সোশ্যাল না আনসোশ্যাল

সোশ্যাল না আনসোশ্যাল

‘এই আজ তুমি কি খেয়েছ?’, ‘কি করছ এখন?’, ‘কিম্বা কেমন আছো?’… হ্যাঁ এরকমই তো হয় আমাদের ওপাড়ের সবুজ বাতির বন্ধুরা। ওই যে মাকড়সার জালের মতো যা আমাদের রাত দিন জড়িয়ে রেখেছে। ক্রমাগত খেয়ে ফেলছে আমাদের মূল্যবান সময়। আমরা ক্রমেই যন্ত্রমানুষ হয়ে উঠছি। আর ভুলে যাচ্ছি আমাদের চারপাশ, আমাদের পাশের মানুষটিকেও। প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের এই যুগে এসে মানুষ ক্রমাগত সম্মিলিত হচ্ছে ইন্টারনেটের ছায়ায়। পরিশ্রমী মানুষ তার মেধা-মননের একটা বড় অংশের প্রয়োগে তৈরি করেছে ইন্টারনেট নামক এক চমকপ্রদ পরিসর। যে পরিসরে নতুন যুক্ত হওয়া একটি ধারার নাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আর এই মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ, ইনস্টাগ্রাম এর মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো সৃষ্টি করেছে নতুন একধরনের সামাজিক বাস্তবতা। এই বাস্তবতা এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, আমাদের নিত্যকার সামাজিক সম্পর্কগুলোও আর সেই মানবীয় সম্পর্কে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক। আবার অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক সম্পর্কগুলোতে পরিলক্ষিত হচ্ছে মানবিকতা ও যান্ত্রিকতার দ্বৈত-সংস্করণ। যে সংস্করণের একদিকে ভার্চুয়াল রূপ আর অন্যদিকে সামাজিক রূপ।

