সাম্বার তালে নাচল রাশিয়া; গ্রুপসেরা হয়েই পরের পর্বে ব্রাজিল

সাম্বার তালে নাচল রাশিয়া; গ্রুপসেরা হয়েই পরের পর্বে ব্রাজিল

অনন্য, অসাধারণ; এ ম্যাচের ব্রাজিলের পারফর্ম্যান্সের জন্য কোনো প্রশংসাসূচক শব্দই যেন যথেষ্ট নয়। সাম্বার তাল তুলে সার্বিয়াকে দর্শক বানিয়ে নক আউট নিশ্চিত করলো তিতের ব্রাজিল। পৌলিনহো এবং সিলভার গোলে ২-০ তে জিতে গ্রুপ সেরা হয়েই পরের পর্ব নিশ্চিত করলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

ব্রাজিল     সার্বিয়া 

পৌলিনহো ৩৬’

সিলভা ৬৬’

  • টানা ১৪ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ব্রাজিল
  • নিজের সর্বশেষ ১৮ ম্যাচে সরাসরি ১৯ টি গোলে অবদান রেখেছেন নেইমার। (১০ গোল, ৯ অ্যাসিস্ট)

ম্যাচের একদম শুরু থেকেই দেখা গিয়েছে ইতিবাচক শক্তিতে বলীয়ান ব্রাজিলকে। প্রথম আক্রমন রচনা হতে তাই লাগলো না এক মিনিটের বেশি। সেটিতে ফল না আসলেও ম্যাচের আসন্ন ফলাফল সম্পর্কে যেন একটি আভাস ছিল সেটিতে। এরপর যত সময় গড়িয়েছে ততই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে তিতের শিষ্যরা। কথায় নয়, মাঠেই নেইমাররা বুঝিয়ে দিলেন ‘১৪র চেয়ে এ ব্রাজিল অনেক বেশি পরিণত। পাসিং, ড্রিবলিং, শ্যুটিং; কোথায় মুগ্ধতা ছড়ায়নি ব্রাজিল এদিন?

ম্যাচ শুরুর মাত্র ঘন্টা দুয়েক আগেই ঘটে গিয়েছে চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন। খেলা শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে রক্ষণের অন্যতম ভরসা মার্সেলো। এমন অবস্থায় স্নায়ু চাপে ভোগাটা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। সুযোগ বুঝে সার্বিয়াও সাধ্যমত চেষ্টা করছিল ফায়দা লুটার। কিন্তু সাম্বার তাল যেদিন ওঠে, সেদিন বিস্ময় চোখে দর্শক হয়ে যায় সকলেই। সার্বিয়ান রক্ষণও যেন মুগ্ধ চোখে দেখল কৌতিনহোর বাড়ানো অসাধারণ বল কি আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় নিজ আয়ত্বে নিয়ে আলতো টোকায় জালে জড়ালেন পৌলিনহো। ছবির মত সুন্দর এক গোলে খুলল গোলের খাতা।

প্রথমার্ধে এর আগে পরেও বেশ কটি ভালো সুযোগ পেয়েছিল সেলেসাওরা। কখনো গোলরক্ষক স্টইকোভিচ কখনো বা সার্বিয়ান রক্ষণ হতাশ করেছে ব্রাজিলকে। বিশেষ করে ম্যাচের ২৫ মিনিটে স্টইকোভিচ যে জায়গা থেকে নেইমারকে গোল বঞ্চিত করেছেন সেটি বাহবা পাওয়ার মত। প্রথমার্ধের বেশকটি সুযোগ সার্বিয়ানরাও তৈরি করেছিল। তবে তৎপর অ্যালিসন এবং জমাট রক্ষণে ফাটল ধরানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

৬০-৬৫ মিনিটে ব্রাজিলের রক্ষণে যেন ঝড়ই তুলেছিল সার্বিয়া। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে গোলবার অক্ষত রেখেছেন সিলভা-মিরান্ডারা। গোলের জন্য যখন মরিয়া সার্বিয়া তখনই আসে দ্বিতীয় আঘাতটা। নেইমারে কর্নার থেকে নিখুঁত হেডে সিলভার গোল। এর পরেও খেলা বিন্দুমাত্র আকর্ষন হারায়নি। দুই গোলের পরেও আরো গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিলের মধ্যে দেখা গিয়েছে জয়ের দারুণ ক্ষুধা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাচের একদম শেষ মিনিট পর্যন্ত দেখা গিয়েছে ব্রাজিলের আক্রমন।

এ ম্যাচে নেইমার ছিলেন অসাধারণ। গোলটা বাদে সাম্ভাব্য সবই করেছেন তিনি। আর গোল না পাওয়ার ক্ষেত্রে স্টইকোভিচেরও দারুণ হাত রয়েছে। ম্যাচে দুবার পরাস্ত হলেও নেইমারকে গোল করতে না দেয়ার পণ করেই যেন নেমেছিলেন তিনি। একাধিকবার গোল বঞ্চিত করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান সেনশেসনকে। গোল না পেলেও একটি অ্যাসিস্ট, ৪ টি কি পাস এবং ৯টি সফল ড্রিবলিংই বলে দিচ্ছে ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করেছেন তিনি। সন্দেহাতীতভাবে ম্যাচ সেরাও নেইমারই।

সার্বিয়া হেরে বিদায় নিলেও ব্রাজিলের সাথে উপহার দিয়েছে প্রাণবন্ত ফুটবল। ব্রাজিলের মত দল যখন পুরো ছন্দে থাকে তখন জেতার জন্য অসাধারণ কিছুই করে দেখাতে হয়। এখানেই মার খেয়ে গিয়েছে সার্বিয়া।

এ ম্যাচের পর তিতে যে খোশ মেজাজে থাকবেন তা বলাই বাহুল্য। সাম্বার ছন্দ ফিরে পাওয়াই শুধু না, পুরো ছন্দের নেইমারকে পাওয়ার আভাসও মিলেছে এ রাতে। শুরুটা অঘটন দিয়ে, শেষটা মন মাতানো সাম্বার তালে। রাশিয়া বিশ্বকাপ চমৎকার একটি রাতই যেন উপহার দিল ফুটবলপ্রেমীদের।

ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : নেইমার (ব্রাজিল)