বাংলাদেশি শিশুদের প্রতি মোদির এ কেমন নিষ্ঠুরতা!

বাংলাদেশি শিশুদের প্রতি মোদির এ কেমন নিষ্ঠুরতা!

শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র নয় বাবা-মা থেকে সন্তানদের আলাদা করার ঘটনা ঘটছে নরেন্দ্র মোদির ভারতেও। সেখানে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারলে শিকার হতে হচ্ছে এই নিষ্ঠুরতার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশিদের এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বহু বছর ধরে। যারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের যেতে হচ্ছে জেলে আর বাচ্চাদের যেতে হচ্ছে শেল্টার হোমে।

যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসন প্রার্থী ২০০০ শিশুকে তাদের পিতা-মাতার কাছ থেকে আলাদা করে রাখায় বিশ্বব্যাপি নিন্দার ঝড় ওঠে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভারত একই রকম নীতির প্রয়োগ করছে অভিবাসন প্রার্থী বা অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে।

১৯৪৬ সালের ভারতীয় আইনের ১৪ ক মতে কোন বিদেশি যদি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে অথবা বসবাস করে তবে তার সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ আট বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

যখন অভিবাসিত পরিবারগুলো সনাক্ত হয়, পিতা-মাতাকে গ্রেপ্তার করে জুডিশিয়াল কাস্টোডিতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ছয় বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের শিশুকল্যাণ সমিতির সামনে বা শেল্টার হোমে প্রেরণ করার আগে তাদের পিতা-মাতার কাছ থেকে আলাদা করা হয়। এমনকি বহুদিন পর্যন্ত তারা সাক্ষাতও করতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গে এরকম ৮০টির মতো শেল্টার হোম রয়েছে।

৪০ বছর বয়সী ভাদুরীবালা বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি ভারতে আসেন। তিনি একটি ছোট ছেলে ও একটি মেয়েকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন, যারা এখন শেল্টার হোমে বড় হচ্ছে। জেলে থাকা অবস্থায় প্রথম চার বছর ভাদুরীবালা তার সন্তানদের দেখতে পাননি। ভারতের এই কাজ সরাসরি আন্তর্জাতিক আইনে মানবাধিকার লংঘন।

সমাজকর্মী মহিদুল ইসলাম, যিনি অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি জানান, দুই বছর আগে বিশ জন রোহিঙ্গা মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছিল। তার মধ্যে একটি ফ্যামিলি ছিল। মা ১৪ক ধারায় দমদম জেলে যায়। এবং তার ছেলে ও মেয়েকে আলাদা শেল্টার হোমে প্রেরণ করা হয়।

এই সব মামলায়, পিতা-মাতা এবং শিশুদের আলাদা আদালতে হাজির করা হয়। মায়ের একদিনে শুনানি চলেতো, সন্তানদের আরেক দিনে। কিছুদিন আগে, জানা যায় একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে শেল্টার হোমে।

আবার প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাবা-মা আগে দেশে ফিরে আসে। সেক্ষেত্রে তারা পুশব্যাকের মতো বিপজ্জনক পথ অবলম্বন করে। তারা দেশে ফিরে আসলেও তাদের সন্তানেরা শেল্টার হোমেই থেকে যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ৪,০৯৭ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে, যার মধ্যে ২,২১৭ কিলোমিটার পশ্চিবঙ্গের সাথে। ভারতীয় ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র হিসেবে, বিদেশি বন্দিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। ২০১৬ সালে এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৩,৬৪৭ জন পূর্ণবয়স্ক বাংলাদেশি এবং ১৪২ জন শিশু রয়েছে ভারতের জেলে।