মানুষের দৈনন্দিন যে প্রয়োজন যেমন—মানবীয় সম্পর্ক, সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রায় সব বিষয়েরই সমন্বয় ঘটছে এই মাধ্যমগুলোতে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর এই নব্য ধারা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা রয়েছে। এক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে যে, এই মাধ্যমগুলো নামে সোশ্যাল হলেও কাজে কতটুকু সোশ্যাল কিংবা মানুষকে কতটুকু সোশ্যাল করতে পেরেছে। নাকি কেবল সোশ্যাল করবার নামে অন্যকিছু? তাই, আজকের এই আলোচনায় প্রাযুক্তিক সফলতা-বিফলতাকে গৌণ করে এর সামাজিক ও মনস্তাত্বিক প্রভাবকে মূখ্য করে দেখার চেষ্টা করব। সেই সাথে চেষ্টা করব মাধ্যমটির শ্রেণিগত অবস্থান, রাজনৈতিক-অর্থনীতি ও সমাজে প্রতিনিধিত্বশীলতার বিষয়টিও সমান গুরুত্ব দিতে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি অনলাইন সেবা, প্ল্যাটফর্ম তথা ওয়েবসাইট, যা মানুষে মানুষে গড়ে ওঠা সামাজিক সম্পর্কের নেটওয়ার্ক; যেখানে তারা তাদের আগ্রহ ও কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন ঘটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারী অবধারিতভাবে তার ব্যক্তিগত তথ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ উপস্থাপন করে থাকেন। অনলাইন কমিউনিটি সার্ভিসগুলোও (অনলাইন নিউজ পোর্টাল, চ্যাটরুম, ফোরাম, ওয়েব-লগ প্রভৃতি) মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত হয়। কিন্তু বৃহৎ অর্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক সার্ভিস। অন্যদিকে অনলাইন সার্ভিস হলো গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। সোজা কথায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক প্রকার বিশেষায়িত ওয়েবসাইট; যেখানে ব্যক্তি তার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আবেগ-অনুভূতিসহ মানবীয় বিষয়গুলো তার নিজস্ব নেটওয়ার্কে তুলে ধরার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কতটা আমরা ব্যবহার করতে পারছি এই সোশ্যাল সাইটগুলোকে। নাকি এর খপ্পরে পড়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি মানবিকতা। কিংবা হারিয়ে ফেলছি নিজস্বতা। যেমন আমরা কি খাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি, কার সঙ্গে রিলেশনে জড়াচ্ছি তার সবকিছুই তুলে দিচ্ছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আদতে আমরা প্রত্যেকেই হয়ে উঠছি এক একটা গণমাধ্যম। সকাল হলেই তুলে ধরছি প্রত্যেকটা খুটিনাটি। জীবনের সুখ-দুঃখ অনুভূতিগুলোও। আর এক্ষেত্রে আমরা কিন্তু সবথেকে বড়ো সমস্যায় ভুগছি তা হল ভাষাগত সমস্যা। সময়ের অভাবে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই শব্দ ছোটো করে দিচ্ছি। শুভেচ্ছা জানানো, কিম্বা হাসছিও লিমিটে। এক্ষেত্রে শুধু যে ভাষাই সংক্ষেপিত হচ্ছে তা নয়। আমাদের সম্পর্কগুলোও সংক্ষেপ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেমন-বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জন্মদিনে wish করতে HBD, উচ্চস্বরে হাসতে LOL, অভিবাদন জানাতে Congratz এর মতো শব্দ ব্যবহার করছে। একটু ভাবুন, আগের দিনে আমরা কারও জন্মদিন মনে রাখতে তারিখটি ডায়েরিতে লিখে রাখতাম, সাথে দিনটিকে ঘিরে থাকত নানা পরিকল্পনা, প্রস্তুতি; এর সবই হতো প্রিয় মানুষটির অগোচরে। পছন্দের মানুষটিকে Wish করা, তার জন্য উপহার কেনা, এগুলো ছিল বিশেষ এক আবেগ-উত্তেজনার বিষয়। কিন্তু ভার্চুয়াল সংস্কৃতির যুগে এসে জন্মদিনকে ঘিরে থাকা সেই আবেগ-উৎকন্ঠাগুলো কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। আমরা কেউই এখন আর ঘটা করে কাউকে জন্মদিনে উইশ করি না। কাউকে Wish করতে তার ওয়ালে শুধু HBD লিখে দিই। ব্যস, শেষ। এর বেশি কিছু না! ছোট হয়ে এসেছে ভালোবাসার আকার, কাউকে অনুভব করার সীমানা।

সামাজিক যোগাযোগ কমিউনিটিতে ব্যবহৃত এই পরিভাষাগুলো একেবারে নতুন। এটা কোনো প্রমিত ভাষাও নয়, আবার সেলফোন-সংস্কৃতি, বিজ্ঞাপন, এফএম রেডিও’র মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া ভাষাও নয়। তার মানে এই ভাষার জন্মই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বসেন তখন তাকেও কিছু বিশেষ ভাষা ব্যবহার করতে হয়। ফেসবুক বা অনলাইনে ব্যবহৃত শব্দগুচ্ছ বা ভাষা আমাদের বাস্তবতার ভাষাগুলোকেও বদলে দিতে চায়। আজকের এই দিনে এসে আমরা হামেশাই প্রয়োগ করছি অনলাইনের সেই ভাষাগুলো। যা কিনা আমাদের বাস্তবতার ভাষাগুলোর সাথে প্রায় সমার্থক স্বরে উচ্চারিত হচ্ছে। ব্যবহারের আধ্যিকের কারণে আজকাল অনেকেই বাস্তব জীবনে অনলাইনে ব্যবহৃত এই ভাষাগুলোর ভুল প্রয়োগও করছেন। ফলে বাস্তবের ভাষার মধ্যে আসছে পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে মানুষের ভাষা। আবির্ভাব ঘটছে এক মিশ্র প্রকৃতির ভাষা।

