এ নোট ফ্রম লন্ডন: ক্যান্সার-আক্রান্ত ইরফানের খোলাচিঠি

এ নোট ফ্রম লন্ডন: ক্যান্সার-আক্রান্ত ইরফানের খোলাচিঠি

ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন লন্ডনে। এ বছর মার্চে অগণিত ভক্তকে টুইট করে জানিয়েছিলেন তার অসুস্থতার কথা। আর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সময় হলে শারীরিক অবস্থা জানাবেন। প্রতিশ্রুতি পালন করলেন তিনি। ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে দেয়া এক খোলাচিঠিতে অকপটে বললেন তার অসুখ এবং চিকিৎসার কথা। জানালেন, তার শরীরে বাসা বেঁধেছে বিরলতম হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রিন ক্যানসার। ‘এ নোট ফ্রম লন্ডন’ শিরোনামে তিনি লেখেন:

“বেশ কিছুদিন হলো জানতে পেরেছি আমার হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রিন ক্যান্সার হয়েছে। আমার শব্দকোষে একেবারে নতুন এই শব্দবন্ধ। জানতে পেরেছি এই রোগ এতটাই বিরল যে এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই। অতএব এক অনির্দিষ্ট ট্রায়াল অ্যান্ড এরর গেম-এর মধ্যে দিয়ে এগিয়েছি আমি। এতদিন আমি কিন্তু এক অন্য দুনিয়াতে বুঁদ হয়েছিলাম।

আমি নিজের স্বাধীন জীবনে ফিরতে মরিয়া। আমি চাই না কোনও ভয়–আতঙ্ক আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখুক। এক সময় আমি স্বপ্ন দেখি একটি দুরন্ত গতির ট্রেনে আমি চড়ে বসেছি। সেখানে আমার স্বপ্ন, ইচ্ছে, পরিকল্পনা, উদ্দেশ্যগুলো ভিড় করে আসে। ঠিক তখনই আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে কেউ বলে, আপনার গন্তব্য এসে গিয়েছে। যেখানে আমি কখনও পৌঁছতে চাইনি। আমার তখন মনে হয় অতল সমুদ্রে একটি খড়ের মত ভেসে রয়েছি আমি। আর প্রাণপণে উত্তাল ঢেউ থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। ঠিক তখনই ঘোর কেটে যায়। আর শুধু যন্ত্রণা অনুভব করি। সে কষ্ট যেন সৃষ্টিকর্তার থেকেও বিশাল।

হাসপাতালে ঢোকা মাত্র আমি ক্লান্ত, অবসন্ন, আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। শুধু বুঝতে পারি হাসপাতালের সামনেই রয়েছে লর্ডস স্টেডিয়াম, যাকে আমি শৈশবের মক্কা বলে মনে করতাম। কষ্ট ভুলে গিয়ে আমি তখন দেখতে পাই একটি পোস্টার সেখানে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন ভিভিয়ান রিচার্ডস। তার পরে আর কিছু হয় না। আমি বুঝতে পারি যেই সেই জগতের অস্তিত্ব কখনও ছিলই না।

হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয় জীবন আর মৃত্যুর যুদ্ধে মধ্যে শুধু একটি রাস্তার তফাত রয়েছে। একটি দিকে হাসপাতাল আর একদিকে স্টেডিয়াম। মনে হয়, না হাসপাতাল না স্টেডিয়াম কোনওটারই অংশ নই আমি। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। যেটা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। এই কষ্ট আমায় কোথায় কতদূর নিয়ে যাবে আমি জানি না। আট মাস, না চার মাস না চার বছর?’

প্রথমবার বুঝতে পারলাম মুক্তির আনন্দ। যেন জীবনকে সঠিক অর্থে চিনতে পারলাম। হেরে গেলে চলবে না। কিছুতেই চলবে না। লড়তে হবে।”