ব্যালে পাশ্চাত্য দেশের এক ধরনের নৃত্যনাট্য। এই সংগীতে কন্ঠগীতির কোন স্থান নাই। নৃত্যনাট্যের আলোকে সুর কিংবা সুরের আলোকে নৃত্যনাট্য চলে। মঞ্চে একজন কন্ডাক্টরের পরিচালনায় নৃত্যাভিনয় চলে বাদ্য সংগীতের সাথে সাথে।
পশ্চিমা সংগীত বলতে আমরা সাধারণত উত্তর আমেরিকা এবং ব্রিটিশ তথা ইউরোপীয় সংগীতকে বুঝি। সূচনা মুলত গির্জায় ঈশ্বর বন্দনা এবং ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের কাউবয়দের সংগীত থেকে।
পাশ্চাত্যে সপ্তদশ শতাব্দীর জোহান সেবাস্টিয়ান বাখের (১৬৮৫-১৭৫০) অত্যন্ত জনপ্রিয় জি মাইনর ফিউগ ‘দ্য লিটল’। একই সময়ের জর্জ ফ্রিডেরিক হেন্ডেলের (১৬৮৫-১৭৫৯) অমর সৃষ্টি ‘মেসিয়া’ আজও প্রশংসিত এবং অবিকৃত রয়েছে।
ব্যালে মানব শরীরের বিশেষ জটিল কসরতের শিল্পকর্ম। এটি দর্শকদের সামনে রেখে সরাসরি মঞ্চে উপস্থাপিত হয়। পরিবেশনকারীরা তাদের পোশাক, জটিল দৈহিক ভঙ্গি এবং বিভিন্ন ধরনের আলোর প্রয়োগের মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করে তোলেন।
যেহেতু পরিবেশনকারীদের নৃত্যের তালে তালে একটি গল্প বা একটি চিন্তা বা কনসেপ্ট অথবা আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হয়, তাই ব্যালে সংগীত আপনার কাছে যেমন জাদুকরী, উত্তেজনাপূর্ণ বা উদ্দীপক মনে হতে পারে ঠিক তেমনি আবার বিরক্তিকরও মনে হতে পারে। ব্যালের আবার বিভিন্ন ধরণ রয়েছে যেমন–
স্টোরি ব্যালে
নৃত্যের তালে তালে গল্প বলা এই ব্যালেটের বিশেষত্ব। তারা বিষয়ভিত্তিক অভিনয় প্রদর্শন করে। সে অনুসারে অভিনয়ের বিষয়, চরিত্র ও গল্পের শুরু ও শেষ নির্ধারিত থাকে। ‘দ্য নটক্র্যাকার’ এবং ‘দ্য স্লিপিং বিউটি’ উনিশ শতকের বিখ্যাত দুইটি ব্যালে গল্প। ক্লাসিক গল্প এবং উপন্যাসগুলির মধ্যে যেমন, ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ এবং ‘দ্য থ্রি মাসকেটিরস’কে ব্যালে সঙ্গীতের গল্পে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
প্লটলেস ব্যালে
এতে কোন নির্ধারিত গল্প থাকে না। পরিবেশনকারীরা তৎক্ষণাৎ নিজেদের কসরত প্রদর্শন করে সংগীতের ব্যাখ্যা করে থাকেন। এ সময়ে তারা বিশেষ প্রতিচ্ছবি তৈরি করেন বা অভিনয়ের মাধ্যমে গল্প বলতে চান অথবা তারা মাঝে মাঝে দর্শকদের আবেগ অনুভূতিতে তীব্র দাগ ফেলতে চান। কোরিওগ্রাফার জর্জ বালাঞ্চাইন ছিলেন প্লটলেস ব্যালেটের একজন শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। গল্পের পাশাপাশি ব্যালেতে নৃত্যশৈলীরও বিভিন্নতা রয়েছে যেমন–
ক্লাসিক্যাল ব্যালে
ক্লাসিকাল ব্যালে হচ্ছে ব্যালের আদিরূপ, যদিও উনিশ শতকে এসে ক্লাসিক্যাল ব্যালে তার সর্বোচ্চ মাত্রা পায়। এ সময়ে রাশিয়ার ‘মেরিয়াস পেটিপা’ এবং ‘লেভ ইভানোভ’-এর মতো সৃষ্টিশীল শিল্পীরা ব্যালের ক্যালিগ্রাফি করতে শুরু করেন, ফলে ব্যালের জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ‘মেরিয়াস পেটিপা’কে ক্লাসিক ব্যালের জনক বলা হয়। ক্লাসিক্যাল ব্যালে আবার প্রধানত ৪টি ধারায় বিভক্ত- রাশিয়ান ব্যালে, ব্রিটিশ ব্যালে, ফ্রেন্স ব্যালে এবং ইতালিয়ান ব্যালে। ক্লাসিক্যাল ব্যালের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে–
- নৃত্যের তালে তালে শিল্পীরা ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ব্যালে নৃত্য প্রদর্শন করে থাকেন।
- ক্লাসিক্যাল পদ্ধতির অনুসরণে এক পা প্রায় শরীর সমান উচ্চতায় ওঠা নামা করাতে হয়।
- ভারসাম্য এবং সমতা বজায় রাখতে হয়।
- ইথার মান রক্ষা করা।
- গল্প এবং উপাখ্যান তুলে ধরার ওপর জোর দেওয়া হয়।
- বিভিন্ন সেট ও প্রথা অনুসরণে ভাগ হয়ে নৃত্য করতে হয়।
নয়া ক্লাসিক্যাল ব্যালে
নয়া ক্লাসিক্যাল ব্যালের যাত্রা শুরু হয় বিংশ শতাব্দীতে। ‘জর্জ বালাঞ্চাইন’ এই নয়া ক্লাসিক্যাল ধারার ব্যালের প্রবর্তন করেন। নয়া ক্লাসিক্যাল ধারার ব্যালেতে রোমান্টিকতার আধিক্য ও আধুনিকতার ছোঁয়া থাকে। এই ব্যালের বিশেষত্ব হচ্ছে–
- এতে নৃত্যের গতি বেশি থাকে, শক্তি প্রদর্শন এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গি থাকে।
- শাস্ত্রীয় ফর্মের সুনিপুণ প্রয়োগ ঘটে।
- অসমতার মধ্যেই এক ধরনের বিশেষ ভারসাম্যের অনুভূতি তৈরি করা হয়।
- এতে কোন উপাখ্যান থাকে না, মাত্র একজন শিল্পী দ্বারাও পরিবেশিত হতে পারে।
- সহজ সেটে পরিবেশিত হয়, নান্দনিকতাপুর্ণ এবং প্রথার অনুসরণ করা হয়।
সমসাময়িক ব্যালে
সমসাময়িক ব্যালে আধুনিক নৃত্য দ্বারা প্রভাবিত। সমসাময়িক ব্যালের বিখ্যাত কোরিওগ্রাফারদের মধ্যে টিভালো থারপ, জিরি কিলিয়ান, পল টেইলর, উইলিয়াম ফর্সাইট এবং ডাইটাইট রোডেনের বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। এই নৃত্যের বিশেষত্ব হচ্ছে–
- ফ্লোর ওয়ার্ক তুলনামূলক বেশি থাকে।
- পায়ের বিশেষ ধরণের কসরত প্রদর্শন করতে হয়।
- একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে শরীরকে ঘূর্ণায়মান করে নৃত্য পরিবেশন করতে হয়।