ব্রাজিল ২ – ০ মেক্সিকো
নেইমার ৫১
ফিরমিনো ৮৮
একাদশ
ব্রাজিল (৪-২-৩-১):
অ্যালিসন, ফ্যাগনার, থিয়াগো সিলভা, মিরান্ডা, ফিলিপ লুইজ, ক্যাসেমিরো, পাউলিনহো, নেইমার, উইলিয়ান, কৌতিনহো, গ্যাব্রিয়েল হেসুস।
মেক্সিকো (৪-৩-৩):
গিলের্মো ওচোয়া, অ্যাডসন আলভারেজ, হুগো আয়ালা, স্যালসেডো, গালার্দো, হেক্টর হেরেরা, রাফায়েল মার্কেজ, গুয়ার্দাদো, কার্লোস ভেলা, হাভিয়ের হার্নান্দেজ, লোসানো।
উদযাপনে নেইমারকে কাঁধে তুলে নিলেন পাউলিনহো। তার আগে মেক্সিকোর জালে প্রথম গোল দিয়ে এলেন তিনি। বিশ্বকাপে অনেক রেকর্ডই ব্রাজিলের দখলে। সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা এতদিন জার্মানির সঙ্গে ভাগ করা ছিল। ২২৬ থেকে উন্নীত ২২৭ এ, জার্মানি পিছে, মেক্সিকো পিছে, উৎকন্ঠা পিছে।
নেইমার জুনিয়র। ব্রাজিলের প্রাণভোমরা। মেসি, রোনালদোর পর তাকে নিয়েই বিশ্ববাসীর মাতামাতি। বিশ্বকাপ মাতাতে এসে গ্রুপ রাউন্ডে করতে পারেননি নামের প্রতি সুবিচার। খেলার চেয়ে অহেতুক অভিনয়ে বারংবার সমালোচিত হয়েছেন। তিন ম্যাচে মাত্র এক গোল দেয়া নেইমারের ঢাল হয়ে পাশে দাঁড়ান কোচ তিতে। আজ ম্যাচের আগে জানালেন, পূর্ণ ফিট নেইমারকে দেখবে সবাই। নিজের দিনে কী করতে পারেন তা দেখালেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি তারকা। ৫০ মিনিট। বল নেইমারের পায়ে। বাঁ’ প্রান্ত ধরে এক, দুই, তিন ডিফেন্ডারকে নিয়ে খেলছেন তিনি। সোজা পথে অনেকটা এগুলেন। শট নেবেন, তাকে আটকাতে সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে মেক্সিকো ডিফেন্স। চতুর নেইমারের ব্যাকহিল, দুরন্ত স্পীডে থাকা উইলিয়ান ঢুকলেন ডি বক্সে। ক্রস করলেন। ওচোয়া চেষ্টা করেও পারলেন না হাত লাগাতে, পা লাগাতে ব্যর্থ গ্যাব্রিয়েল হেসুসও। যার পায়ে আক্রমণের সূচনা, তার পায়েই মধুর যবনিকাপাত! পা ছোঁয়ালেন নেইমার। ব্রাজিল এক, মেক্সিকো শূন্য।
এর মিনিট দুয়েক আগে কৌতিনহোর শট ঠেকিয়ে দেন ওচোয়া। ফ্রান্সিসকো গিলের্মো ওচোয়া। মেক্সিকান এই ঝাঁকড়া চুলো গোলরক্ষক এদিন ছিলেন সত্যিকারের সুপারম্যান। যে দুটি গোল খেয়েছেন একটিতেও তার করার ছিল না কিছুই। যা করতে পেরেছেন তা হল ব্রাজিলকে গোলবঞ্চিত। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ অব্দি, নেইমার থেকে পাউলিনহো, হেসুস কিংবা কৌতিনহো বাদ যায়নি কেউই। ৩৩ মিনিটে গোলপোস্টের দুইহাত সামনে থেকে বামপায়ে করার গ্যাব্রিয়েল হেসুসের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন ওচোয়া।
ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল মেক্সিকোর দাপটে। দ্বিতীয় মিনিটেই গুয়ার্দাদোর শট ব্রাজিল কিপার অ্যালিসন বেকার ক্লিয়ার করেন। ১৪ মিনিটে লেফট উইং থেকে হির্ভিং লোজেনো ডিফেন্সচেরা পাস দেন হাভিয়ের হার্নান্দেজকে, সময়মত যেতে পারলে এগিয়ে যেতে পারতো এল ট্রিকোলাররা। পুরো ম্যাচে ব্রাজিলের যেখানে অন টার্গেট শটই ১০টি, মেক্সিকোর টোটাল শট সংখ্যা ১৩, অন টার্গেট মাত্র ১! ৬৭ মিনিটে বাঁকানো শট করেছিলেন কার্লোস ভেলা, বল বারের উপর দিয়ে চলে যায়। আর ম্যাচের শেষ তিন মিনিটে দুই উইং থেকে কয়েকটি আক্রমণ করলেও ব্রাজিলের ইস্পাত কঠিন ডিফেন্স ভেদ করতে পারেনি। দুই সেন্টারব্যাক মিরান্ডা, সিলভার সঙ্গে ডানবামের ফ্যাগনার, লুইজ মিলে যে দেয়াল তুলেছেন গোটা ম্যাচে তা টপকাবার সাধ্য হয়নি মেক্সিকোর।
প্রথম বিশ মিনিট ব্রাজিল স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে না পারলেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বের হতে থাকে তিতে বাহিনী। আর দ্বিতীয়ার্ধে মেক্সিকো ব্যস্ত ছিল আক্রমণের জোয়ার ঠেকানোতে। ৮৮ মিনিটে তেমনই এক কাউন্টার অ্যাটাক অ্যাটাকে ফার্নান্দিনহোর কাছ থেকে বল পান নেইমার। গতি আর ছন্দের মিশেলে বল বাড়ান, সেখান থেকে চার মিনিট আগেই নামা ফিরমিনো লক্ষ্যভেদ করেন। ব্রাজিলের দ্বিতীয় আর বিশ্বকাপে রবার্তো ফিরমিনোর প্রথম গোল।
গোটা ডিফেন্স, মধ্যমাঠ এবং আক্রমণভাগ; তিতে যেন সামারা অ্যারেনায় এগারো জাদুকর নামিয়ে দিয়েছে। জায়ান্ট কিলারের রাশিয়ায় আরেকটি অঘটনের তাই জন্ম হতে দেননি উইলিয়ান নেইমাররা। ২-০ গোলের জয় ছাপিয়ে দলের সবচাইতে বড় তারকার ফর্মে ফেরা, তারচাইতে বড় ব্রাজিলের শৈল্পিকতার প্রদর্শনীতে মনোমুগ্ধকর এক ম্যাচের সমাপ্তি।
ম্যাচসেরা : নেইমার (ব্রাজিল)