নেপালে ৮টি খাতে ২.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন

নেপালে ৮টি খাতে ২.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি প্রথমবারের মতো চীন সফরে এসছেন। এ সফরে দু’ দেশের মধ্যে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের ৮টি সমঝোতাপত্রে সই হয়েছে। এর আওতায় চীন সরকার ও দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নেপালে জলবিদ্যুৎ, পানিসম্পদ, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নির্মাণ ও ফলচাষসহ কৃষিখাতে বিনিয়োগ করবে বলে জানা গেছে।

কে পি শর্মার চীন সফরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি-বিশ্লেষকদের মাথায় খেলছে নতুন উদ্দীপনা। নেপালের চীনের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি ভারতীয় বলয় বেরিয়ে প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন তারা। বেশ কয়েক বছর ধরে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, টিভি চ্যানেল বন্ধ করার মতো ঘটনাগুলো ঘটতে দেখা গেছে ভারত ও নেপালের মধ্যে।

তাছাড়া ২০১৫ সালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর নেপাল পুনর্গঠনে চীন এককভাবে সবচেয়ে বড় দাতার ভূমিকা পালন করে। প্রতিদান হিসেবে কাঠমান্ডু বেইজিংয়ের উচ্চাকাংখী ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট’ উদ্যোগে স্বাক্ষর করে। তখন ভারত এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে। দীর্ঘদিন ধরে নেপালে প্রভাব বিস্তার করা ভারত চীনের প্রভাব ঠেকাতে নেপালে বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও এখনো চীনের মতো ব্যয় করতে পারেনি। এর ফলেও ভারত-নেপাল সম্পর্কে ঝিম ধরেছে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পূর্বে সোমবার সংসদে এক ভাষণে ওলি নেপালে আর্থিক সহায়তার জন্য চীনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের এজেন্ডা হচ্ছে উন্নয়ন সাধন এবং আমার সফরের সময় আমরা মূলত অর্থনৈতিক সহযোগিতার ব্যাপারে জোর দেব।

বেইজিংয়ে পৌঁছে নেপাল দূতাবাসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, তিনি চীন এবং নেপালের আত্মিক সম্পর্ক বোঝাতে শাক্যমুণি ও কনফুসিয়াসের কথা উল্লেখ করেন। আরও বলেন, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য দু’দেশের মধ্যকার সিল্করোড পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।

সফরে তিব্বতের সাথে কাঠমান্ডুর সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবং ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট’-এর অধিনে বিভিন্ন প্রকল্প এবং চীন-ভারত-নেপাল ইকোনমিক করিডোর নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এনার্জি সেক্টরেও বিনিয়োগ নিয়ে কথা হবে বলে জানা গেছে।

সফরের আগে বর্তমান এবং সাবেক নীতি নির্ধারকরা একসাথে বসে মতামত বিনিময় করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। এমন দৃষ্টান্ত বিরল। কিন্তু এই বিরল দৃষ্টান্তই স্থাপন করলেন হিমালয় কন্যা নেপালের নীতিনির্ধারকেরা। ছয় দিনের চীন সফরে যাওয়ার আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন। চীনে কিভাবে নেপালের জন্য সর্বোচ্চ স্বার্থ আদায় করা যায়, সে বিষয়েই তিনি পরামর্শ নেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর এটি ওলির দ্বিতীয় বিদেশ সফর।

শুধু চীন নয়, এর আগে ভারত সফরের সময়েও একই রকম বৈঠকে বসেছিলেন কে পি শর্মা। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাবেকদের সাথে বসেছিলেন আলোচনার টেবিলে।

উল্লেখ্য, গত বছর চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো নেপালে ৮৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছিল। অন্যদিকে ভারত মাত্র ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিতে সক্ষম হয়েছিল। সফরের দ্বিতীয় দিনে এসে স্বাক্ষরিত হয়েছে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের আটটি প্রকল্প। সুতরাং একথা বলাই যায়, বেইজিং এবং কাঠমান্ডু স্থায়ী শান্তি ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে নতুন বন্ধু হতে যাচ্ছে।