রোনালদো যেন মেসির লজ্জাটা ভাগ করে নিলেন। পেনাল্টি মিসের একক লজ্জার হাত থেকে মেসি রেহাই পেলেও জয় পেল না পর্তুগাল। বরং গোটা ম্যাচে দেখা গেল দাপুটে পর্তুগালকে বেশ চাপে রেখে ইরান সাহসী কিছু আক্রমণ উপহার দিয়েছে দর্শকদের। তবে ফরওয়ার্ড অগোছালো হওয়াতে ইরানের সব সফলতা যেন পর্তুগাল শিবিরের গোল পোষ্টের সামনে গিয়ে নেতিয়ে পড়েছে। বাদ পড়ল ইরান। তবে যে খেলা দেখল ফুটবল দুনিয়া, তাতে আগামি দিনে ইরানের জন্য আরও গৌরবময় সময় অপেক্ষা করছে বলেই মনে হয়।
ইরান ১-১ পর্তুগাল
আনসারিফার্দ ৯০+৩’ কারেজমা ৪৫’
• বিশ্বকাপে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছে ইরান-পর্তুগাল, সে ম্যাচটি পর্তুগাল জিতেছিল ২-০ গোলে
• বিশ্বকাপে এশিয়ান দেশগুলোর বিপক্ষে আগের চার ম্যাচের তিনটিই জিতেছে পর্তুগাল
• এ ম্যাচের আগে পর্তুগালের শেষ পাচ গোলের সব কটিই করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে ১-১ গোলে ইরানের সাথে ড্র করে নক-আউট পর্ব নিশ্চিত করলো পর্তুগাল। টানা দু ম্যাচে গোল করা রোনালদো এ ম্যাচে মিস করেছেন পেনাল্টি। আর এ ড্রয়ে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল এশিয়ার প্রতিনিধি ইরানের।
লাইন আপ :
ইরান (৪-১-৪-১)
আলীরেজা, রেজাইন, হোসেইনি, মোর্তেজা, হাজী শাফি, ইজ্জাতুল্লাহি, জাহানবকশ, তারেমি, ইব্রাহিমি, আমিরি, আজমুন
সাব : হাজী শাফি-মোহাম্মাদি, জাহানবকশ-ঘোদ্দুস, ইজ্জাতুল্লাহি-আনসারিফার্দ
পর্তুগাল (৪-৪-২)
প্যাট্রিসিও, গুরেইরো, ফন্ট, পেপে, সেডরিক, মারিও, সিলভা, কারভালহো, কারেজমা, আন্দ্রে সিলভা, রোনালদো
সাব : কারেজমা-বার্নার্দো সিলভা, মারিও-মৌতিনহো, আন্দ্রে সিলভা-গুয়াদেস
প্রথমার্ধ
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে রিকার্ডো কারেজমার চমৎকার লক্ষ্যভেদে ১-০ গোলের লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করেছে পর্তুগাল। শুধু লিডের জন্যই না, আরো বেশ কিছু দিক বিবেচনায় প্রথমার্ধটি পর্তুগালের জন্য বেশ প্রশান্তিমূলক ছিল। গত ম্যাচে জয় পেলেও পর্তুগালের মারদাঙ্গা ফুটবল মন ভরাতে পারেনি সমর্থকদের। সেদিক থেকে এ আর্ধে পর্তুগাল ছিল বেশ গোছানো। মধ্যমাঠ, রক্ষণ এবং আক্রমণ তিন বিভাগেই খেলোয়াড়দের সক্রিয়তা ছিল লক্ষ্য করার মতো। এছাড়া নিজেদের মধ্যে ধীরে ধীরে বোঝাপড়া গড়ে ওঠার ছাপও ছিল সুস্পষ্ট। অপর দিকে এশিয়ান প্রতিনিধি ইরান প্রথমার্ধ পিছিয়ে পরে শেষ করলেও খুব একটা খারাপ করেনি। বিশেষ করে পাল্টা আক্রমণগুলো ছিল বেশ চমৎকার। কিন্তু একজন ফিনিশারের অভাবে সে অর্থে আতঙ্ক ছড়ানো যায়নি পর্তুগিজ রক্ষণে। প্রশংসার দাবি রাখে ইরানি রক্ষণও। বিশেষ করে পুরো ৪৫ মিনিট যেভাবে তারা রোনালদোকে আটকে রেখেছিল। ইরানে দূর্বলতা বলতে যেটি চোখে লাগার মতো ছিল তা হল, গোলরক্ষকের দূর্বল আত্মবিশ্বাস এবং রক্ষণের সাথে বোঝাপড়ার অভাব। যেটি দ্বিতীয়ার্ধেও ইরানকে ভোগাতে পারে বলে প্রথমার্ধে মনে হয়েছিল।
