অবশেষে বিশ্বকাপের বিষ্ময়কর ধারা বজায় থাকল। অন্যতম ফেবারিট স্পেন ছিটকে পড়ল। কেন এমন হচ্ছে -এই প্রশ্নের আসলে কোন উত্তর নাই। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল আগের সব হিসেব, পরিসংখ্যানের আলোকে আগাম মন্তব্য এইসব কিছুকেই অকার্যকর প্রমাণ করে ছেড়েছে। তবে খেলা গড়িয়েছে পেনাল্টিতে। অনেকে আশা করেছিলেন এতে সুবিধা পাবে অভিজ্ঞ স্পেন। কিন্ত ফল হয়েছে উল্টো।
স্পেন ১ (৩) – ১ (৪) রাশিয়া
ইগনাশেভিচ (আ) ১২’ জিউবা (প) ৪১’
আরো একটি অঘটন রাঙাল রাশিয়া বিশ্বকাপ। এবার শিকার ‘১০ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন; হন্তারক স্বাগতিক রাশিয়া। পেনাল্টিতে আসরের অন্যতম ফেভারিটদের কাঁদিয়ে কোয়ার্টারে চলে গেল আকিনফেভের রাশিয়া।
এটাকে ঠিক কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায় তা খুঁজে বেগ পেতে হবে সবাইকে। কারণ, রাশিয়া কোয়ার্টার তো দুর, গ্রুপ পর্ব পার হবে এমনটাই ভাবেনি কেউ। এমন একটি দল যে স্পেনের সামনে পাত্তাও পাবে না, সেটাই ছিল সাধারণ ধারণা। এ বিশ্বকাপ যে অঘটনের লীলাভূমি সেটিরই আরো একটি পর্ব যেন মঞ্চস্থ হল মস্কোতে। আর তাতেই কপাল পুড়ল হেরোরোর শিষ্যদের।
আসপাসের পেনাল্টিটি রুখে দিয়েই বুনো উদযাপনে মাতলেন ম্যাচের হিরো আকিনফেভ। পুরো ম্যাচেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন রাশিয়ান অধিনায়ক। স্বভাবতই উল্লাসের মধ্যমণিও তিনি। অপর দিকে মাঠে বসে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন স্প্যানিশ অধিনায়ক রামোস। দু’ দলের অধিনায়কের বিপরীতমুখী দুটো দৃশ্যই যেন ম্যাচটির প্রতীকী চিত্র।
ম্যাচের শুরুতেই রামোসকে আটকাতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন রাশিয়ান ডিফেন্ডার ইগনাশেভিচ। অনুমিত লিডটিই একটু ব্যতিক্রমভাবে পায় স্পেন। তখন মনে হচ্ছিল কত গোলের ব্যবধানে হারবে রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়ানরা যেন অন্যরকম কিছুই ভেবেছিল। তাই সে গোলে দমে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণে গেল জিউবারা।
সাহসীর ক্ষেত্রে সুফল পেতে দেরি হয় না। রাশিয়ার ক্ষেত্রেও সেটিই হল। কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে আশ্চর্যভাবে হ্যান্ডবল করলেন পিকে। ঠিক কোন কারণে হাতটি উচু করে রেখেছিলেন সেটি তিনিই বলতে পারবেন। পেনাল্টি থেকে জিউবা ডি গিয়াকে সহজেই পরাস্ত করলেন তিনি। চলতি বিশ্বকাপটা একটি দুঃস্বপ্নই হয়ে থাকবে ইউনাইটেড গোলরক্ষকের জন্য।
জিউবার গোলের পরেই যেন ঘুম ভাঙ্গে স্প্যানিশদের। তার আগ পর্যন্ত একরকম ঘুমপাড়ানি ফুটবলই খেলছিল হেরোরোর দল। কিন্তু ততক্ষণে যে রাশিয়ানরাও সামলে নিয়েছে নিজেদের। ইস্পাতদৃঢ় প্রতিজ্ঞায় একের পর এক স্প্যানিশ আক্রমণ সামাল দিয়ে গেলেন কুতেপভ-আকিনফেভরা। নির্ধারিত সময়েও তাই এল না ফলাফল।
জয়ের জন্য মরিয়া হেরেরো একে একে মাঠে নামালেন ইনিয়েস্তা-আসপাসদের। কিন্তু আকিনফেভকে ফাঁকি দিতে পারলেন না কেউই। কাজে আসল না রাশিয়ার পোস্টে নেয়া ২৪টি শ্যুট। অতিরিক্ত সময় শেষে পেনাল্টি নামক জুয়াতেই গড়াল খেলা।
স্পেনের হয়ে তৃতীয় শ্যুটটি নিতে আসা কোকেকে রুখে দিয়ে রাশিয়ানদের আনন্দে মাতিয়ে তোলেন আকিনফেভ। গলোভিন-চেরিশেভরা ঠান্ডা মাথায় লক্ষ্যভেদ করলে চাপ বাড়তে থাকে স্পেনের ওপর। আর সে চাপেই পথ হারালেন আসপাস। স্নায়ুর অসাধারণ জোর দেখিয়ে আসপাসকে রুখে দিলেন রাশিয়ান হিরো আকিনফেভ।
ম্যাচসেরা : ইগর আকিনফেভ (রাশিয়া)