পর্দা উঠে গেলো “গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ” বিশ্বকাপ ফুটবলের। সারাবিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে রাশিয়ার দিকে। এখানেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরের ২১তম সংস্করণ। এর আগের ২০টি আসরের মধ্যে পাঁচবার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল, চারবার করে ইতালি ও জার্মানি, দু’বার করে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে এবং একবার করে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেন। এবার কারা জিততে পারে বিশ্বকাপ? চলুন একটু আলোচনা করা যাক।
এবারের বিশ্বকাপে ৩২ টি দল অংশ গ্রহন করবে। এদের মধ্যে আগের শিরোপাজয়ী আটটি দলের মধ্যে ইতালি বিশ্বকাপের টিকেট পায়নি। বাকি সাতটি দলের মধ্যে টপ ফেবারিট দল হিসেবে বর্তমান শিরোপাধারী জার্মানি, লাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এবং ইউরোপের দুই জায়ান্ট স্পেন ও ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া ডার্কহস হিসেবে চমক দেখাতে পারে বেলজিয়াম ও পর্তুগাল।
প্রথমে আসা যাক ফেবারিটদের কথায়-
১. জার্মানিঃ বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাওয়া দলের নাম জার্মানি। বিগত বিশটি বিশ্বকাপের তেরোটিতেই ফাইনাল/সেমিফাইনাল খেলেছে দলটি। জার্মানদের নিয়ে গ্যারি লিনেকারের একটি মন্তব্য উল্লেখ করতে চাই- “ফুটবল হচ্ছে ৯০ মিনিটের একটি খেলা যেখানে ৯০ মিনিট ২২ জন খেলোয়ার বলের পিছনে ছুটে এবং শেষে জার্মানি জিতে।” বর্তমান ফর্ম ভাল যাচ্ছে না বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। তবে জার্মানি সব সময়ই বড় আসরের দল। তাই অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে তৈরি করা দল এবং কোচ জোয়াকিম লোর ট্যাকটিক্সের ওপর ভরসা রাখতেই পারেন ভক্তরা।
২. ব্রাজিলঃ পারফর্মেন্স ও শক্তিমত্তার বিচারে ব্রাজিল এবারের শিরোপার অন্যতম দাবিদার। সবার আগে এবারের বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করেছে দলটি। দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ই বেস্ট ইলেভেনে খেলার যোগ্য। কোচ তিতের অধীনে দারুণ ছন্দে আছে দলটি। দলের প্রাণভোমরা নেইমারের সরব উপস্থিতি দলটিকে নিঃসন্দেহে বাড়তি প্রেরণা জোগাবে।
৩. আর্জেন্টিনাঃ বর্তমান রানার্স আপ দল আর্জেন্টিনা। শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করলেও ফেবারিটের তকমা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে দলটি। কারণ তাদের দলে রয়েছেন মেসির মত তারকা। সমস্যা হল, দলটি অতিমাত্রায় মেসির ওপর নির্ভরশীল। গত বিশ্বকাপের মত ‘মেসি নৈপুণ্য’ বজায় থাকলে এবারও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাজি ধরা যায়।
৪. স্পেনঃ শেষ মুহূর্তে এসে কোচ ছাঁটাই করাতে দলটি কিছুটা বেকায়দায় থাকবে। তবে স্কোয়াড বিবেচনায় শিরোপার অন্যতম দাবিদার তারা। গতবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের স্মৃতি ভুলে ভালো কিছু করতে চাইবে দলটি। এদেরও তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে দারুণ একটি দল আছে। বিশ্বকাপের ট্রফিটি তাই সার্জিও রামোসের হাতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
৫. ফ্রান্সঃ একেবারে তরুণ একটি দল। তবে এদের দারুণ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। গত ইউরোতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স ছিলো দলটির। সময়মত জ্বলে উঠতে পারলে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ ট্রফি যেতে পারে ‘লা ফুরিয়া রোজা’দের ঘরে।
এরা হল মোটামুটি পরিষ্কার ফেভারিট। এছাড়া বেলজিয়াম ও পর্তুগাল এবারের কালোঘোড়া। বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা স্কোয়াড আছে বেলজিয়ানদের। ঘাটতি শুধু বড় পর্যায়ে পারফর্ম করা। অন্যদিকে পর্তুগালের সাফল্য নির্ভর করবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ওপর। একবার নক-আউট পর্বে উঠতে পারলে পর্তুগীজরা যে কতটুকু ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা তারা গত ইউরোতে ফুটবলেই প্রমাণ করেছে।
এবার আসি অন্যান্য দলগুলোর ব্যাপারে। বড় অঘটন না ঘটলে ইংল্যান্ড, উরুগুয়ে, মেক্সিকো ও কলম্বিয়া পরের পর্বে খেলবে। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে মিশর বাদে বাকি দলগুলো তুলনামূলক কঠিন গ্রুপে পড়েছে। এশিয়ার মধ্যে জাপান বাদে বাকিদের দ্বিতীয় পর্বে উঠার সম্ভাবনা দেখছি না। তবে এশিয়া থেকে কোয়ালিফাই করা আস্ট্রেলিয়ার ভাল করার সম্ভাবনা আছে।
গত বিশ্বকাপে খেলা ১২টি দল এবার বাদ পড়েছে। এর মধ্যে ইতালি ও নেদারল্যান্ডের মত বড় দল আছে। বাদ পড়েছে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলি। ঘানা ও যুক্তরাষ্ট্রের মত নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলা দলও বাদ পড়েছে। এদের খেলা ফুটবল ভক্তরা মিস করবে। অন্যদিকে, প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলবে পানামা ও আইসল্যান্ড। গত ইউরো ফুটবল যারা দেখেছেন, তাদের অনেকেরই নজর থাকবে আইসল্যান্ডের দিকে। তবে পানামাকে নিয়ে কোন আশার বাণী শোনাতে পারছি না।
মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবল যজ্ঞ চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। শিরোপা কী আগের শিরোপাজয়ী কোন দল জিতবে? নাকি নতুন কোন দলের ঘরে যাবে? ১৫ জুলাইয়ে মস্কোর ফাইনালে শেষ হাসি কারা হাসবে তা সময়ই বলে দেবে।