দ্বিতীয়ার্ধ
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে করা কারেজমার গোলটি যদি হয় জমজমাট কোনো চিত্রনাট্যের ট্রেলার তাহলে দ্বিতীয়ার্ধ ছিল সে ট্রেলারের সার্থক চিত্রায়ণ। কী ছিল না এই আর্ধে? শুরুটাই হল ভিএআরের ব্যবহার করে পর্তুগালকে পেনাল্টি দেয়ার মাধ্যমে। নিজের আদায় করা পেনাল্টিটি নিতে গিয়েছিলেন প্রথম দু ম্যাচে উড়তে থাকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কিন্তু রোনালদোকে হতবাক করে দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় পেনাল্টিটি রুখে দেন প্রথমার্ধে নড়বড়ে দেখানো আলীরেজা। সে হতাশা থেকেই কি না কে জানে, বিক্ষিপ্ত খেলা শুরু করে পর্তুগাল। আর ইরানও বেশ ভাল করে চেপে ধরে তাদের। কিন্তু পোড় খাওয়া ডিফেন্ডার পেপের নেতৃত্বে থাকা জমাট পর্তুগিজ রক্ষণকে কিছুতেই ভাঙতে পারছিল না ইরানিরা। পেনাল্টি মিসের হতাশা থেকেই বোধয় আচমকাই অফ দ্য বল ইরানের এক খেলোয়াড়কে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে বসেন রোনালদো। আরো একবার ভিএআর এর শরণাপন্ন হন রেফারি এনরিক ককারেস। লাল কার্ড যখন ভবিতব্য বলে মনে হচ্ছিল তখন ককারেস হলুদ কার্ড দেখালে বেচে যান রোনালদো। পরের পুরো সময়টাও নিষ্প্রভ কাটে এ পর্তুগিজ তারকার। ইরানের টানা আক্রমণ সাফল্যের মুখ দেখে ম্যাচের একদম শেষ সময়ে। সেডরিকের হাতে বল লাগলে পেনাল্টি পায় ইরান। এ সিদ্ধান্তটিও এসেছে ভিএআরের মাধ্যমে। রোনালদো ভুল করলেও ভুল করেননি আনসারিফাদ। চমৎকার প্লেসিংয়ে প্যাট্রিসিওকে বোকা বানান তিনি। তার অল্প মুহূর্ত পরেই ইরান প্রায় পেয়ে গিয়েছিল নিজেদের কাঙ্খিত গোলটি। কিন্তু …এর শ্যুটটি বারের সামান্য বাইরে দিয়ে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচে পর্তুগাল।
এ ড্রয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হলেও দু আর্ধের দু রকম খেলা পর্তুগালের জন্য টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে কঠিন লড়াই করতে হবে। অপর দিকে এ ম্যাচ ড্র করে বিদায় নিলেও, ইরান মন জয় করেছে সাধারণ দর্শকদের। এ বিদায়ে গ্লানি নেই, আছে গর্ব করার সুযোগ।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : রিকার্ডো কারেজমা (পর্তুগাল)