মেক্সিকো সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা

মেক্সিকো সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা

সেন্ট্রাল আমেরিকার এল সালভাদর থেকে টেক্সাস সীমান্ত হয়ে আমেরিকার মাটিতে অভিবাসন প্রত্যাশী কয়েক হাজার শরণার্থীকে সীমান্তে আটকে দিয়েছে আমেরিকান বর্ডার সিকিউরিটি গার্ড। আমেরিকান সরকারে এই নিষ্ঠুর নীতির সমালোচনায় সারা দুনিয়ার বিভিন্ন সংস্থা সোচ্চার হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা বাহিনী বাবা-মা থেকে বাচ্চাদের আলাদা করে ফেলছে। এসব বাচ্চাদের বয়স ৮ মাস থেকে শুরু করে ১৬ বছর পর্যন্ত। বাবা-মাকে আইন ভঙ্গের অভিযোগে পাঠাচ্ছে ফেডারেল প্রিজনে আর বাচ্চাদের রাখছে ভিন্ন ডিটেনশান ক্যাম্পে। বাচ্চাদের লম্বা সময় রাখার জন্য তৈরি করেছে তাবু দিয়ে ঘেরা অঞ্চল।

এই পর্যন্ত প্রায় ২৩০০ শিশুকে তারা বাবা-মা থেকে আলাদা করে নিয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি এক শিশু যার বয়স ৮ মাস। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ারত অবস্থায় ছিল, তাকেও মা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানেন এই ধরনের সেপারেশান কতটা হৃদয়বিদারক হতে পারে, তাই তারা সুইসাইড এড়াতে বাচ্চাদের পায়ের জুতার লেইস পর্যন্ত সরিয়ে ফেলছে। এক বাবা এই সেপারেশান সহ্য করতে না পেরে ইতোমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন।

অভিভাবক থেকে শিশুদের আলাদা করার এই নীতি স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমেরিকার বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি, ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান, মিডিয়া, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত এই নীতির বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে খুবই সোচ্চার। দুইজন সাবেক ফার্স্ট লেডি, লরা বুশ আর রজেলিন কার্টার, ফ্যামিলি সেপারেশানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসন প্রার্থীদের একাংশ

রিপাবলিকান সরকার তাদের ইমিগ্রেশান আইন প্রয়োগে জিরো টলারেন্স পলিসি গ্রহণ করেছে। আইন পুরনো হলেও, পরিবারকে আলাদা করার এমন নীতি এর আগের কোন সরকার গ্রহণ করেনি। কেন এমন নিষ্ঠুর নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে তা খুঁজতে গিয়ে মোটা দাগে তিনটি কারণ উল্লেখ্য করা যায়।

এক. বর্ণবাদী রিপাবলিকান সরকার ভিন্ন বর্ণের মানুষের আমেরিকায় নতুন করে স্থায়ী ভাবে বসবাসের ঘোরবিরোধী।

দুই. ট্রাম্প তার নির্বাচনকালীন সময় থেকেই মেক্সিকো-আমেরিকার সীমান্তে ওয়াল তুলে সেন্ট্রাল আমেরিকান নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশে বাধা প্রদান করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সমর্থকদের মাঝে তা খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু সেই ওয়ালের জন্য যে বাজেট দরকার তা ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যানরা পাশ করছেন না কিছুতেই। ট্রাম্প চাচ্ছেন বাচ্চাদের আলাদা করে, সেই দায়ভার ডেমোক্রেটিকদের ওপর চাপিয়ে তাদের চাপে ফেলে ওয়াল তৈরির বাজেট আদায় করে নিতে।

তিন. ট্রাম্প সরকার চাচ্ছে সেন্ট্রাল আমেরিকানরা যেন এভাবে নিজেদের বাচ্চাদের থেকে আলাদা হওয়ার ভয়ে আর কিছুতেই আমেরিকার দিকে পা না বাড়ায়।

যেহেতু ট্রাম্প খুব জোর গলায় বলছে এই আইনের জন্য ডেমোক্রেটরা দায়ী, যদিও তা সত্য নয়, ডেমোক্রেটরা তাই ফ্যামিলি সেপারেশানের বিরুদ্ধে গত পরশু কংগ্রেসে নতুন বিল উত্থাপন করেছেন। যাতে স্বাক্ষর করেছেন প্রত্যেক ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান, এখন অপেক্ষা করছে রিপাবলিকান কংগ্রেসদের স্বাক্ষরের জন্য।

রিপাবলিকান ট্রাম্প এখন ক্ষমতায়। কংগ্রেসের উভয় হাউস এখন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইচ্ছে করলেই তারা এমন অমানবিক নীতি থেকে সরে আসতে পারে, কিন্তু তারা তা করছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রিপাবলিকানরা বাচ্চাদের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

যারা নিজের দেশের বাচ্চাদের জন্য কেয়ার করে না, তারা অন্য বাচ্চাদের জন্য সহানুভূতিশীল হবে সেটা চিন্তাও করা যায় না। হোক তা মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকান সীমান্ত, কিংবা নিজ দেশের অভ্যন্তরে।