আমরা একবার সেই জায়গাটার কথা ভাবি। যেখানে সচেতন, অসচেতন বা অবচেতনভাবে কিছু একটা পরিবর্তন কিন্তু হচ্ছে। সেটা হোক ইতিবাচক বা নেতিবাচক। নিয়মিত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে- এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। আর এই আত্মকেন্দ্রিকতার উদয় হয় যখন ব্যবহারকারীর মাঝে আসক্তি কাজ করে। এই আসক্তি হলো তার (ব্যবহারকারীর) বন্ধুদের সাথে মিথস্ক্রিয়া, বিভিন্ন কাহিনী, গল্প শেয়ার করার আসক্তি। ফলে ব্যক্তি ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করেন অনলাইনে, হয়ে পড়েন আত্মকেন্দ্রিক। পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। কারণ ভাল লাগা, না-লাগা, প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, উচ্ছ্বাস, অনুভূতি সবকিছুরই শেয়ার চলছে এই সামাজিক মাধ্যমে। তার ফলে বাড়ছে একাকীত্ব। নিজের জগত আরও গুটিয়ে চলে আসছে একটা ঘরের মধ্যে।

এছাড়াও অনেক সময় প্রেম, বন্ধুত্ব, বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোও কিন্তু এই মাধ্যমেই হচ্ছে। তাই সামাজিক মাধ্যমকে শুধু যে ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করা সমীচীন হবে না। দৈনন্দিন বাস্তবতায় প্রযুক্তির উৎকর্ষে এসে মানুষের সংস্কৃতিতে জন্ম নেয়া আরেক সংস্কৃতির নাম সাইবার সংস্কৃতি। প্রযুক্তি-নির্ভর এই সংস্কৃতির যে গতি তা আমাদের চিন্তা-চেতনা, অভ্যাসেও প্রচণ্ড অনুরণন তৈরি করছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের সব ক্ষেত্রেই এই গতির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ। ফলে আমরা কেমন যেন একটা যান্ত্রিক সময়ে এসে পড়েছি। উঠতে-বসতে, খেতে-ঘুমাতে সব ক্ষেত্রেই যন্ত্র আর যন্ত্র।

কাছের বন্ধুদের মধ্যেও কাউকে দেখছি চা খাওয়ার ফাঁকে তার ফেসবুকের মেসেজ ইনবক্সটি চেক করতে, কাউকে বা তার স্ট্যাটাস আপডেট করতে। প্রযুক্তি মূখ্য হয়ে ওঠায় চা খেতে খেতে বন্ধুটির সাথে দেয়া অনাবিল আড্ডাটি গৌণ হয়ে পড়েছে। অনুমতি না নিয়ে ফটো ট্যাগ করে দেয়ায় সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিও শত্রু হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখন মোবাইল ফোনের সাথে সমান গুরুত্বে ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

প্রযুক্তি মাত্রই তার ভাল-মন্দ দুটো দিক থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বেলায়ও একথা প্রযোজ্য। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ল্যারি ডি রোজেন আমেরিকাতে পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানান, যেসব টিনএজার ফেসবুক ব্যবহার করে, তারা আত্মপ্রেমিক বা আত্মবিলাসী হলেও যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন না, তাদের চেয়ে অনেক বেশি সহমর্মী। এই সহমর্মিতা তারা বাস্তব জীবনেও প্রয়োগ করছে। আবার ইতিবাচকতার বিপরীত চিত্রও অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে। এই জরিপ কিন্তু ইঙ্গিত দেয় যে, শারীরিক ক্ষেত্রে টিনএজার ও তরুণ প্রজন্ম নিয়ে ঝুঁকিটা একটু বেশিই। কারণ এরকম আরও একটি গবেষণায় টিনএজার ও তরুণদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে যারা বেশি সময় ফেসবুকে কাটায়, তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বাইপোলার ডিজ-অর্ডার বেশি।

