নয়জন খেলোয়াড়। বেলজিয়াম যে একটি দল হিসাবে খেলছে সেটি প্রমাণ করতে আর কি লাগে?
ক্রোয়েশিয়া
পরপর দুটি ম্যাচ পেনাল্টিতে জিতে ক্রোয়াটরা দেখিয়েছে নিজেদের চারিত্রিক দৃঢ়তা। তবে দলটির সবচেয়ে শক্তির জায়গা মধ্যমাঠ। দারুণ ফর্মে থাকা মদ্রিচকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন বিশ্বকাপে নিজের জাত নতুন করে চেনানো রাকেটিচ। বার্সা-রিয়ালের এই দুই তারকাই ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় ভরসা। সেই সাথে মান্দজুকিচের মত পরীক্ষিত স্ট্রাইকার এবং গোলবারের নিচে ভরসা সুভাসিচ ক্রোয়েশিয়ার বড় সম্পদ। রয়েছেন কোভাচিচ, রাবিচদের মত তরুণরাও। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে দুর্দান্ত এই দলটি বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে।
মস্কোর পথে কে যাবে সেটি জানা যাবে দুটি ম্যাচ শেষেই। হয়ত বিশ্বকাপের শুরুতেও সেমি ফাইনালে এমন লাইন আপ কেউই ভাবেনি। কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালে বলতেই হয় চারটি দলই নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেই বাচিয়ে রেখেছে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। দেখার বিষয় শেষ হাসিটা কে হাসে, তারুণ্যের প্রতীক দুই দলের কেউ নাকি সোনালী প্রজন্মের স্বপ্ন সারথীরা।