আর্জেন্টিনা ০-৩ ক্রোয়েশিয়া
রেবিক ৫৩’
মদ্রিচ ৮০’
রাকেটিচ ৯০+১
গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলের লজ্জাজনক ব্যবধানে হারিয়ে ‘৯৮ এর পর প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের নক-আউট পর্ব নিশ্চিত করল ক্রোয়েশিয়া। অপর দিকে আর্জেন্টিনা শিবিরে বইছে শোকের মাতম। ফেবারিট হিসাবে শুরু করা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন এখন সুতোয় ঝুলছে।
• বিশ্বকাপে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া। সে ম্যাচটি আর্জেন্টিনা জিতেছিল ১-০ গোলে
• বিশ্বকাপে এর আগে দক্ষিণ আমেরিকান কোনো দলের বিপক্ষে জয় পায়নি ক্রোয়েশিয়া
• ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এর আগে দু’বার খেলে দু’বারই গোল করেছেন মেসি
• বিশ্বকাপে সর্বশেষ ২২টি শ্যুটের একটিতেও গোল করতে পারেননি মেসি
লাইন আপ :
আর্জেন্টিনা (৩-৪-৩)
ক্যাবেলারো, মার্কাদো, ওতামেন্দি, ট্যাগলেফিকো, স্যালভিও, মাসচারানো, এনজো পেরেজ, অ্যাকুনা, মেসি, আগুয়েরো, মেজা
সাব : আগুয়েরো-হিগুইন, স্যালভিও-পাভোন, এনজো পেরেজ-ডিবালা
ক্রোয়েশিয়া (৪-২-৩-১)
সুবাসিচ, স্ট্রিনিক, ভিদা, লভরন, সিমে, ব্রোজোভিচ, রাকেটিচ, প্রেসিচ, মদ্রিচ, রেবিক, মান্দজুকিচ
সাব : রেবিক-ক্রামারিক, প্রেসিচ-কোভাচিচ, মান্দজুকিচ-করলুকা
প্রথমার্ধ
হারলেই শেষ হয়ে যেতে পারে বিশ্বকাপ স্বপ্ন, এমন সমীকরণকে সামনে রেখে পুরো দলকেই নতুন ছকে সাজিয়ে মাঠে নামান আর্জেন্টাইন কোচ সাম্পাওলি। কিন্তু তার রচিত এ ছকে ক্রোয়াট রক্ষণের চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন রেফারি ইরমাতভ। মাত্র দুটি শ্যুটের বিপরীতে সাতটি ফাউল করেছে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা। কম যায়নি ক্রোয়াটরাও, তারাও করেছে এগারোটি ফাউল। কোনো আর্ধের বয়ানে ফুটবলের বদলে যখন ফাউলের সংখ্যার জিকর করা লাগে তখন বোঝাই যায় ফুটবলটা কেমন খেলা হয়েছে। তবে যা হয়েছে তাতেও এগিয়ে যাবার নিশ্চিত সুযোগ পেয়েছিল দু দলই। সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিলেন পেরেজ। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দিলে গোল করতে না করতে পারার রোগ তাকেও পেয়ে বসলে ফাকা পোষ্টেও বল বাইরে মারার অসামান্য কৃতিত্ব দেখান তিনি। ঠিক ফাকা পোষ্ট না পেলেও গোল করার সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন ক্রোয়াট স্ট্রাইকার মান্দজুকিচও। সিমের বাড়ানো অসাধারন বলটিতে করা তার হেড জালের বদলে আশ্রয় নেয় দর্শকের কাছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় এ আর্ধে একবারও পোষ্টে শ্যুট নিতে পারেননি আর্জেন্টাইন জাদুকর মেসি। তবে সেটি কতটা ক্রোয়াট ডিফেন্ডারদের কৃতিত্ব আর কতটা সাম্পাওলির নতুন ছকের তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। কারণ, নতুন এ ফর্মেশনে সাম্পাওলি মেসিকে যেখানে রেখে দল সাজিয়েছেন সাধারনত এ পজিশনে খেলতে দেখা যায় না তাকে। নিজের কর্মের গুণে! নাকি খেলোয়াড়দের ব্যর্থতায় কে জানে মেজাজ হারিয়ে হলুদ কার্ডও দেখেছেন আর্জেন্টাইন কোচ। সাম্পাওলির ছক যে কার্যকর হবার বদলে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রটিকেই অনেকটা অকার্যকর করে দিয়েছে তা নিশ্চিত, দেখার বিষয় দ্বিতীয়ার্ধে চিত্রনাট্য বদলায় কি না।
দ্বিতীয়ার্ধ
নিজের ছকেই যেন বাধা পড়লেন সাম্পাওলি। ৩-৪-৩ এর পরীক্ষা তো কোনো কাজে আসেইনি বরং মেসিকে অকেজো করে অনেকটাই নিশ্চিত করে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিদায়। দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি বিকল্প ব্যবহার করেও দেখা পেলেন না গোলের। সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিলেন মেসিই, হিগুইনের দেয়া চমৎকার বলটি জালে জড়াতে পারেননি পাঁচবারের এই বর্ষসেরা। তার আগেই অবশ্য আর্জেন্টিনা হজম করেছে প্রথম গোল। ক্যাবেলারোর শিশুতোষ ভুলের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে নেন রেবিক। এটিকে আর্জেন্টিনার তরফ থেকে ক্রোয়েশিয়াকে উপহারই বলা যায়। গোল খাবার হতাশা থেকে গোল শোধ দেওয়ার প্রচেষ্টার চেয়ে আর্জেন্টাইনদের বেশি মনোযোগ দেখা গিয়েছে ক্রোয়াট খেলোয়াড়দের বল বানিয়ে খেলতে! ক্রোয়াটদের ফাউলে একাধিকবার মনোযোগ হারিয়ে বসচায় জড়িয়েছে আর্জেন্টাইনরা। আর্জেন্টিনা যখন গোলের জন্য মরিয়া তখনই মাদ্রিদ তারকা মদ্রিচের চমৎকার একটি গোলে স্তব্ধ হয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত ক্রোয়েশিয়ার হারের লজ্জায় অশ্রু দেখা দিল গ্যালারিতে বসা ডিয়াগো মারাডোনার চোখে। তাতেও মায়া হয়নি রাকেটিচদের। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহুর্তে আর্জেন্টাইন রক্ষণকে নিয়ে ছেলেখেলা করে ৩-০ গোলের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন রাকেটিচ। তার গোলটিকে চাইলে প্রতিক হিসাবেই ধরা যায়। আর্জেন্টাইন রক্ষণ এমনই যে চাইলেই একে নিয়ে ছেলেখেলা করা যায়। এ হারের দায় কার ওপর চাপাবেন সাম্পাওলি? তিনি সেটি খুজতে থাকুক, ক্রোয়াটরা উন্মাতাল ‘৯৮ এর প্রথমবারের মত নক-আউট নিশ্চিত করার আনন্দে।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : লুকা মদ্রিচ (ক্রোয়েশিয়া)