কিন্তু একদিকে যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের সামাজিক করে তুলছে পাশাপাশি অসামাজিকও করে তুলেছে। এই মাধ্যমের অপব্যবহারই শুধু দায়ী নয়, আমাদের ব্যক্তি জীবনও অনেকটা দায়ী। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির ফলে আমাদের একটা নির্বোধ যুব গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। এদের ভার্চুয়াল লাইফ ছাড়া কোন চিন্তা-ভাবনা নেই, আবেগ-অনুভূতি নেই, দাদা মৃত্যু শয্যায় বা বন্ধুর কবর খুড়তে গিয়ে সেলফি তুলছে, রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সারাদিন ঘুম পড়ছে, ভাটা পড়ছে লেখা-পড়ায়।
প্রযুক্তির সাথে অভিযোজিত হতে হতে মানুষ এতটাই প্রযুক্তি-ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছে যে, প্রযুক্তি ছাড়া যেন জীবন অচল। সম্প্রতি আমেরিকাতে পরিচালিত একটি গবেষণা ঠিক তেমন তথ্যই দিচ্ছে। ওয়েকফিল্ড নামক এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ কলেজ ছাত্র কোনো রকমের প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া অধ্যয়ন করতে পারে না, আর ৩৮ শতাংশ ছাত্র একটানা ১০ মিনিটের বেশি সময় তাদের ল্যাপটপ, ফোন বা অন্যান্য মাধ্যম চেক না করে থাকতে পারে না। এই প্রযুক্তি-নির্ভরতা এমন পর্যায়ে গেছে যে তা- খাদ্য, বস্ত্রসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের বাস্তবতায় ইন্টারনেট এখনো সর্বসাধারণের হাতের নাগালে না এলেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো ব্যবহারের মাত্রা।

ব্যস্ততার মাঝেও বন্ধু-বান্ধবদের খোঁজ-খবর মেলে হাতের নাগালেই। অনেক সময় দীর্ঘদিন আগে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটির সাক্ষাৎ পাওয়া যায় মুখপুস্তকের পাতায়। মানুষে-মানুষে বন্ধুত্বের মেলবন্ধন আজ অনেক সহজ। আর তাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অপূর্ব বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ফেসবুক নামক অদ্ভুত এই বই এর পাতাতে মা-বাবা, ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী-শ্রোতা, উৎপাদক-ভোক্তা সবাই বন্ধু। শুধু তাই নয়, অনেক সময় ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি অনেকে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে বসেন। অনেকেই আবার এইসব গ্রুপের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করছেন, চুটিয়ে মনোনিবেশ করছেন ভার্চুয়াল আড্ডায়।

কোনোরকম আসক্তি ভাল না। আসক্তি হলো রোগের লক্ষণ। আমরা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে যাই তখন সেখান থেকে ভালোর চেয়ে মন্দ ফল বেশি পাব এটা খুবই স্বাভাবিক। ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলো পরিবার ব্যবস্থায় ধ্বস নামাতেও সাহায্য করছে। এই মাধ্যম যুবসমাজ ও পরিবারের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল আইনজীবী জানিয়েছেন, দেশটির শতকরা ২৫ ভাগ ডিভোর্সের ঘটনা বা মোট ডিভোর্সের এক পঞ্চমাংশের জন্য দায়ী ফেসবুক। যুবসমাজের অনেকেই নিজ জীবনের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুকের পাতায় তুলে ধরেন। এর ফলে অনৈতিক ও গোপন সম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ হয়। সুযোগ সন্ধানীরা এসব তথ্যের অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে ধোঁকাবাজি করে মানসিক যন্ত্রণার কারণ সৃষ্টি করে। ফেসবুক যাদের ছোট্ট জীবন থেকে অনেকটা সময়  নষ্ট করে দিয়েছে, তারা একসময় হতাশা আর অসুখী জীবনের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। তখন আর কিছুই করার থাকে না। চলমান ধারাভাষ্যের মতো প্রতি মুহূর্তে যারা নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে থাকেন, যা অন্যের জানার দরকার নেই। একটা সময় ব্যক্তি মানুষের এই সুক্ষ্ম অনুভূতিগুলো আর তার নিজের ব্যক্তিগত থাকে না, যা নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই ক্ষেত্রে সমাধানের একটা রাস্তা নিতে হবে আমাদেরকেই। শুধুমাত্র প্রযুক্তি-বান্ধব হলেই তো হল না। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠুক আমাদের সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার মাধ্যম, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করার স্থান, বাঙালির সংস্কৃতি বিকাশ সাধনের ভার্চুয়াল জগত, আসক্তি নয় সদ্বব্যবহার হোক এই মাধ্যমের, এটাই কামনা করি।