বিদায় জার্মানি! চো এর হাতে শেষ লো এর স্বপ্ন!

বিদায় জার্মানি! চো এর হাতে শেষ লো এর স্বপ্ন!

দক্ষিণ কোরিয়া ২-০ জার্মানি
কিম ৯০+৪’
সুন ৯০+৭’

রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সাথে সাথেই মাঠে বসে পড়লেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। দুই শিবিরের চোখেই অশ্রু। তবে সম্পুর্ণ ভিন্ন দুটো কারণে। কোরিয়ানরা যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিদায়ের উল্লাস করছে অশ্রু চোখে নিয়ে, মুলার-গোমেজদের চোখে তখন অবিশ্বাস, বিস্ময়। বিশ্বের ৫৭ তম দলের কাছে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং এক নম্বর দল জার্মানি।

ইতিহাস, ফর্ম, শক্তি; সব বিবেচনাতেই কোরিয়ানদের চেয়ে এগিয়ে থেকে ম্যাচ শুরু করেছিল জার্মানরা। নূন্যতম ১-০ গোলের ব্যবধানের জয়েই যখন নক-আউট নিশ্চিত তখন চাপও ছিল না সে অর্থে। জার্মান কোচ জোয়াকিম লোও সে সুযোগে বিশ্রাম দিলেন নিয়মিত একাদশের মুলার-গোমেজদের। গোলবারের নিচে নয়্যার, রক্ষণে হামেলস-কিমিচ, মিডে ক্রুস-ওজিলদের মত তারকারা কোরিয়ার বিপক্ষে ডাহা ফেল মারবেন এমনটা লো তো দুর, কেউই ভেবেছিল বলে মনে হয় না।

কোরিয়ার হারানোর ছিল না কিছুই। আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এ ম্যাচটা ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষার। কিন্তু সে ম্যাচটিকেই বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম স্বরণীয় ম্যাচে পরিণত করলো কিম-সুনরা।

প্রথমার্ধে ম্যাড়মেড়ে ফুটবলই উপহার দিয়েছে দুই দল। আগে ম্যাচে জিতলেও জার্মানদের ফুটবল মন ভরাতে পারেনি সমর্থকদের। তার রেশ দেখা গেল এ ম্যাচের প্রথমার্ধেও। জার্মানি পায়ে বল নিয়ে একের পর এক পাস দিয়ে যাচ্ছে, আর কোরিয়া রক্ষণ করছে; একদম সহজভাবে বলতে গেলে এই ছিল প্রথমার্ধের চিত্র।

খেলা বদলে যায় দ্বিতীয়ার্ধে। গোলের জন্য মরিয়া জার্মানি এ আর্ধের শুরু থেকেই চওড়া হয়ে খেলতে শুরু করে। ৪৭ মিনিটে গোৎজেকার চমৎকার হেডটি অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন ম্যাচের মূল নায়ক চো। এরপর থেকে নব্বই মিনিট পর্যন্ত এটাই হয়ে ছিল ম্যাচের নিয়মিত দৃশ্য। একের পর এক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ওজিল-মুলার-গোমেজরা আর অসাধরণ ক্ষিপ্রতায় সেগুলো প্রতিহত করছেন চো।

প্রথম রাউন্ডেই ওজিলদের এমন হতাশ বদনে দেখা যাবে তা কল্পনায় ছিল না কারোরই

৭৪ শতাংশ পজিশন এবং ২৩টি শ্যুটই বলে দিচ্ছে কোরিয়ানদের ওপর কতটা চওড়া হয়েছিল জার্মানি। এক দিকে অতিমানব রুপে দেখা দেয়া চো অপর দিকে অবিশ্বাস্য সব মিস ক্রমশ কঠিন করে তুলছিল জার্মানির জয়ের সুযোগ। মূল স্ট্রাইকার হিসাবে খেলা ওয়ার্নার ছিলেন চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ। হামেলসও পারেননি নিশ্চিত কিছু সুযোগ কাজে লাগাতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল অদৃষ্টও বোধয় চায় না জার্মানদের জয়!

একদম শেষ মুহুর্তে আবারো দৃশ্যপটে চলতি বিশ্বকাপে আলোচিত-সমালোচিত ভিএআর। কর্ণার থেকে পাওয়া বল ডিফ্লেক্টেড হয়ে কিমের পায়ে আসলে জালে জড়াতে সামান্য ভুলও করেননি ফাকায় দাড়ানো এ ডিফেন্ডার। কোরিয়ার উল্লাস মাঝপথেই থেমে যায় লাইন্স-ম্যানের অফ সাইডের ইশারায়। কিন্তু ভিএআর গড়ে দেয় ব্যবধান। কিমের আগে জার্মান ডিফেন্ডার শুলের পায়ে লেগেছে বল; আর এটি দেখা মাত্রই রেফারি গোলের ইশারা করলে উল্লাসে ফেটে পড়ে কোরিয়া।

তখনও নাটকের আরেক প্রস্থ চিত্রায়ণ বাকি। মুলার বারবারই রেফারির কাছ থেকে জানতে চাইছিলেন কতটা সময় বাকি। জার্মানদের হার মানা না চরিত্রই ছিল তখন একমাত্র ভরসা। মাত্র তিন মিনিটের মতন সময়, এর মধ্যে করতে হবে কমপক্ষে দুই গোল। মরিয়া হয়ে নয়্যারও উঠে আসলেন ওপরে। তাতে, কাজের কাজ তো কিছুই হল না; বরং আরো একটি গোল হজম করে কোরিয়া নিশ্চিত করল ঐতিহাসিক জয়।

ম্যাচের ৯৬ মিনিটের মাথায় কোরিয়ান মিডফিল্ডার জু এর পায়ে বল হারান নয়্যার। বলটি পাওয়া মাত্রই অসাধারণ ভিশনে ফাকায় দাঁড়ানো সুন এর উদ্দেশ্যে লম্বা করে বাড়ান তিনি। অনেকটা দৌড়ে সুন যখন বলটি জালে জড়ালেন জার্মান শিবিরে তখন সুনসান নিরবতা।

অনিশ্চয়তার বিশ্বকাপ উপহার দিল প্রথম পর্বের সবচেয়ে বড় অঘটনের, তাতে কপাল পুড়লো চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং আসরের অন্যতম ফেভারিটদের। কোরিয়ানরা পেল মনে রাখার মত একটি রাত। বিশেষ করে চো, বলতে গেলে এ গোলরক্ষকই শেষ করে দিয়েছেন জার্মানদের স্বপ্ন। পরবর্তী চারটি বছর যে দুঃস্বপ্নে বহুবার তিনি লো এর স্বপ্নে আসবেন তা এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়।

ম্যাচসেরা : হিয়ুন উ চো (দক্ষিণ কোরিয়া)