বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চ এমন এক জায়গা যেখানে যে কেউ যখন তখন হয়ে উঠতে পারেন তারকা। নিজেকে চেনানোর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মে সুযোগ কেউই হারাতে চায় না। কিন্তু, এখানে আসা অজস্র তারকার ভীড়ে মহাতারা হয়ে আছেন কয়েকজন, যাদের দিকে চোখ ফেলতে বাধ্য সকলে। মেসি, রোনালদো, নেইমার তেমনই তিনজন, তারার আকাশে ধ্রুবতারা। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রত্যেকেই যার যার দল নিয়ে পৌঁছে গেছেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। দলের এহেন যাত্রায় তারা নিজেরা কতটুকু সফল ছিলেন, তা নিয়েই এই আয়োজন…
•লিওনেল মেসি
সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপ, যার দুটিতেই ছিলেন টিম আর্জেন্টিনার মূল ভরসা। গত আসরে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েও দেশকে জেতাতে পারেননি আরাধ্য বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় এবারের আসরে নেমেছেন অপূর্ণতা ঘোচানোর মিশনে। প্রথম ম্যাচেই সাধের সঙ্গে সাধ্যের আড়ি! পেনাল্টি মিসে হতশ্রী মেসি। বিশ্বকাপে অভিষিক্ত আইসল্যান্ডের সাথে ১-১ ড্রয়ে শুরু মেসির বিশ্বকাপ যাত্রা। গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া ম্যাচটি মেসি ভুলতে চাইবেন খুব করে। আগের ম্যাচে তাও গোলে শুট নিয়েছেন, করেছেন বেশকিছু আক্রমণ। ক্রোয়েটদের বিরুদ্ধে পুরো ৯০ মিনিটতো খুঁজেই পাওয়া যায়নি তাকে! গোটা ম্যাচে প্রতিপক্ষের পোস্টে নেই একটিও শট, এমন মেসিকে কবে দেখেছিল ভক্তরা! ম্যাচ হেরে উল্টো বিদায়ের শঙ্কা জাগায় আর্জেন্টিনা। মেসির মতো তারকারা নিজেদের অফফর্মকে বেশিক্ষণ ধরে রাখে না। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচামরার শেষ ম্যাচে ১৪ মিনিটেই দেখা মেলে পুরনো মেসির, জাদুকর অবতারে। মধ্যমাঠেরও এক হাত পেছন থেকে এভার বানেগার দুর্দান্ত লফটেড শট উরু দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলেন, দুর্বল ডান পায়ে সবল শটে উল্লাসে মাতালেন ভক্তদের। রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসির প্রথম গোল। ওই গোলে মেসি পাশে বসেন দুই কিংবদন্তি মারাদোনা, বাতিস্তুতার পাশে। এই দু’জনের পর তৃতীয় আর্জেন্টাইন হিসেবে তিন বিশ্বকাপে গোল করলেন তিনি। ম্যাচে আর গোল না পেলেও নিজের সেরাটা দিয়েই দেশকে পরের পর্বে উঠিয়েছেন। স্বরূপে ফেরা মেসি অলক্ষ্যে নিন্দুকদের বার্তা দিলো, ‘আমি ফিরেছি’।
•ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
একটি নাম, আত্নবিশ্বাসের, আস্থার। রোনালদো যেন আলাদীনের চেরাগ! তার জাদুর ছোঁয়ায় বদলে গেছে পর্তুগিজ ফুটবল দলের নকশাই। তিনি দলে থাকা মানে অর্ধেকটা ম্যাচ জিতে মাঠে নামা। অন্তত, ভক্তরা এমনটাই বিশ্বাস করেন। পর্তুগিজদের ইতিহাসের প্রথম শ্রেষ্ঠত্ব ‘ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ’ এনে দেওয়া রোনালদো অ্যাভেইরো মাদেইরা থেকে লিসবন, গোটা দেশেই তো দেবতূল্য। সেই রোনালদো এবার নেমেছেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপে। নিজের দিনে সব তছনছ করে দিতে তিনি পারঙ্গম! এবারে পর্তুগালের প্রথম ম্যাচ ছিল ঈদের দিন। স্পেনের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মাত্র চতুর্থ মিনিটেই ভক্তদের ঈদ উপহার দেন সিআরসেভেন। পেনাল্টি থেকে ২০১৮ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলটি করেন তিনি। প্রথমার্ধের আরো একটি গোল করে স্পেনের বিরুদ্ধে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। তবে, ম্যাচের অন্তিম সময়ে ফ্রি-কিক থেকে করা চমৎকার গোলটি এখন পর্যন্ত এবারের অন্যতম সেরা গোল। মরক্কোর সাথে ১-০ তে জেতা দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়সূচক গোলটি করেন পর্তুগিজ কাপ্তানই। শেষ ম্যাচে অবশ্য ইরানের বিপক্ষে বিবর্ণ ছিলেন এই মহাতারকা, এমনকি মিস করেছেন পেনাল্টিও। ৩ ম্যাচে এক হ্যাট্রিকসমেত ৪ গোল, প্রথম দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়া রোনালদোকে একদিনের পারফর্মেন্স দিয়ে বিচার করাটা বোকামিই হবে।
•নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র
ছোট্ট কাঁধে বিশাল দায়িত্ব নিয়ে রাশিয়ার মহাযজ্ঞে শামিল হয়েছেন নেইমার। বিশ্বকাপের আগে প্রায় তিনমাস ইঞ্জুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকা নেইমার প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছিলেন ভালমত, নেমেই গোল করেছেন ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে, খেলেছেন স্বভাবজাত ছন্দে। মূলপর্বে প্রথম খেলায় সুইজারল্যান্ড কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিল তাকে, দেড়ঘন্টায় ফাউলের শিকার হন ১০ বার। এর মাঝেই গোলে ৪টি শট নেন, যার দুটি অন টার্গেট। ১-১ এ ড্র হওয়া ম্যাচে গোল না পেলেও ৮৬ শতাংশ নির্ভুল পাস, ১৭ টি ডুয়েল উইনে চেষ্টার কমতি রাখেননি। পরের ম্যাচে শৈল্পিক খেলায় গোলও পান, ব্রাজিলও পায় জয়ের দেখা। গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ খেলাতে সার্বিয়ার বিপক্ষে অ্যাসিস্ট করেছেন এক গোলে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে ১ গোল, ১ অ্যাসিস্ট করা নেইমার আছেন ছন্দেই।