উগান্ডার কারাগার কতৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানকার কারাবন্দীদের মধ্যে সমকামিতার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্যেষ্ঠ কয়েদিরা সাধারণ বন্দীদেরকে দৈহিক সম্পর্কের বিনিময়ে ভাল খাবার ও অন্যান্য সুবিধাদির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
উগান্ডা কারাগারের স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক সহকারী কমিশনার ড. জেমস কিসাম্বু বলেছেন, “জ্যেষ্ঠ পুরুষ কায়েদিদের সাথে অধীনস্ত সাধারণ পুরুষ বন্দীদের মধ্যে সমকামিতা প্রবল আকার ধারণ করেছে। কারা কতৃপক্ষের কিছু শর্ত আরোপের প্রেক্ষিতে এমনটা হয়ে আসছে।”
তিনি জানান, “কারাগারের শর্তমতে, সাধারণ বন্দীরা তাদের প্রয়োজনীয় কোন জিনিস কারাগারের বাহির থেকে আনতে পারবেন না। সম্ভবত এটাকে কিছু জ্যেষ্ঠ কয়েদিরা সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করে তাদের সাথে যৌনতার লেনদেন করে আসছে। কারণ, সাধারণ বন্দীরা ভাল খাবার ও অন্যান্য জিনিশপত্র আনা নেয়ার প্রয়োজনের খাতিরে এসব করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এসব জ্যেষ্ঠ কয়েদি তাদের পূর্বসূরী কায়েদিদের থেকে প্রভাবিত হয়ে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। কেননা, তাদের পূর্বসূরীরাও তাদেরকে সমকামী যৌনতায় ব্যবহার করে কারাগারের বাইরে অঢেল অর্থ উপার্জন করেছে।”
গবেষণার ফলাফল
ড. জেমস কিসাম্বু উগান্ডা কারাগার কতৃপক্ষ এবং দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর সাথে যৌথভাবে একটি গবেষণা কাজ পরিচালনা করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কিছু প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এই গবেষণা কাজ করেন।
গবেষণায় তিনি দেখতে পান, কারাগারে শতকরা প্রায় ৩ ভাগ পুরুষ কারারক্ষী সহকর্মীর সাথে স্থায়ীভাবে সমকামিতার সম্পর্ক বজায় রাখছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “শতকরা ২ দশমিক ৯ ভাগ পুরুষ কর্মীর একজন স্থায়ী সমকামী সহকর্মী রয়েছে; শতকরা ৩৮ দশমিক ৮ ভাগ পুরুষ কর্মীর কমপক্ষে দুইজন সমকামী সহকর্মী রয়েছে; অনেকের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা পাঁচজন পর্যন্ত আছে।”
প্রতিবেদনে দেখা যায়, সমকামিতার সাথে জড়িত পুরুষদের মধ্যে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা বেশি জড়িত ( ৫ দশমিক ৬ শতাংশ), অনুরূপভাবে ৪০ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে কম (৪ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের কোন সমকামী সহকর্মী নেই।
ড. জেমস কিসাম্বু জানান, আরও নিখুঁত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য তার আরও গবেষণা অব্যহত রয়েছে।
তিনি জানান, “কারাগারে একজন পুরুষের সাথে অন্য পুরুষ সহকর্মীর মধ্যকার সমকামিতা একটা জীবনাচারণে পরিণত হয়েছে। তারা মনে করেন সমকামিতার নানা উপকারী দিক রয়েছে। যদিও কারা কতৃপক্ষ তাদেরকে সমকামিতার ভয়ঙ্কর দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে, বিশেষত এইডসের মত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।”
গত সপ্তাহে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে মহামারী এইডস নির্মূলের লক্ষ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির কারা কমিশনার ড. জনসন বাইবেশাইজা সেখানে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যকার সমকামী যৌনতার উপরে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করেন।
ড. জনসন বাইবেশাইজা সেখানে বলেন, পুরুষ কর্মীদের সাথে সাধারণ বন্দীদের সমকামী যৌনতার পরিমাণ অতীতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উপনীত হয়েছে।
উগান্ডা এইডস কমিশন কতৃক আয়োজিত উক্ত সভায় ড. জনসন বাইবেশাইজা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইডাস নির্মূলের লক্ষ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সহায়তার আহবান জানান। গতবছরের জুনে এই ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা’ কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়।
এইডস সংক্রমণের পরিমাণ
ড. জনসন বাইবেশাইজা জানান, দেশটির ৫০ হাজার জ্যেষ্ঠ কয়েদির মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৮১১ জন কায়েদি এইডস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৯৭ জন নারী এবং বাকী ৪ হাজার ১৪ জন পুরুষ।
তিনি জানান, যখন এসব আক্রান্ত জ্যেষ্ঠ কায়েদিদের মুক্তি দেয়া হয় তখন তাদের এইডস পরীক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসা অব্যহত রাখার গাইডলাইন প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, এইডস আক্রান্ত বন্দিদের মধ্যে শতকরা ১২ ভাগ সাধারণ বন্দী এবং ১৫ ভাগ জ্যেষ্ঠ বন্দী; যে পরিসংখ্যানের উভয়টিই দেশের এইডস আক্রান্ত সাধারণ জনগণের তুলনায় অনেক বেশি। উগান্ডায় বর্তমানে শতকরা প্রায় ৬ ভাগ মানুষ এইডস দ্বারা আক্রান্ত।