পৃথক ধর্মের দম্পত্তিরা কয়েক দশক ধরে বলিউড চলচ্চিত্রে অবস্থান করলেও ভারতীয় সমাজে বিষয়টি অতোটা সহজ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথক ধর্মের দম্পত্তিদের বিপদের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যুদ্ধ করতে হচ্ছে সমাজের সাথে। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদ।
তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্ম নির্মূল করার অভিযোগ তুলেছে ডানপন্থী হিন্দুরা। তাদের অভিযোগ মুসলমানরা হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করছে। এ গত বছর কেরালার আদালতে মামলাও ওঠে।
মুসলমান-হিন্দু বিবাহ আন্তঃধর্মীয় সংগঠনগুলোতে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভারতে ২০১৫ সালে ‘অনার কিলিং’র এর পরিমাণ ৮০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এ প্রক্রিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৫১।
‘হিন্দুত্বভা বার্তা’ নামক একটি ফেসবুক পেজ সম্প্রতি মুসলমান-হিন্দু দম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করেছে। এবং সেখান থেকে হিন্দু স্ত্রীদের তার মুসলমান স্বামীকে উপর হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই তালিকায় প্রায় ১০২ জনের নাম রয়েছে। যাদের ফেসবুক লিঙ্কও শেয়ার করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে ফেসবুক পেজটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এতে করে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। একজন মুসলমান পুরুষকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাছাড়া এ বছর জানুয়ারিতে, স্থানীয় জনতার নিপীড়নে ২০ বছর বয়েসী কর্নাটকের এক তরুণী আত্মহত্যা করেছে। তার অপরাধ ছিলো, সে একজন মুসলিম পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
অন্যদিকে তানভী শেঠ নামে একজন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে চিঠি দিয়েছেন পাসপোর্ট অফিসে হেনস্তার শিকার হয়ে। সেখানে সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বামী মুসলমান হওয়ায় তার নাম পরিবর্তন করে নাম ‘গ্রহণযোগ্য’ করতে বলা হয়। সুতরাং দেখা যায়, ইসলাম গ্রহণে মুসলমানরা না বরং বাধ্য করছে স্থানীয় হিন্দু সমাজ।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা’র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে কয়েকজন এরকম পৃথকধর্মের দম্পতিদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, তাদের প্রধান বাধা পরিবার নয়, বরং প্রধান বাধা এসেছে আত্মীয়, প্রতিবেশী এবং সমাজ থেকে। ৩৭ বছর বয়েসী মুসলিম বিজ্ঞানী ওয়াসিম বলেন, আমি যখন আমার পরিবারকে তার সম্পর্কে বলি, সে হিন্দু বলে তারা কিছু মনে করেনা বরং খুশি হয়। কিন্তু প্রধান প্রশ্ন আসে আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে।
সুতরাং দেখা যায়, মুসলমান-হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলমানরাই অধিক বিপদের সম্মুখীন, পরোক্ষভাবে তার সঙ্গীতো বিপদে আছেই। কিন্তু হিন্দু স্ত্রীদের মুসলমান স্বামীকে হত্যার উস্কানি দেয়া পুরুষদের জন্য ভয়াবহ সংকটময় পরিস্থিতির তৈরি করেছে।