কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপটি হ্যাক হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার রাত থেকেই ‘কোটা সংস্কার চাই (সকল ধরনের চাকরির জন্য)’ নামক গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনকারীদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
গ্রুপটি ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামক পেজ দ্বারা পরিচালিত হলেও এখন দেখা যাচ্ছে ‘জনতার কণ্ঠ’ পেজ এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। জনতার কণ্ঠ পেজটির কাভার ফটোতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমনান, দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংযুক্ত রয়েছে।
তবে ‘কোটা সংস্কার চাই’ পেজটি আক্রান্ত হলেও এখন তা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ৩০ লাখেরও বেশি সদস্যের এই গ্রুপের অ্যাডমিন সংখ্যা ছিল ২০ জন এবং মডারেটর ছিলেন প্রায় ৮০ জন। বর্তমানে মাত্র ৬ জন অ্যাডমিন এটি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
গ্রুপটির একজন অ্যাডমিন (সাবেক) নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে গ্রুপটির দখল নেয়া হয়েছে তা পরিষ্কার। বিএনপির নেতাদের ছবি দিয়ে এখন বোঝানো হচ্ছে এই আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ন-আহ্বায়ক রাশেদ খাঁনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন দলীয় ইন্ধন বা সুনির্দিষ্ট অবৈধ অর্থায়নের অভিযোগেরও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি পত্রিকায় খবরও বেরিয়েছে। অথচ এখন সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনটিকে একটি নির্দিষ্ট দলীয় আন্দোলন হিসেবে প্রমাণ করার পায়তারা চলছে।”
কোটা সংস্কার গ্রুপ এবং পেজটি ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা আক্রান্ত ।তাই আপাতত কেউ ওটি ফলো করবেন না ।
Posted by Rashidul Islam Mubin on Wednesday, July 4, 2018
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন অ্যাডমিন (সাবেক) জবানকে বলেন, অ্যাডমিন ও মডারেটরদের কাজ মূলত মেম্বারদের পোস্ট দেখে তা অনুমোদন দেয়া। কেউ যাতে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নয় বা রাজনৈতিক কোন ছবি বা লেখা প্রকাশ করতে না পারে সেকারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে গ্রুপের অ্যাডমিন ও মডারেটরদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের এই গ্রুপটিতে মূলত আন্দোলনকারীরা স্বাধীনভাবে তাদের মতবিনিময় করতেন।
“আমি গতরাত থেকে হঠাৎ দেখলাম আমার অ্যাডমিনশিপ বাতিল হয়ে গেছে। ভেবেছি কোন ভুল থেকে এমন হতে পারে। সকালে দেখতে পেলাম বিএনপি সংশ্লিষ্ট পোস্ট দেয়া হচ্ছে এবং আন্দোলন নিয়ে কোন আপডেট পোস্ট অনুমোদন করা হচ্ছে না” -বলেন গ্রুপটির ওই অ্যাডমিন।


ধারণা করা হচ্ছে, গ্রুপটি প্রশাসন ও সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের দখলে রয়েছে। কেননা কোটা আন্দোলনের যুগ্ন-আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের কাছ থেকে পুলিশ তার ফেসবুকের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ফেসবুক ও ইমেইলের পাসওয়ার্ড নিয়ে যান ডিবি পুলিশের ধানমন্ডি জোনের একজন অতিরিক্ত কমিশনার।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন গত এপ্রিলের শুরুতে দানা বেধে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনে নামে। দুর্বার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সেসময় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। ঘোষণার ৩ মাস পার হলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অনুকূলে কোন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় হতাশ হয়ে এ সপ্তাহে আবার আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে এবারের আন্দোলনে প্রশাসন, পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে একযোগে মারমুখী অবস্থানে দেখা যাচ্ছে।