বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন গোল রয়েছে যেগুলো সকলে মনে রাখবে সবসময়। মুদ্রার অন্য পিঠে এমন কিছু গোল মিস আছে, যেগুলো অপ্রত্যাশিত। যারা করেছেন তারা নিজেরাও ভাবতে পারেননি দুঃস্বপ্নেও মিস হবে সেসব গোল। তেমন পাঁচটি গোল মিস নিয়েই এই আয়োজন…
আসামোয়াহ জিয়ান (ঘানা)
২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানা বনাম উরুগুয়ের ম্যাচে হিরো হতে পারতেন ঘানাইয়ান তারকা আসামোয়াহ জিয়ান! উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ গোলবারের সামনে গোলকিপার স্টাইলে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে লাল কার্ড দেখেন। পেনাল্টি পায় ঘানা। নিতে আসেন ক্যারিয়ারে এর আগে একটিও পেনাল্টি মিস না করা জিয়ান। নিয়তির নির্মমতায় বল মারেন বারপোস্টের উপর দিয়ে! জিরো থেকে হিরো বনে যান সুয়ারেজ, আর প্রথমবার পেনাল্টি মিস করে নিজের কাছেই যেন অপরাধী হয়ে উঠেন জিয়ান। তার ওই মিসে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদই পড়ে যায় ঘানা!
রবার্তো ব্যাজ্জিও (ইতালি)
বেদনার রঙ নীল। ইতালির জার্সি নীল। কাকতাল? মোটেই নয়! ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ইতালিয়ানদের জন্য অম্লমধুর। স্ট্রাইকার রবার্তো ব্যাজ্জিওর জন্য তারচেয়ে বেশি। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে দলকে ফাইনালে তুলেছেন। ৫ গোল করে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন আজ্জুরিদের। কিন্তু, ফাইনালে ট্রাইবেক শ্যুটে পেনাল্টি মিস করে মূহুর্তেই নায়ক থেকে বনে যান খলনায়ক। তার মিসেই নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ইতালিকে তৃতীয় করানোয় রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৯৩ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, ‘৯৪তে হয়েছেন ২য়। বিশ্বকাপে ব্যাজ্জিওর উপর তাই নজর ছিল সবার। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে থেকেও অল্পের জন্য দেশকে সোনার সম্মান এনে দিতে পারেননি, আসরে সিলভার বুট পেলেও রবার্তোর তাই পাওয়া হয়নি অমরত্ব।
গঞ্জালো হিগুয়াইন (আর্জেন্টিনা)
মেসি যদি খেলোয়াড় না হয়ে সাধারণ ভক্ত হতেন হিগুয়াইনকে কখনো ক্ষমা করতে পারতেন? কিংবা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড গঞ্জালো হিগুয়াইন নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন কখনো? ২০১৪ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা আলবিসেলেস্তেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন কাটা পড়ে হিগুয়াইনের মিসে! জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে ৩২ মিনিটে নয়্যারকে এক পেয়েও হিগুয়াইনের বাচ্চাসুলভ মিসটা দেখে অবাক হয়েছিল খোদ নয়্যারও! মারাদোনার হ্যান্ড অব গড যদি বিশ্বজয় হয়, হিগুর মিস তবে বিশ্বকাপ হারানোর শোকবার্তার বাহক!
আরিয়েন রবেন (হল্যান্ড)
‘এসব ফুটবলেরই অংশ এবং আজ থেকে এটি আমার জীবনেরও অংশ’- ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে করা একটি মিস প্রসঙ্গে ডাচ উইঙ্গার আরিয়েন রবেন। ক্যারিয়ারে অসংখ্য হাফ চান্সকে গোলে রূপান্তর করা রবেন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে করে বসেন অমার্জনীয় ভুল! ওয়েসলি স্নাইডারের দেয়া পারফেক্ট পাসকে গোলে রূপ দিতে কেবল ক্যাসিয়াসকে পরাস্ত করলেই হতো। কিন্তু, নিদারুণ ব্যর্থ রবেন। ক্যাসিয়াসের ডানপাশ দিয়ে মারা শট স্পেন অধিনায়কের পায়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বার ঘেঁষে যায়, সেই সাথে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটাও।
কেভিন কিগান (ইংল্যান্ড)
দুইবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ইংলিশ সুপারস্টার কেভিন কিগান ‘৮২ বিশ্বকাপের আগে আগে ইঞ্জুরিতে পড়েন। ফেরেন ২য় রাউন্ডে স্পেনের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে সাবেক লিভারপুল তারকা করে বসেন অবিশ্বাস্য ভুল! গোলপোস্ট ফাঁকা পেয়েও সঠিক উচ্চতার বল পায়ের আলতো টোকায় জালে পাঠানোর বদলে হাঁটুতে বাড়ি খেয়ে বার ঘেঁষে চলে যায়। ইংলিশরাও বিদায় নেয় রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকে।