সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতিকালে নেতাদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এই হামলা চালানো হয়। হঠাৎ করে কয়েকজন ‘ওই শিবির’ এবং ‘শিবিরের বাচ্চা’ বলে সংবাদ সম্মেলনকারীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। সংগঠনের যুগ্ন-আহ্বায়ক নুরুল হক নুরকে মারধরের এক পর্যায়ে নুর মাটিতে পড়ে যান।
গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল করতে করতে শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে হাজির হয়ে সেখানে অবস্থান নেন।
এই হামলার শিকার হয়ে আন্দোলনকারীদের ছয়জন আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ও কোটা আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর (২৪), আব্দুল্লাহ (২৩), আতাউল্লাহ (২৫), সাদ্দাম হোসেন (২৫), সাহেদ (২৫) এবং হায়দার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২৫ লাখেরও বেশি সদস্য সংখ্যার ওই গ্রুপে অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হামলাকারীদের একজনের হাতে পিস্তলও রয়েছে।
ঈদের পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ফেসবুক-টুইটারে সরব হয়েছেন। কোটা বাতিল করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় তিন মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করছেন।
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ন-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর ফেসবুক লাইভে এক বক্তব্যে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়ে আমরা এর আগে তিন তিনবার আন্দোলন স্থগিত করেছি। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আন্দোলন ছাড়া এই দাবি আদায়ের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ ছাত্র সমাজ বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে বারে বারে রাস্তায় নামতে প্রস্তুত আছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি সেসময় আরো বলেন, সাধারণ ছাত্রসমাজের দাবিকে অবহেলা করবেন না। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। আমরা আমাদের দাবি থেকে পিছু হটবো না। প্রয়োজনে আমরা আবারো রাস্তায় নামবো। তবে এবার রাস্তায় নামতে হলে তা কারো জন্যই ভাল হবে না।
সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে তা দশ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছেন সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে বেশ কয়েকবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এই কোটা সংস্কারের দাবিতে। আন্দোলন কঠিন আকার ধারণ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এ নিয়ে কথা বলেন। তিনি কোটা সংস্কার নয়, পুরো কোটা ব্যবস্থাই তুলে দেয়ার ঘোষণা দেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকরে সরকারি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বক্তব্যের দীর্ঘ দিন পার হলেও। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের অনুকূলে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আবারো আন্দোলনে নামছেন।
সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতিকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ওপর ‘হামলার’ প্রতিবাদে সারাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন।
তিনি শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সংবাদ সম্মেলনে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে সকল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সারাদেশে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।”