কত জটিল সমীকরণ, ড্রেসিংরুমে থমথমে অবস্থা, মাঠ, মাঠের বাইরের বিষয়াদি নিয়ে আক্ষরিক অর্থে শ্মশানপুরীতে পরিণত লা আলবিসেলেস্তেরা। শূন্যের কোটায় মনোবল, দেয়ালে ঠেকে যাওয়া পিঠ নিয়ে পিটার্সবার্গে আর্জেন্টিনা। মেসির ভরসা ছিল ঈশ্বরের ওপর, আকাশি-নীলদের ভরসা ছিল মেসির ওপর।
সেন্ট পিটার্সবার্গের চৌষট্টি হাজার দর্শক হতে শুরু করে গত রাতে রাশিয়ার নানান ফ্যান জোন, বুয়েন্স আয়ার্স, রোজারিও হয়ে বাংলার পাড়ায় পাড়ায়, গলির মোড়ে ছিপছিপে টংয়েও উল্লাসের বোমাবাজি। ট্রাকে করে মিছিল, স্লোগানে বুকের পাথর কাটানো দীর্ঘশ্বাসে স্বস্তির ফোয়ারা। ‘লিওনেল মেসি’। কে তিনি? কতটা পারেন? কতটুকু দায়িত্ববোধ আছে তার? আদৌ আছে? জাগতিক যত প্রশ্ন ছিল উত্তর দিয়েছেন ১৪ মিনিটে। পেনাল্টিতে স্নায়ুর চাপ সামাল দিতে না পারা মেসিকে মেসির দিনে আটকাতে বিপক্ষের স্নায়ুতন্ত্রে গোলমাল দেখা দেয় নিয়মিতই। ঠিক মধ্যমাঠেরও এক হাত পেছন থেকে এভার বানেগার দুর্দান্ত লফটেড শটের পিছু পিছু ছুটছেন মেসি। ছুটছে আর্জেন্টিনার স্বপ্ন, বিশ্বাস আর প্রার্থনা। উরু দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ করলেন, দুর্বল ডান পায়ে সবল শট। মেসি পিছন ফিরে তাকাননি। শিকারের বুনো আদিমতায় তিনি তখন মত্ত। দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে ভৌঁ দৌঁড়…
মেসি নাকি নিঃসঙ্গ শেরপা। ম্যাচের শেষ আধঘন্টা কাটা গাল নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া মাশচেরানো কাল মিথ্যে প্রমাণ করলেন তা। ছিয়াশি মিনিটে গ্যাব্রিয়েল মেরকাদোর ক্ষিপ্র ক্রসে দ্বিগুণ ক্ষিপ্রতায় ডিফেন্ডার মার্কোস রোহোর একেবারে জাত স্ট্রাইকারের মতো ফিনিশিংয়ে কাল ফের মিথ্যে প্রমাণিত নিঃসঙ্গতার অপবাদ। হিগুয়াইন স্বভাবসুলভ মিস করেছেন কাল রাতেও, তবে খেলেছেন যা চেষ্টা করেছেন তারচেয়ে ঢের বেশি।
মেসি বললেন, আজ থেকে আমাদের বিশ্বকাপ শুরু। বড় দলের বড় তারকার এমন কথায় ফুটবলভক্তরা বেজায় খুশি। রং হারাতে বসা মঞ্চে হোলি উৎসবের শুরুটা লিও করে ফেলেছেন, ম্যাচসেরা হয়ে একেবারে সামনে থেকে। মেসির গোলটি ছিল এবারের আসরের শততম। তাতে আবার মারাদোনা, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার পর তৃতীয় আর্জেন্টাইন হিসেবে তিন বিশ্বকাপে গোল করলেন। তৃতীয় ম্যাচে এসে খোলস ছেড়ে বেরুনো আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের আসল যাত্রা শুরু হল, লিও মেসির ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সেরা ম্যাচের মধ্য দিয়ে…