১৪ জুন রাশিয়া-সৌদি আরবের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা ওঠা ফিফা বিশ্বকাপের সকল দলের প্রথম ম্যাচ শেষ হচ্ছে সেনেগাল-পোল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে। ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে বিশ্বকাপের ফেভারিট দলগুলো, বিশ্ব মাতানো সব খেলোয়াড়রা। তবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বিশ্বের সেরা তিন তারকা মেসি, রোনালদো এবং নেইমার কেমন করলেন তা নিয়ে। একই সাথে আলোচনা হচ্ছে টুর্নামেন্টের সামনের ম্যাচগুলোতে তারা কেমন করবেন সেটি নিয়েও।
লিওনেল মেসি
প্রথম ম্যাচে নিঃসন্দেহে ফ্লপ এই আর্জেন্টাইন জাদুকর। এগারোটি শ্যুট নিয়ে একবারের জন্যও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি আইসল্যান্ডের জালে। একই সাথে বাড়তি হিসাবে মিস করেছেন পেনাল্টিও। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো জ্বলে ওঠার ঠিক পরের ম্যাচেই এমন পারফরমেন্স যে মেসিকে চাপে ফেলে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। আইসল্যান্ডের সাথে ড্র শুধু মেসিকেই না চাপে ফেলে দিয়েছে আর্জেন্টিনাকেও। কারণ, গ্রুপের অপর দুই প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপের প্রায় নিয়মিত মুখ নাইজেরিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া। এদের যে কারো বিপক্ষে পা হড়কালেই বিপদে পড়ে যাবে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন। যার দায় অনুমিতভাবেই পড়বে মেসির ওপর।
বড় মঞ্চের সহজাত পারফর্মার মেসি। সুতরাং এক ম্যাচ শেষেই তার শেষ দেখে ফেলাটা হবে বোকামি। গত বিশ্বকাপেই সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার হাতে নেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। তাই, মেসি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না, এখনই এমন রায় দেয়াটা হবে চরম বোকামি।
মেসির ক্ষেত্রে নেতিবাচক হতে পারে দল হিসাবে আর্জেন্টিনার তার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা। রোনালদোর দলকে চ্যাম্পিয়ন করার চাপ নেই, কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবেই আর্জেন্টিনা টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট এবং চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটাকে আর্জেন্টাইনরা দেখবে ব্যার্থতা হিসাবেই। এই চাপ সামলেই পারফর্ম করতে হবে মেসিকে। নেগিটিভ পয়েন্ট হল স্নায়ুক্ষয়ি মুহুর্তগুলোতে ঠিক জ্বলে উঠতে পারেননা তিনি। আর গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া বা নাইজেরিয়া যে কারো বিপক্ষেই পা হড়কালে এমন মুহুর্তের মুখোমুখি হতে পারে তাকে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
প্রথম ম্যাচ শেষে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন রোনালদো। স্পেনের মত দলের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করে দলকে এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। স্পেনের মতন একটি দলের বিপক্ষে হ্যাট্রিক যে আত্মবিশ্বাসে বাড়তি রসদ যোগাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একই সাথে মুগ্ধকর ছিল তার হ্যাট্রিকের ধরনটিও। ম্যাচের শেষের দিকে ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিকে যেভাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়াকে পরাস্ত করেছেন সেটি ছিল দেখার মত। একই সাথে থাকছে টানা চারটি বিশ্বকাপে গোল করার অনন্য নজির ছোঁয়ার বিষয়টিও।
সামনের ম্যাচগুলোতে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ইরান এবং মরক্কো। সন্দেহ নেই এ দু দলের বিপক্ষে ফেভারিট হিসাবেই শুরু করবে পর্তুগিজরা। রোনালদো যে ফর্মে আছেন তাতে মরক্কো কিংবা ইরান খুুব বড় কোনো বাধা হবার কথা না।
শঙ্কার দিকটি হচ্ছে পর্তুগাল দলটি পুরো মাত্রায়ই রোনালদো নির্ভর। একক কারো ওপর নির্ভরশীল দলগুলোর জন্য বিশ্বকাপের মতো আসর একটু কঠিনই। এ বিশ্বকাপই তার বড় প্রমাণ। সুতরাং কোনো দিন যদি তিনি জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হন সেটি পর্তুগালের জন্য বেশ বড় বিপদের কারণই হতে পারে। আর এই চাপটিই একটি নেগেটিভ পয়েন্ট হতে পারে রোনালদোর জন্য।
নেইমার
সময় যখন খারাপ যায় সব দিক দিয়েই যায়। ম্যাচের পারফরম্যান্সের সাথে সমান তালে সমালোচনা হচ্ছে তার নতুন হেয়ার স্টাইলেরও! ইনজুরি থেকে ফিরে বিশ্বকাপের মতন আসরে প্রথম ম্যাচেই পারফর্ম করা কঠিনই। নেইমারের বেলায় কেউ সেটা ধর্তব্যেই আনছেন না। হালে পানি পাচ্ছে না, অ্যালান শিয়েরার পর বিশ্বকাপে রেকর্ড সংখ্যকবার ফাউলের শিকার হবার ঘটনাটিও। এরমধ্যে কয়টি ফাউল আর কয়টি ডাইভ তা নিয়ে বরং চলছে গবেষণা। তিন তারকার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় বোধয় তিনিই রয়েছেন।
নেইমারের জন্য আশার দিক হচ্ছে দলীয় ভাবে ব্রাজিলের শক্তি। এটা সত্য যে, প্রথম ম্যাচে তা খুব একটা প্রতিফলিত হয়নি, কিন্তু দলটি যখন ব্রাজিল তখন প্রত্যেকটি দিনই বাজে যাবে ভাবাও বোকামি। বাকি দুজনের চেয়ে তার পাশে রয়েছেন বেশ কজন কার্যকর খেলোয়াড় যারা বেশ ভালোই সহায়তা করার ক্ষমতা রাখেন নেইমারকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে।
নেইমারের ক্ষেত্রে শঙ্কার দিকটি হচ্ছে তার ইনজুরি প্রবণতা। এবং সদ্যই ইনজুরি থেকে ফিরে বিশ্বকাপের চাপ। একই সাথে ডাইভ দেয়ার প্রবণতা তাকে যেমন সমালোচিত করেছে তেমনি ছন্দ নষ্ট করে দিচ্ছে ব্রাজিলের স্বাভাবিক খেলার।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ শেষে অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশ ভালে ব্যবধানেই এগিয়ে রয়েছেন রোনালদো। মেসি এবং নেইমার যে এটিকে সহজভাবে নেবেন না তা বলাই বাহুল্য। তিন জনের ত্রিমুখী লড়াই জমে উঠলে লাভ ফুটবলেরই, বাড়তি রঙ্গ পাবে বিশ্বকাপও।