ইতিহাস বলছে আর্জেন্টিনার কথা

ইতিহাস বলছে আর্জেন্টিনার কথা

সবাই এই বিষয়ে একমত যে ফ্রান্স এবার বিশ্বকাপে এসেছে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা শিবিরে তর্ক বিতর্ক চলে আসছে প্রথম থেকেই। আইসল্যান্ডের সাথে ড্র এবং ক্রোয়েশিয়ার সাথে হারের পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় মেসি বাহিনীর। তবে নাইজেরিয়ার সাথে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। ভক্তদের জানান দেয়, হাল ছেড়োনা আমরা আছি এখনো।

কিন্তু মেসি নির্ভর একটা দল নিয়ে আর্জেন্টিনা পারবে কি দুর্দান্ত ফ্রান্সকে জয় করতে? নাকি বিশ্বকাপ থেকে আবারো এভাবেই খালি হাতে ফিরে যেতে হবে মেসিকে? কাগজে কলমে ফ্রান্স এগিয়ে থাকলেও, এবারের বিশ্বকাপ শুরু থেকেই সব র‍্যাংকিং, পরিসংখ্যানকে ভুল প্রমাণিত করে আসছে। তাই আজ রাতের আগে আমরা কেউই নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছিনা কে যাচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনেলে। আমরা নাহয় এক নজরে দেখে নেই ইতিহাস কি বলে।

আজ রাতে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে ১২তম বার মুখোমুখি হবে ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। আগের ১১ ম্যাচে আর্জেন্টিনা জয়ী হয় ৬ ম্যাচে। বিপরীতে পরাজিত হয় ২ ম্যাচে। বাকি ৩ টি ম্যাচ ড্র হয়। ১১ ম্যাচের মধ্যে ৮ ম্যাচেই ফ্রান্সের বিপক্ষে তারা ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হয়।

বিশ্বকাপে এর আগে দুইবার ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়ে দুইবারই জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা। ১৯৩০ সালে ১-০ ব্যবধানে এবং ১৯৭৮ সালে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রান্সকে। কাকতালীয়ভাবে দুইবারই আর্জেন্টিনা ফাইনালে পৌছায়। ১৯৩০ বিশ্বকাপে রানার আপ হলেও চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৭৮ এ।

বিশ্বকাপে লাতিনদের মধ্যে আর্জেন্টিনাই শেষ ফ্রান্স বধ করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার সাথে হারের পর বিশ্বকাপে কনমেবল প্রতিপক্ষের সাথে ৮ বার মুখোমুখি হলেও ৪ জয় ও ৪ ড্র নিয়ে ফ্রান্স এখনো অপরাজিত।

গত ১৩ বিশ্বকাপের মধ্যে ১২ বারই আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করে নক আউট পর্বে খেলেছে। শুধুমাত্র ২০০২ সালে তারা গ্রুপ পর্ব অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। কিন্ত সমসাময়িক সময়ে নক আউটে যেয়ে গোল খরায় ভুগছে দলটি। পেনাল্টি শুটআউটকে আমলে না নিলে, বিশ্বকাপের শেষ চার নক আউট ম্যাচে আর্জেন্টিনা মাত্র ২ গোল করতে সক্ষম হয়েছে। বিপরীতে হজম করেছে ১ গোল।

অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের খেলায়, ফ্রান্স তাদের শেষ ১১টি নক আউট ম্যাচের মাত্র ১ ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। ৮ ম্যাচে জয়লাভ করে এবং দুইটিতে ড্র। একমাত্র হারটি আসে জার্মানদের কাছ থেকে। (পেনাল্টি শ্যুটআউটে জয় পরাজয়ের হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে। তাই যে সকল ম্যাচ পেনাল্টিতে গড়িয়েছে সেই সকল ম্যাচকে ড্র ধরা হয়েছে।)

বিশ্বকাপে রাউন্ড অফ সিক্সটিন শুরু হয় ১৯৮৬ বিশ্বকাপে। ফ্রান্স যতবারই রাউন্ড অফ সিক্সটিনে পৌঁছেছে ততবারই তা পার করে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পেরেছে। এ পর্যন্ত ৪ বার তারা রাউন্ড অফ সিক্সটিনে যায় এবং অতিক্রম করে। (১৯৮৬, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৪ বিশ্বকাপ)।

এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের রক্ষণভাগ খুব মজবুত। গ্রুপ পর্বের খেলায় প্রতিপক্ষ দল, ফ্রান্সের দূর্গ পার হয়ে গোলে মাত্র ৫টি শট নিতে সক্ষম হয়েছে। এবং পেনাল্টি থেকে হজম করা একমাত্র গোলটি করে অস্ট্রেলিয়া।

মেসি ভক্তদের জন্য দু:সংবাদ বয়ে আনে যে পরিসংখ্যানটি তা হল, বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ৬৬৬ মিনিট খেলেও মেসি এখনো গোলশূন্য। অন্যদিকে সুসংবাদ হল, ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল করা শেষ আর্জেন্টিনিয়ান খেলোয়াড়ও মেসি নিজেই। ২০০৯ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে গোল করেন তিনি। খেলাটি আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে জিতে।

দিয়েগো ম্যারাডোনা এবং গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততার পরে তৃতীয় আর্জেন্টিনিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের তিনটি আসরে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের প্রধান স্ট্রাইকার অলিভার জিরু। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি তিনি ফুটবলের বড় কোন আসরে ফ্রান্সের হয়ে গোলশূন্য রয়েছেন ৩৫৭ মিনিট। ফ্রান্সের জার্সিতে বড় টুর্নামেন্টে তার শেষ গোল ২০১৬ এর ইউরো কোয়ার্টার ফাইনালে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। তাছাড়া এই বিশ্বকাপে ২০০ মিনিট মাঠে থাকা সত্বেও এখনো পর্যন্ত তিনি একবারও গোল বরাবর শট নিতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি শুধু গোলশূন্যই না, শট অন টার্গেটও শূন্য।

র‍্যাংকিংয়ে দুই দলের অবস্থানও কাছাকাছি। ফিফা র‍্যাংকিংয়ে আর্জেন্টিনা ৫ম এবং ফ্রান্স ৭ম অবস্থানে রয়েছে। এই দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন ছাড়া রাউন্ড অফ সিক্সটিনের অন্য কোন ম্যাচেই বিশ্বকাপের দুই ফ্যাভরিট দল মুখোমুখি হচ্ছে না এবার। তাই বলাই বাহুল্য, আজকে বিশ্বকাপের মঞ্চ হতে বাদ পড়তে যাচ্ছে ফেভারিটদের একজন।