‘নিপীড়নমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চাই’—শীর্ষক ব্যানারে নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ, হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রার আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। পদযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এই পদযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই পদযাত্রায় বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করাটা আমাদের অধিকার; যারা এটা এতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। এটা অবশ্যই নিন্দার যোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চার ধরনের অন্যায় করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সাথে—প্রথমত, শিক্ষার্থীদের মারধর করা হচ্ছে, হাতুড়িপেটা করা হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, তাদেরকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; তৃতীয়ত, মিথ্যে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে; চতুর্থত, তাদেরকে বিভিন্ন অন্যায় অপবাদ দেয়া হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিরাজ বলেন, ‘শিক্ষকদের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো; কিন্তু আমরা তা পারিনি নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর প্রতি কমিটমেন্টের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু, সেটাও করা হয়নি।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. গীতি-আরা-নাসরিন শিক্ষকদের পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি তোলেন। দাবিগুলো হল, হামলাকারীদের বিচার করতে হবে, আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার করতে হবে, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে এবং কোটা সংস্কারের ব্যাপারে দ্রুত প্রজ্ঞাপন দিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করেছিল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-সংগঠন ছাত্রলীগ। তাছাড়া, শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও পতাকা মিছিলের কর্মসূচী ছিল। সেটিও পণ্ড করে দেয়া হয়েছে হামলা চালিয়ে।
এছাড়াও গত মঙ্গলবার বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মানববন্ধনে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে এক কর্মসূচিতে পুলিশের হাতে ন্যাক্কারজনকভাবে লাঞ্ছিত হন ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. ফাহমিদুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান-এর শিক্ষক রেহনুমা আহমেদসহ বেশ কয়েকজন।