আজ রোববার তুরস্কে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলছে। নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান এই নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। অগ্রিম নির্বাচন আয়োজনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়েছে নানাবিধ বিশ্লেষণ। ২০১৯ সালে দেশটিতে এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যদিয়ে পুনর্বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে নিজের ক্ষমতা আরও সংহত করার চেষ্টা করছেন তিনি। গত ১৫ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় রয়েছে তার দল একে পার্টি।
এবারের তুরস্কের নির্বাচন মূলত দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পিপলস অ্যালায়েন্স। এখানে আছে এরদোগানের একে পার্টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ও গ্রেট ইউনিটি পার্টি। অপরটি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স। এছাড়া চারটি দল আছে- শক্তিশালী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি, ফ্যালিসিটি পার্টি, আই পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। নির্বাচনে একটি বড় সুবিধা হল, এরদোগান পিপলস অ্যালায়েন্সের একক প্রার্থী। অন্যরা নিজ নিজ পার্টি থেকে দাঁড়িয়েছেন।
২০১৬ সালের এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরই মূলত নিজের ক্ষমতা সংহত করার এই পদক্ষেপ নেন তিনি। তখন থেকে জরুরি অবস্থায় রয়েছে তুরস্ক। মূলত ২০১৬ সালের অভ্যূত্থানের পর তুরস্কের শাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে। নতুন যুগের নতুন তুরস্কের সংস্কারক হিসেবে এরদোগান আবির্ভূত হন। পার্লামেন্টারি থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমে প্রবর্তিত হয়।
তবে এই ভোটে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে কেন্দ্রীয় বামপন্থী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী মুহাররেম ইন্সের।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। ওই অভ্যূত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত এরদোগান প্রায় হাজারেরও বেশি লোকের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এরদোগান প্রশাসনের সিদ্ধান্তে দেশটিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শনিবার এরদোয়ান এবং মুহাররেম দু’জনকেই বড় ধরনের নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে। শেষ দিনের ওই নির্বাচনী প্রচারণায় দু’জনই একে অপরকে দেশ পরিচালনায় অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচন প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করার উচ্চাভিলাষী নির্বাচন। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী পদকেই বিলুপ্ত করে দিবেন তিনি, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়বে কয়েকগুণ। নতুন একটি ভাইস-প্রেসিডেন্টের পদসৃষ্টি করা হবে। এছাড়াও থাকছে মন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা। এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে প্রেসিডেন্টের। যে কোন সময় চাইলে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করতে পারবেন তিনি। সংসদের থাকছে না কোন মনিটরিং কমিটি। এসব থেকে বিশ্লেষকদের বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে, এই আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে এরদোগান তার ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন।