জার্মানি ০ – ১ মেক্সিকো
লোজানো ৩৫’
২০১৮ বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন দেখল বিশ্ব। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ০-১ গোলে হেরে গিয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। জার্মানিকে হতভম্ভ করে দেয়া গোলটি করেছেন পিএসভি আইন্দোভেন তারকা লোজানো।
জার্মানি (৪-২-৩-১)
নয়্যার, কিমিচ, বয়েটাং, হামেলস, প্লাটেনহার্ড, খেদিরা, ক্রুস, মুলার, ওজিল, ড্রেক্সলার, ওয়ার্নার
সাব : খেদিরা-রয়েস, প্লাটেনহার্ড-গোমেজ, ওয়ার্নার-ব্রান্ডট
মেক্সিকো (৪-২-৩-১)
ওচোয়া, গ্যালার্দো, মরেনো, হুগো আয়ালা কাস্ত্রো, সালসেদো, গুয়ারদাদো, হেরেরা, লজানো, ভেয়া, লেয়্যুন, হার্নান্দেজ
সাব : ভেয়া-আলভারেজ, লোজানো-জিমনেজ, গুয়াদরাদো-মার্কেজ
প্রথমার্ধ
ইতিহাস, দলের নাম, বিশ্বকাপের ইতিহাস; সবদিক বিবেচনাতেই মেক্সিকোর চেয়ে ঢের এগিয়ে থেকে মাঠে নেমেছিল বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তবে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই আক্রমণ করে জার্মানিকে যেন একটি প্রচ্ছন্ন হুমকিই দিয়েছিল মেক্সিকানরা। তার ঠিক পরের মিনিটেই ওয়ার্নার যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন মেক্সিকান হুংকার। প্রথম দু’মিনিটের চিত্রনাট্য মেনে পুরো প্রথমার্ধটাই হলো উপভোগ্য। কখনো মেক্সিকো তো কখনো জার্মানি; পালা করে দু দলের খেলোয়াড়রাই পরীক্ষা নিয়েছে বারের নীচের দুই ভরসা নয়্যার এবং ওচোয়ার। বিস্ময়কর শোনালেও একবার দু’বার না, জার্মান পোষ্ট লক্ষ্য করে মোট দশটি শ্যুট নিয়েছে মেক্সিকানরা। যার চারটি ছিল পোষ্টে। শুধু এটুকুই না, বিপদ হতে পারত বেশ কবারই, কিন্তু জার্মান ব্রিগেডের জমাট রক্ষণ ভাঙ্গতে বেগ পাচ্ছিল হার্নান্দেজ, লোজানোরা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে সুযোগ নষ্ট করেছে ক্রুস, ওয়ার্নাররাও। প্রথম ত্রিশ মিনিট দু’ দলই জমজমাট লড়াই উপহার দিলেও ফুটবলের সবচেয়ে কাঙ্খিত ‘গোল’টিই আসছিল না। অবশেষে ধরা দিল অধরা গোল, তবে সেটি জার্মানরা না, সবাইকে চমকে দিয়ে করলেন মেক্সিকান মিড ফিল্ডার লোজানো। পিএসভির এই খেলোয়াড় চমৎকার কাট ইন করে ঢুকে বুলেট গতিতে যেভাবে নয়্যারকে পরাস্ত করলেন, এক কথায় ‘লা জাওয়াব’। গোলটিতে লোজানোর চেয়ে কোনো অংশে কৃতিত্ব না হার্নান্দেজের। তার নিঃস্বার্থ খেলাই সুযোগ করে দিয়েছে মেক্সিকানদের উল্লাস করার। ৩৫ মিনিটে লোজানোর গোল শোধে মরিয়া জার্মানি গোলের সবচেয়ে কাছে গিয়েছিল ৪০ মিনিটের সময়। টনি ক্রুসের মাপা ফ্রি-কিক অবিশ্বাস্যভাবে আঙ্গুলের ছোঁয়ায় বাচিয়ে দিয়েছেন ওচোয়া। ০-১ এ পিছিয়ে থেকেই তাই প্রথমার্ধ শেষ করতে হয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। তবে, একটি দৃশ্য বেশ করেই চোখে পড়েছে, চার বছর আগের জার্মানির সে ধার এ জার্মানিতে বেশ অনুপস্থিত। দুরন্ত গতির বদলে কেমন যেন স্লথ লেগেছে পুরো দলটাকে।
দ্বিতীয়ার্ধ
০-১ গোলে পিছিয়ে থাকার পর যতটা মরিয়া হয়ে মাঠে নামা প্রয়োজন ছিল ঠিক ততটাই মরিয়া দেখিয়েছে জার্মানদের। কিন্তু দিনটা তাদের ছিল না। আক্রমণে জার্মানরা এতটাই তন্ময় হয়ে গিয়েছিল যে একটা সময় রক্ষণ হয়ে পড়েছিল পুরোই ফাকা। ৫৭ মিনিটে হার্নান্দেজের আরো একটি অসাধারণ বলকে যদি কাজে লাগাতে পারতেন ভিয়া তাহলেই হয়ে যেত, ঐ অবস্থা থেকে বল ফেরানো নয়্যারের জন্যও হয়ে যেত কল্পনাসম। সে পরীক্ষার সামনে পড়তে না হলেও জার্মানদের মুখে হাসি ফোটেনি। পরিকল্পনায় বদল এনে খেলার ৬০ মিনিটে লো নামালেন রয়েস কে, তাতেও কোনো কাজ হল না। ৭৯ মিনিটে গোমেজ আর ৮৬ মিনিটে ব্রান্ডটকে নামিয়ে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছেন জার্মান কোচ। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ক্রুস, ওজিল, মুলাররা সবই করলেন শুধু পোষ্টে বলটাই জড়াতে পারলেন না। কখনো নিদারুন ব্যার্থতা, কখনো ওচোয়া কিংবা কখনো মেক্সিকান রক্ষণের দৃঢ়তা; গোল শূন্যই রেখেছে জার্মানির স্কোর কার্ড। সব মিলিয়ে ২৬ টি শ্যুট নিয়েও কাজের কাজটি করতে পারেনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এতে মেক্সির কৃতিত্ব কোনো অংশেই কমে না। বরং, বিশ্ব সেরাদের সাথে পুরোটা সময় যেভাবে টক্কর দিয়েছেন হার্নান্দেজরা, প্রশংসা তাদের প্রাপ্যই। ম্যাচের ৭৪ মিনিটের মাথায় ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গিয়েছেন মেক্সিকান ডিফেন্ডার রাফায়েল মার্কেজ। তৃতীয় খেলোয়াড় হিসাবে পঞ্চম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হিসাবে চারটি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়ার অনন্য নজির গড়েছেন তিনি। অধিনায়কের এ হাসি যে ম্যাচ শেষে আরো চওড়া হয়েছে তা তো বলে দেয়াই যায়। আর জার্মানরাও আরো একবার দেখল বিশ্বকাপের অনুনমেয় চরিত্র।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : লোজানো (মেক্সিকো)