ইংল্যান্ড ১-১ কলম্বিয়া
কেইন (পে) ৫৭’ মিনা ৯০+৩
পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৪-৩ ব্যবধানে জয়ী ইংল্যান্ড
একাদশ :
ইংল্যান্ড (৩-৫-২) :
জর্ডান পিকফোর্ড; কাইল ওয়াকার, জন স্টোনস, হ্যারি ম্যাগুইয়ার; ট্রিপিয়ের, ডেলে আলি, হেন্ডারসন, হেসে লিনগার্ড, অ্যাশলে ইয়ং ; রহিম স্টার্লিং, হ্যারি কেইন।
কলম্বিয়া (৪-৩-২-১) :
ডেভিড ওসপিনা; সান্তিয়াগো আরিয়াস, ইয়েরি মিনা, সানচেজ, ইয়োহান মোজিকা; জেফারসন লার্মা, কার্লোস সানচেজ, ব্যারিওস; কুয়েন্তেরো, কুয়াদ্রাদো; রাদামেল ফ্যালকাও।
• ১৯৬৬ সালের পর পেনাল্টি শ্যুটআউটে প্রথমবার জয় পেল ইংল্যান্ড। এর আগে ১৯৯০ সালে জার্মানি, ‘৯৮তে আর্জেন্টিনা ও ‘০৬ সালে পর্তুগালের কাছে টাইব্রেকে হেরেছে তারা।
• নিজেদের সর্বশেষ আট বিশ্বকাপ ম্যাচেই গোল পেয়েছে কলম্বিয়া।
• বিশ্বকাপে খেলা কলম্বিয়ার ২১ ম্যাচের কোনটিই গোলবিহীন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার পর যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।
• কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলা ছয় ম্যাচের সবকটিতে অপরাজিত রইল ইংল্যান্ড।
• এই ম্যাচে করে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন হ্যারি কেইন।
ইয়েরি মিনা। বয়স মাত্র তেইশ। খেলছেন নিজের প্রথম বিশ্বকাপ। ডিফেন্ডার হয়েও আগের ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন। আজ আবার গোল করলেন। সম্ভবত জীবনের সেরা গোল। কুয়ার্দাদোর কর্ণার কিকে মাথা ছু্ঁইয়ে বল পাঠালেন ইংল্যান্ডের জালে। খেলায় তখন এক এক সমতা। সময় তখন ৯৩ মিনিট! বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে কলম্বিয়ার বিদায় যখন মাত্র দুই মিনিট দূরে, তখনই যেন কোথা থেকে উড়ে এসে ‘থ্রি লায়ন্স’ ইংল্যান্ডের ঘাড়ে জুড়ে বসলেন মিনা! ৫৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে হ্যারি কেইনের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের বাড়া ভাতে ছাই পড়ল। রাশিয়ায় আরো একটি রুদ্ধশ্বাস নাটকের সময় দীর্ঘায়িত হল ত্রিশ মিনিট।
এর আগে রাউন্ড অব সিক্সটিনের শেষ খেলায় মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে দলের অন্যতম সেরা তারকা হামেস রদ্রিগেজকে ছাড়াই মাঠে নামে গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ডে খেলা কলম্বিয়া। প্রথমার্ধে দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। কলম্বিয়ার লাতিন ঘরানার সঙ্গে ইংল্যান্ডের ইউরোপিয়ান পাওয়ার অ্যাটাক। দ্রুতগতির ফুটবলে বারবার চেষ্টা করে গেছেন কেইন, ফ্যালকাওরা। কিন্তু, গোলমুখ খুলতে পারেননি। পা’য়ের সঙ্গে সমানতালে কথা বলেছে কলম্বিয়া, ইংল্যান্ডের শরীরও! প্রথমার্ধের শেষের দিকে সামান্য হাতাহাতি বাড়িয়ে দেয় উত্তেজনা। তা নিয়েই টানেলে যান সাউথগেট আর পেকারম্যানের শিষ্যরা।
বিরতির পর ফিরে বেশ ধারালো গতিতে এগোতে থাকে ইংলিশরা। ৫৭ মিনিটে হ্যারি কেইনকে আটকাতে ডি বক্সে ফাউল করে বসেন কার্লোস সানচেজ। কলম্বিয়া রিভিউর আবেদন করলেও রেফারি মার্ক গিজার অনড় থাকেন নিজ সিদ্ধান্তে। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল হয়নি থ্রি লায়ন্স দলপতি হ্যারি কেইনের। চলতি আসরে এটি তার ষষ্ঠ গোল, যার চারটিই স্পটকিক! গোলটি করে গ্যারি লিনেকারের (১০) পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন কেইন।
গোল দিয়ে যেন কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায় ইংল্যান্ড। যাতে করে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে কলম্বিয়া। ৯২ মিনিটে ৩০ গজ দূর থেকে তেমনই একটি জোরালো শট নেন বদলি খেলোয়াড় ইউরিব। ইংলিশ কিপার পিকফোর্ডের দুর্দান্ত সেইভে রক্ষা হলেও সেই বলেই পাওয়া কর্ণারে গোল করেন মিনা। সেটি ছিল ম্যাচে কলম্বিয়ার পাওয়া প্রথম কর্ণার!
এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০মিনিটে। সেখানে গোল ব্যবধানে কোন হেরফের না হওয়ায় এবারের নকআউট রাউন্ডে তৃতীয়বারের মত ট্রাইবেকারের দ্বারস্থ হয় ম্যাচ। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ের পর নকআউটে মোট তিনবার ট্রাইবেকে গড়ায় ইংল্যান্ডের ম্যাচ, যেখানে জয় নেই একটিতেও। প্রথম তিন শটেই গোল পায় কলম্বিয়া, জর্দান হেন্ডারসনের তৃতীয় শট দুর্দান্তভাবে ট্রাইব্রেকে আরেকবার ইংল্যান্ডের বিদায়ের শঙ্কা জাগান ডেভিড ওসপিনা। পরের শটে গোলরক্ষকের মান রাখতে পারেননি ইউরিব, বল ফিরে আসে বারে লেগে। চতুর্থ শটে ঠিকই গোল করেন ইংলিশ ডিফেন্ডার ট্রিপিয়ের। কার্লোস বাক্কার শেষ শটটি পিকফোর্ড ঠেকিয়ে দিলে ইংল্যান্ডের পথ সহজ হয়ে যায়। পঞ্চম শটে এরিক দিয়ের গোল করলে উল্লাসে মাতে ১৯৬৬র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। পুরো ম্যাচে লড়াই করেও বিদায় নিতে হয়ে ‘লস ক্যাফেটেটোর্স’ ডাকনামের কলম্বিয়াকে।
ম্যাচসেরা : হ্যারি কেইন (ইংল্যান্ড)