রাশিয়া ২ (৩) – ২ (৪) ক্রোয়েশিয়া
চেরিশেভ ৩১’ ক্রামারিচ ৩৯’
ফার্নান্দেজ ১১৬’ ভিদা ১০০’
• এর আগে একবারই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া।
• এর আগের পাঁচটি বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা কমপক্ষে সেমি ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছে। এর মধ্যে ৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স।
• এ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া যে কয়টি গোল করেছে গত দুই বিশ্বকাপ মিলিয়েও সে কয়টি গোল করতে পারেনি তারা।
নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়াকে পেনাল্টি শ্যুটআউটে হারিয়ে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করল ক্রোয়েশিয়া। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ভরা ম্যাচটি ছিল চরম স্নায়ু পরীক্ষার। আর সে পরীক্ষায় পাশ করেই ‘৯৮ এর পর প্রথমবারের মত সেমি নিশ্চিত করল ক্রোয়েশিয়ার সোনালী প্রজন্ম। দুর্দান্ত লড়াই করেও কোয়ার্টার থেকেই বিদায় নিল স্বাগতিক রাশিয়া।
শুরু থেকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে উপভোগ্য একটি ম্যাচের প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছিল দু’ দল। ক্রোয়েশিয়ার সোনালী প্রজন্ম দুরন্ত গতি, দুর্দান্ত প্রেসিংয়ের সাথে চমৎকার শুরু করেছিল। বিপরীতে প্রথমবারের মত কোয়ার্টারে খেলার আনন্দে উজ্জিবিত রাশিয়া ভয় ধরাচ্ছিল পাল্টা আক্রমণে। এমনই একটি আক্রমণ থেকে আসে ম্যাচের প্রথম গোলটি। বিশ্বকাপ জুড়েই দারুণ খেলা চেরিশেভ ২৫ গজ দুর থেকে চোখ ধাঁধানো এক গোলে এগিয়ে দেন স্বাগতিকদের। বুলেট গতির সে শ্যুট আটকানো তো দুর, সামান্য মুভ করারও সুযোগ পাননি ক্রোয়াট গোলকিপার সুভাসিচ। ক্রোয়েশিয়াও জবাব দিতে খুব একটা সময় নেয়নি। মাত্র অাট মিনিট পরেই মান্দজুকিচের ক্রস থেকে সমতা আনেন ক্রামারিচ। ১-১ সমতায় বিরতিতে যায় দু দল।
পরের ৪৫ মিনিট শুধু রাশিয়ার সাথে না ভাগ্যের সাথেও যেন এক ধরনের লড়াই করলেন মদ্রিচ-রাকেটিচরা। ম্যাচের ৫৯ মিনিটের সময় বক্সের ভিতর থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় অবিশ্বাস্যভাবে বারে মারেন পেরিসিচ। রাশিয়ান গোলকিপার আকিনফেভও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিজের চোখকে। তার মিনিট খানেক পরেই পেরিসিচকে তুলে নিলে মনে হচ্ছিল এটি ক্রোয়াট কোচের ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। যদিও চেঞ্জটি ছিল ট্যাকটিকাল। পেরিসিচকে তুলে ব্রোজোভিচকে নামিয়ে মদ্রিচকে আরো ওপরে উঠে খেলার সুযোগ করে দিতেই এ পরিবর্তনটি অানা হয়েছিল। পেরিসিচের সেই অবিশ্বাস্য মিসের পর একের পর এক আক্রমণ চালিয়েও আর গোলের দেখা পায়নি ক্রোয়েশিয়া। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়েও সামান্য কমেনি উত্তেজনা। দু দলের ইতিবাচক মানসিকতায় খেলা হয়ে উঠে আরো প্রাণবন্ত। ম্যাচের ১০০ মিনিটের মাথায় মদ্রিচের কর্ণার থেকে হেডে গোল করে ক্রোয়াটদের আনন্দে ভাসান ভিদা। এরপরই দেখা যায় রাশিয়ার মরনপণ চেষ্টা। যার সুফল আসে ১১৫ মিনিটের মাথায়। এবারো গোলের উৎস ক্রস। জাগোয়েভের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে আবারো খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন মারিও ফার্নান্দেজ। ক্লাইমেক্স-এন্টি ক্লাইমেক্সে ভরা খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে।
রাশিয়ার পক্ষে প্রথম পেনাল্টিটিই মিস করেন স্মলোভ। তার নেয়া দুর্বল শ্যুট ফিরিয়ে দেন সুভাসিচ। এরপর দু দলই গোল করলে পেনাল্টি নিতে আসেন কোভাচিচ। চমৎকারভাবে তার পেনাল্টি রুখে দিয়ে রাশিয়াকে ম্যাচে ফেরান আগের ম্যাচের নায়ক আকিনফেভ। পেনাল্টিতে জীবনের অন্য রঙ্গটিও দেখলেন অতিরিক্ত সময়ে গোল দিয়ে রাশিয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখা ফার্নান্দেজ। তার মিসে হাসি মিলিয়ে যায় স্বাগতিকদের। তখনো হাল ছাড়েননি আকিনফেভ। মদ্রিচের নেয়া শ্যুটটি রুখে দিয়েছিলেন প্রায়। কিন্তু ম্যাচের মতই নাটকীয়ভাবে বলটি জালে জড়ালে হাফ ছেড়ে বাচেন মদ্রিচ। ডেনমার্কের মত এই দিনও ক্রোয়াটদের পক্ষে শেষ শ্যুটটি নেন রাকেটিচ। আরো একবার ঠান্ডা মাথায় তার লক্ষ্যভেদ নিস্তব্ধ করে দেয় গোটা রাশিয়াকে।
ম্যাচসেরা : লুকা মদ্রিচ (ক্রোয়েশিয়া)