নাইজেরিয়া ১-২ আর্জেন্টিনা
ময়সেস ৫০’ মেসি ১৪’ রোহো ৮৬’
• এর আগে বিশ্বকাপে চারবার মুখোমুখি হয়েছে নাইজেরিয়া-আর্জেন্টিনা। প্রত্যেকটি ম্যাচই জিতেছে আর্জেন্টাইনরা।
• দু দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে নাইজেরিয়া জিতেছিল ৪-২ গোলে।
• সর্বশেষ ২০০২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বাদ পরেছিল আর্জেন্টিনা।
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করলো আর্জেন্টিনা। মেসি এবং রোহোর গোলে ২-১ ব্যবধানে এলো স্বস্তির এ জয়। রাউন্ড অফ সিক্সটিন এ আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ‘৯৮ এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
লাইন আপ
নাইজেরিয়া (৩-৫-২)
উজোহো, ওমেরু, ট্রস্ট-একঙ্গ, বালোগুন, ময়সেস, এনডিডি, ওবি মিকেল, ইতেবো, আইডু, ইহেনাচে, মুসা
সাব : ইহেনাচো-ইগহালো, ওমেরু-আইয়োবি, সিমি-মুসা
আর্জেন্টিনা (৪-৩-৩)
আরমানি, ট্যাগলেফিকো, রোহো, ওতামেন্দি, মার্কাদো, পেরেজ, মাসচেরানো, বানেগা, ডি মারিয়া, হিগুয়েইন, মেসি
সাব : পেরেজ-পাভন, ডি মারিয়া-মেজা, ট্যাগলেফিকো-আগুয়েরো
প্রথমার্ধ
চলতি বিশ্বকাপে এই প্রথম প্রথমার্ধটা আনন্দের সাথে শেষ করল আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বিপর্যয়ের পর মূল একাদশ এবং ফর্মেশনে পরিবর্তন আনেন এখনো বহাল তবিয়তে থাকা সাম্পাওলি। চেনা ৪-৩-৩ এ ছন্দ ফিরে পেতে খুব বেশি সময় নেননি প্রথম দু’ ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থাকা আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। বানেগার চমৎকার একটি লম্বা পাস আরো চমৎকার ভঙ্গিমায় নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত এক ফিনিশিংয়ে জিইয়ে রাখলেন আর্জেন্টিনার আশা। ম্যাচের তখন মাত্র ১৪ মিনিট। একই সাথে সমালোচকদেরও দিলেন প্রাপ্য জওয়াব। এর পরে আর কোনো গোল না আসলেও নাইজেরিয়ার রক্ষণকে বেশ ব্যস্ত সময়ই পার করতে হয়েছে। গত ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকা ডি মারিয়া মাঠে নেমেই বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের অপরিহার্যতা। তবে, রক্ষণভাগটা আর্জেন্টিনার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। নাইজেরিয়ান দুই ফরোয়ার্ড মুসা এবং ইহেনাচোর গতির সামনে বেশ কবারই অসহায় দেখা গিয়েছে আর্জেন্টাইন রক্ষণকে। গোলবারের নিচে ক্যাবায়েরোর জায়গায় নামা আরমানিকে প্রথমার্ধে সে অর্থে কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি বলে তার বিষয়ে এখনো রায় দেয়াটা কঠিন। এটা পরিষ্কার যে, ক্রোয়েশিয়া বিপর্যয়ে খেলোয়াড়রা যতটা দায়ী কোনো অংশেই কম দায়ী নন সাম্পাওলি। তার অচেনা ফর্মেশনই সেদিন মেসির নিষ্প্রভতার অন্যতম প্রধাণ কারণ এটা প্রথমার্ধ শেষে অন্তত পরিষ্কার।
দ্বিতীয়ার্ধ
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু আর শেষটায় আকাশ পাতাল তফাত। শুরুটা যেখানে হয়েছিল মাসচেরানোর অমার্জনীয় ভুলে, যেটি সংশয়ে ফেলে দিয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন; সেখানে শেষটা হল রোহোর ম্যাজিকাল ফিনিশে উন্মাতাল আনন্দে। নাইজেরিয়ার সাথে নক আউট পর্বে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা প্রথমার্ধ আশার আলো দেখালেও দ্বিতীয়ার্ধের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কতটা আশ্বস্ত করতে পেরেছে সে প্রশ্নটি থাকবে। ম্যাচটি বহুলাকাঙ্খিত জয় দিয়ে শেষ হলেও এ আর্ধে আর্জেন্টিনার বেশ ভাল পরীক্ষাই নিয়েছে নাইজেরিয়া। অন্যভাবে বললে, আরেকবার দেখা গিয়েছে আর্জেন্টাইন রক্ষণের রুগ্ন রুপ। যে পেনাল্টিটি থেকে গোল করে সমতায় ফেরে নাইজেরিয়া, ওটা পেনাল্টি পাওয়াটা ছিল এক ধরনের উপহার। বিপদ আরো একবার ঘনিয়ে এসেছিল, তবে এবার আর ভিএআর সঙ্গ দেয়নি সুপার ঈগলদের। এটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক বেশ জমবে।
জয়ের জন্য মরিয়া সাম্পাওলি একের পর এক খেলোয়াড় বদলাতে থাকেন। বিশেষ করে পাভনকে নামানোটা ছিল দারুণ। গতি দিয়ে বেশকবারই নাইজেরিয়ানদের পরীক্ষা নিয়েছেন তিনি। ম্যাচটি যখন ড্রয়ের পথে তখনই মার্কাদোর বাড়ানো চমৎকার বলে রোহোর সে দুর্দান্ত ফিনিশিং। যা বাঁচিয়ে রাখলো আর্জেন্টিনার আশা। তার আগে অবশ্য আরমানিরও একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য।
ম্যাচের শেষের দিকে ইগহালোর প্রচেষ্টাটি দারুণভাবে রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ম্যাচে হয়ত অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে, তবে সে সব না ভেবে আর্জেন্টাইনদের জন্য সময়টা এখন উদযাপন করার। বেশ কিছুদিনের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে অবেশেষে মুক্তি তো মিলল।
ম্যাচসেরা : লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)