এমআইটিতে পড়তে যা লাগে

এমআইটিতে পড়তে যা লাগে

পৃথিবীতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি যাদের প্যাশন বা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে যারা পড়াশুনা করছেন তাদের কাছে পরিচিত নাম ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এমআইটি) । বিজ্ঞানের প্রায় সব শিক্ষার্থীই স্বপ্ন দেখেন এমআইটিতে পড়ার। বিশ্ব র‌্যাংকিয়ে এক নম্বরে অবস্থান করা এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি গবেষণাধর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজ শহরে ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। এখানে মোট পাঁচটি স্কুল ও একটি কলেজের মাধ্যমে পাঠদান করানো হয়। এমআইটিতে রয়েছে ৩২টি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি বিষয়ক স্বতন্ত্র বিভাগ এবং এর প্রায় ২০০টি ল্যাবে প্রতিনিয়ত কোন কোন গবেষণা চলতে থাকে। এমআইটিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১১৫টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। এমআইটি পরিবারের ৭৭ জন এ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

 

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র বিভাগসমূহ

স্কুল অব হিউম্যানিটিস, আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স: নৃবিজ্ঞান, তুলনামূলক মিডিয়া স্টাডিজ, অর্থনীতি, বৈশ্বিক শিক্ষা এবং ভাষা, ইতিহাস, ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীত, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও সমাজ, থিয়েটার আর্টস, নারী এবং জেন্ডার স্টাডিজ।

স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং: অ্যারোনেটিকস এবং অ্যাস্ট্রোনাটিকস, বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল এবং এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইনস্টিটিউট অব ডাটা সিস্টেম অ্যান্ড সোসাইটি, ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।

স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট: বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ফাইনান্স, বিজনেস অ্যানালিটিক্স, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, সিস্টেম ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।

স্কুল অব সায়েন্স: জীববিজ্ঞান, ব্রেইন অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্স, রসায়ন, আর্থ অ্যাটমোসফিয়ার অ্যান্ড প্লানেটারি সায়েন্স, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োফিজিক্স, কম্পিউটেশনাল অ্যান্ড সিস্টেম বায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি, মলেকিউলার অ্যান্ড সেলুলার নিউরোসায়েন্স, সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ সায়েন্স, ল্যাবরেটরি ফর নিউক্লিয়ার সায়েন্স, ম্যাকগভার্ন ইনস্টিটিউট ফর ব্রেইন রিসার্চ, কাভলি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড স্পেস রিসার্চ, পিকাউয়ার ইনস্টিটিউট ফর লার্নিং অ্যান্ড মেমোরি।

স্কুল অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্লানিং: আর্কিটেকচার, আরবান স্টাডিজ + প্লানিং, রিয়েল এস্টেট, আর্ট কালচার + টেকনোলজি, সেন্টার ফর অ্যাডভান্স আরবানাইজেশন।

এমআইটি’র মিডিয়া ল্যাব

 

ভর্তি প্রক্রিয়া

এখানে প্রতি বছর ১০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তাই তারাই সুযোগ পায় যারা সেরা এবং সঠিকভাবে তাদের আবেদন সম্পন্ন করে। ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউটে ভর্তির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন গণিত এবং বিজ্ঞানে দক্ষতা। যার ফলে গণিত অলিম্পিয়াড বা বিজ্ঞানমেলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকে। দু’টি স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট যা স্যাট-১ ও স্যাট-২ নামে পরিচিত ও টোফেল সম্পূর্ণ করার পর যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী সে বিষয়ে একটি রচনা আবেদন পত্রের সাথে যুক্ত করতে হবে। তবে টোফেল প্রতিষ্ঠানটির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। আর অনেক সময় আপনার রচনার উপর নির্ভর করে চান্স পাওয়া। এমআইটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল এবং কলেজ জীবনের তিনজন শিক্ষকের সুপারিশ প্রয়োজন হয়। যেখানে তারা শিক্ষার্থীর জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী ছোট ছোট ঘটনা উল্লেখ করেন এবং তার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকেন।

এমআইটিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় নিম্নোক্ত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রয়োজন হয়

• এমআইটি ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খোলা

• ব্যক্তিগত তথ্য

• রচনা, এবং কার্যক্রম

• মাধ্যমিক স্কুল রিপোর্ট

• শিক্ষকের সুপারিশ পত্র

• অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট যা বাংলাদেশে মার্কশিট বা নম্বরপত্র নামে পরিচিত

• সাক্ষাৎকার

এমআইটিতে আবেদনের সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে আসে। এসময় ওয়েব সাইটে আবেদন করতে হয়। আবেদনের আগেই আপনাকে স্যাট-১ ও স্যাট-২ দিয়ে ফেলতে হবে। পরের বছর মধ্য মার্চের মধ্যেই জানতে পারবেন আপনার আবেদন সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা তথ্য।

আরেকটি কথা, এমআইটিতে পৃথিবীর যে কোন দেশের ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য এবং স্বাভাবিক হিসেবে শিক্ষার্থীর বয়স ১৭ থেকে ১৯ ধরা হলেও শ্রেষ্ঠ এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে বয়স কোন বাধা নয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এমআইটি’তে বাংলাদেশিদের আয়োজন।

এমআইটিতে পড়াশোনার খরচ:

এমআইটিতে আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে টিউশন ফি ৫১ হাজার ৫২০ মার্কিন ডলার। স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিটি ফি ৩১২ মার্কিন ডলার। এছাড়া এক বছরের বাড়ি ভাড়া, খাবার, বইপত্র এবং ব্যক্তিগত খরচ মিলিয়ে মোট ১৮ হাজার ৪০৮ টাকার একটি বাজেট করা আছে এমআইটির। এটি আপনার খরচের উপর নির্ভর করে বাড়তে পারে। আর গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ৯ মাসের অ্যাকাডেমিক ইয়ার বিবেচনায় এক বছরের খরচ ৪৯ হাজার ৫৮০ ডলার। এছাড়াও অন্যান্য খরচের ৩৩ হাজার ১৭০ ডলারে বাজেট হিসেব করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে এমআইটিতে পড়তে অর্থের অভাব কোন ব্যাপার নয়। চালু রয়েছে নানারকম বৃত্তি, করা হয় আর্থিক সহায়তাও। আবার অনেকে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের খরচ জোগাতে পারেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে থেকে আন্ডারগ্রাজুয়েশন পর্যায়ে ৭ জন এবং গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে ১০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এবং তিনজন পিএইচডি করছেন। এমআইটি’র বাংলাদেশি  শিক্ষার্থীদের অ্যাসোশিয়য়েশন লিঙ্ক দুটি হল– ওয়েব এবং ফেসবুক