বেলজিয়াম ৩-২ জাপান
ভের্টোগেন ৬৯’ হারাগুচি ৪৮’
ফেলাইনি ৭৪’ ইনুই ৫২’
চ্যাডলি ৯০+৪’
অসাধারণ এক ম্যাচে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়ল এশিয়ার পরাশক্তি জাপান। অপরদিকে অন্যতম ফেভারিট বেলজিয়াম সুবিচার করল ফেভারিট তকমার প্রতি। নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচটি নিঃসন্দেহে চলতি বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ। আর সেটাতে জিতে যোগ্য দল হিসাবেই কোয়ার্টার নিশ্চিত করল বেলজিয়াম।
রুস্তভ অ্যারিনায় অনুমিতভাবেই প্রথম থেকে জাপানের ওপর ঝাপিয়ে পরে হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই আলোর মুখ দেখেনি। সুনামির মত জাপানের ওপর আছড়ে পরা আক্রমণের ঢেউ বেশ ভালোই সামাল দিয়েছেন কাওয়াশিমা-ইয়োশিদারা। প্রথমার্ধে ডেভিলসদের পক্ষে সবচেয়ে ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন লুকাকু। গোলপোস্টের সামনে গোলরক্ষককে একা পেয়েও ভলিটা পোস্টে রাখার বদলে নিজের পায়েই জড়িয়ে ফেলেন তিনি। এরপর একে একে মিসের মিছিলে জোগ দেন হ্যাজার্ড-কম্পানিরা।
প্রথমার্ধে আক্রমণের পর আক্রমণ করলেও বেলজিয়াম মার খেয়েছে ফিনিশিংয়ের অভাবে। তাই দশটি শ্যুট কিংবা পাঁচটি কর্ণারের কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি। অপর দিকে জাপান যে একদম রক্ষণাত্বক খেলেছে তাও না। বেলজিয়ামের আক্রমণ সামলে বেশ কটি পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিল সামুরাইরা। কিন্তু বল রিলিজে দক্ষতার অভাব এবং এটাকিং থার্ডে খেই হারিয়ে ফেলায় কাজে আসেনি কোনো আক্রমণই। তবে এটা বোঝা যাচ্ছিল যে জাপান যদি এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারে বিপদ নিশ্চিত বেলজিয়াম রক্ষণের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই প্রথমার্ধে দেয়া আভাসকে কর্মে পরিণত করে দেখাল জাপান। পাল্টা আক্রমণ থেকে শিবাসাকির চমৎকার থ্রু ধরে কোণাকুনি শ্যুটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন হারাগুচি। গোলটি চমৎকার হলেও কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না ভার্টোগেন। শিবাসাকির থ্রুটা মাঝপথেই ইন্টারসেপ্ট করার মত অবস্থায় ছিলেন তিনি। গোল খেয়েই যেন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন হ্যাজার্ডরা। মার্টিনেজের দেয়া বলে চমৎকার পজিশন থেকে নেয়া হ্যাজার্ডের শ্যুটটি পোষ্টে লেগে ফিরে আসলে হতাশা বাড়ে বেলজিয়ামের।
সে হতাশা আরো বাড়িয়ে দেন ইনুই। চমৎকার পায়ের কাজে রক্ষণকে পরাস্ত করে কাগাওয়ার দেয়া পাসে বক্সের ঠিক সামনে থেকে অসাধারণ প্লেসিং করেন ইনুই। অসহায়ভাবে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না কোর্তোয়ার। অবিশ্বাস্য স্কোর লাইনের জন্ম দিয়ে ২-০ তে এগিয়ে জাপান।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর অারো মরিয়া হয়ে ওঠে বেলজিয়াম। লুকাকু আরো একটি সহজ সুযোগ মিস করলে মনে হচ্ছিল রাতটা জাপানেরই। কিন্তু সেটিকে ভুল প্রমাণের দায় যেন নিজের কাধেই নিলেন ভের্টোগান। কর্ণার ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ জাপানের রক্ষণকে হতভম্ব করা এক হেডে ব্যবধান কমান এই ডিফেন্ডার। তার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সমতা সূচক গোলটি করে ডুবতে বসা বেলজিয়াকে ভাসিয়ে তোলেন বদলি নামা ফেলাইনি। গোলের উৎস ছিলেন ইডেন হ্যাজার্ড।
৭৪ মিনিটে ফেলাইনির সমতা সূচক গোলের পর আরো শিহরণ জাগানিয়া ফুটবলই উপহার দিল দুই দল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের অসাধারণ একটি ম্যাচ দেখল ফুটবল বিশ্ব। জাপান যখন এগিয়ে থেকেও জয় হাতাছাড়া হবার ভয়ে কাবু বেলজিয়াম তখন নতুন উদ্যোমে খেলতে থাকা একদল। কিন্তু ফল কোন দিকে যাবে তার কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। বুঝতে দিচ্ছিলেন না দু দলের দুই গোলরক্ষক। ৮৫ মিনিটে কাওয়াশিমা দুর্দান্ত ডাবল সেভে হতাশ করেন মুনিয়ের আর লুকাকুকে। তার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই বেলজিয়ামকে রক্ষা করেন কোর্তোয়া। ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিশানা ভুল করে উইটসেল নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রায়। কোর্তোয়ার তৎপরতায় রক্ষা পান তিনি, রক্ষা পায় বেলজিয়াম। ৯৩ মিনিটে আরো একবার রক্ষাকর্তা রুপে হাজির চেলসি তারকা। এবার আটকালেন হোন্ডার চমৎকার ফ্রিকিক।
এরপরেই সে স্বপ্ন ভাঙার গল্প। কর্ণার আটকে কোর্তোয়ার দেয়া বল থেকে শুরু হওয়া পাল্টা আক্রমণে নির্মম সমাপ্তি জাপানের স্বপ্নে। ডি ব্রুইনি থেকে মুনিয়ের, মুনিয়েরে চমৎকার লো ক্রস; লুকাকুর বুদ্ধিদীপ্ত ডামি; শেষে চ্যাডলির ক্নিন ফিনিশিং। অবিশ্বাস ভরা চোখে তাকিয়ে জাপানের সমর্থকরা। আর নিরপেক্ষ দর্শকদের মনে অসাধারণ একটি ম্যাচ দেখার তৃপ্তি। হারলেও মাথা উঁচু করেই বিদায় নিয়েছে জাপান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসাধারণ লড়াই ই করেছে সামুরাইরা। আর বেলজিয়াম দেখিয়েছে ইস্পাতদৃঢ় স্নায়ুর জোর। নকআউটের মত ম্যাচে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও জয় নিয়ে ফেরাটা পরের ম্যাচে নিঃসন্দেহে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে মার্টিনেজ শিষ্যদের।
ম্যাচসেরা : ইডেন হ্যাজার্ড (বেলজিয়াম)