খুলনার কলঙ্কের পুনরাবৃত্তি গাজীপুরে

খুলনার কলঙ্কের পুনরাবৃত্তি গাজীপুরে

শতাধিক কেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সিল মারার মহোৎসবের মধ্য দিয়ে গাজীপুরে নির্বাচন কমিশন কলঙ্কজনক একটি নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সরকারদলীয় প্রার্থীকে জেতাতে প্রশাসন ও দলীয় লোকজনের সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক অনুষ্ঠান নির্বাচনকে যেমন কলঙ্কিত করা হয়েছিল ঠিক তেমনই গাজীপুরেও করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেছেন, গাজীপুরে পুলিশের সহযোগিতায় চর দখলের মতো ভোটকেন্দ্র দখল হয়েছে। গাজীপুর সিটির নির্বাচন খুলনাকেও হার মানিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ছিনতাই করা হয়েছে। সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে টঙ্গীর বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

হাসান সরকার অভিযোগ করেন, ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে শতাধিক কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। প্রথমেই সকাল ১১টার মধ্যে শতাধিক কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। দুপুর ২টার সময় রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর রেখে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোরবেলা থেকেই পুলিশ সাদা পোশাকে বিভিন্ন কেন্দ্রের পাশে ওত পেতে থেকে আমাদের এজেন্ট ও দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেফতার করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের ২০ জন এজেন্ট ও কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমরা একাধিকবার এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢোকানোর চেষ্টা করেছি। প্রতিবারই আমাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আমরা জনগণকে কথা দিয়েছিলাম নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকব।

বিএনপি প্রার্থী বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে সিল মারার পরও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার উদ্দেশ্য হলো, এই সরকারের চরিত্রটুকু উন্মোচন করে দেয়া। নতুন প্রজন্ম আওয়ামী লীগের চরিত্রটা ভালো করে জানল। কোনো রক্তপাত ও প্রাণহানি না ঘটায় এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা কষ্ট স্বীকার করায় তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নিজস্ব পর্যবেক্ষক দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। ৪২৫টির মধ্যে ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এই ৯টি কেন্দ্রে অচিরেই নির্বাচন হবে। আমাদের নির্দেশ ছিল কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে তা বরদাশত করা হবে না। প্রিসাইডিং অফিসারদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এসব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দিই।’

এদিকে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ব্যালট পেপারে সিল মারার মহোৎসব হয়েছে বলে অভিযোগ করে তুলে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমন অভিযোগ করে বলেন, এসব বিষয়ে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। দুপুর পর্যন্ত দুই শতাধিক কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা অবৈধ সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে মূল কাণ্ডারি হয়ে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। আর ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে।

অপর এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে ফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে দলটি। বুধবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সরকার আবারও প্রমাণ করল তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসিচব।

উল্লেখ্য, বেসরকারি হিসাবমতে এ পর্যন্ত ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টির ভোট গণনা শেষ হয়েছে। আওয়ামীলীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৪ লাখ দশ ভোট আর বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন।