এই সময়ের অন্যতম আলোচিত চরিত্র কিম জং-উন। তাকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতির আসর প্রায়ই গরম হয়ে ওঠে। তবে অবশেষে ট্রাম্প-কিম বৈঠকের পরে বিশ্ব রাজনীতিতে এখন শান্তি শান্তি আবহাওয়া বিরাজ করছে অনেকটা। আর এক ক্ষ্যাপাটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও কিমের কিছু আচরণে বিস্মিত। সেইসব বিস্মিত আচরণগুলো নিয়ে এই আয়োজন…
১. শুনলে অবাক না হয়ে উপায় নেই যে, কিম যেখানে যান, সাথে করে নিয়ে যান পোর্টেবল টয়লেট! কেন এমন করেন। তাঁর ধারণা যেখানে সেখানে টয়লেট করলে মল, মূত্র পরীক্ষা করে শত্রুরা জেনে ফেলতে পারে তাঁর শরীর-স্বাস্থ্যের হাল-চাল। শত্রুদের কোন সুযোগ দিতে চান না তাই এই আয়োজন।
২. কিম একজন কট্টর কমিউনিস্ট। উগ্র দেশপ্রেমী কিন্তু বিদেশি মদ ছাড়া তার চলেই না। দেশের বাইরে থেকে না আসলে সেই মদ তিনি কিছুতেই ছোঁবেন না! মদ তাঁর প্রিয় বৈকি।
৩. স্কুলে ভর্তি বা অন্যকোন কারণে নয়। তিনি কমিউনিস্ট হলেও, তার জন্মসাল বদলানো হয় ধর্মীয় রীতিপ্রথা মেনে। কমিউনিস্টদের যদিও ধর্ম মানার রেওয়াজ নাই খুব একটা। তার দাদার জন্মসালের সাথে একটা ফারাক রাখতে নাকি এটা করা হয়। একই ভাবে তার বাবা কিম জং-ইলের বেলাতেও এটা করা হয়েছিল।

৪. বাইরে থেকে দেখে কিমকে খুব শন্তিশালী মনে হয়। কিন্তু আসল সত্য হল, শারীরিকভাবে তিনি খুবই দুর্বল! সব সময়ে ভোগেন ভয়াবহ গেঁটে বাতের ব্যাথায়। কিছু দিন পর পরই পড়েন জ্বরে।
৫. সব চেয়ে বড় রহস্য রয়েছে কিমের সন্তান নিয়ে। অনেকে এমনকি কিমও বলেন, তাঁর তিনটি সন্তান; কিন্তু তা অনেকে বিশ্বাস করেন না। সংখ্যাটা কয়েক গুণ বেশি হতে পারে।
৬. তবে তার রাগ নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ নাই। প্রচণ্ড রাগী কিম। তাঁর রাগের মাত্রা এতোই বেশি যে আশপাশের সবাই খুব তটস্থ থাকেন। ভয়ে থাকেন। কিম শুধুই ‘ইয়েস’ শুনতে ভালবাসেন। তার কোন কথায় ‘নো’ একদমই পছন্দ না। তাই তার চারপাশে- ওঠাবসা, চলাফেরার সময় বা সব কাজে সব সময় তাকে ঘিরে রাখেন জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করা মানুষগুলো।

৭. কিমের সম্পর্কে আরও একটা ব্যাপার জানা যায়। এবং সবাই এটাতে একমত। এমনকি যারা সব সময় জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করেন তারাও বলেন, তিনি ‘মিথ্যেবাদী’। এমনকি তিনি খুব কাছের কাউকেও কখনও সত্যিটা বলেন না।
৮. তার শুভাকাঙ্খী ফুফাকে তিনি বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে মেরেছিলেন। কারণ, তার মনে হয়েছিল, তাঁর চারপাশের মানুষরা তাকে বেশি স্যালুট না দিয়ে তার ফুফাকে মান্য করছেন বেশি। তাই বাঘের পেটে যেতে হয়েছে।
৯. কিম ছোট বেলায় ফুপুর কাছে মানুষ হয়েছেন। তাঁর ফুপু কো ইয়ং সুক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কিম ছোটবেলায় খুব বাস্কেটবল খেলতে ভালবাসতেন। রাতে ঘুমোতেনও বাস্কেটবল নিয়ে। ৮ বছর বয়স থেকেই তাঁকে শেখানো শুরু হয়, তাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তাই তাকে সব সময় সেনাদের উর্দি পরিয়ে রাখা হত। সেই থেকে সব সবসময় তিনি যোদ্ধার মতো আচরণ করতেন। কিমের বাবা কিম জং-ইল যেমন ক্ষমতায় আসার জন্য তার বাবা কিম ইল-সুংকে দলে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন, কিম জং-উন কিন্তু অতটা নির্দয় ভাবে তার বাবাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেননি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবার কফিন নিয়ে প্রকাশ্যে হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন কিম জং-উন।

১০. তার সৎ ভাই কিম জং-নাম বেশ জনপ্রিয় উত্তর কোরিয়ায়। তখনই তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন কিম জং-উন। গত বছর কিম জং-নামকে খুন হয়ে যেতে হয় নাটকীয়ভাবে। কুয়ালালামপুরে তিনি মারা যান। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে দুই মহিলা নার্ভ এজেন্ট ছুড়ে দেন কিমের সৎ ভাইয়ের মুখে। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই হত্যার পিছনে কিমের হাত রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
কিম জং-উন বিশ্বের বিরল মানুষের এক জন, যিনি নিজেকে আপাদমস্তক রহস্যে মুড়িয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তবে তার জীবনের বেশির ভাগটাই অজানা। ফলে যেটুকু জানা, তার অনেকটাই মুখে মুখে রটনা । শুধু কিমের মতো তার বাবা কিম জং-ইলকে নিয়েও ছিল নানা রটনা। তাকে ‘হ্যামবার্গারের জনক’ বলা হত। কারণ, তিনি দাবি করেছিলেন, দুটো পাউরুটির মধ্যে মাংস পুরে হ্যামবার্গার নাকি তিনিই প্রথম বানিয়েছিলেন। অনেকের ধারণা এমন উদ্ভট আচরণের অভ্যাসটা তিনি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন।
এই নেতার এমন সব অদ্ভুত আচরণগুলাই মিথ আকারে হাজির করা হয় জনগণের সামনে। কিম জং-উন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান। তাকে ভাল ভাবে জানতে গেলেই খটকা লাগে। যা দেখা যায় আর প্রকৃত উনি যা তার মধ্যে ফারাক আকাশ পাতাল। জনগনকে ভেলকি দিয়ে নিজের প্রভাব ও ক্ষমতা টিঁকে থাকতেই তিনি এমন রহস্য তৈরি করেছেন বলে বিশ্লেষকদের মত।
আদতে খুব সাধারণ একজন মানুষ জনগণের সামনে হাজির হচ্ছে ‘অন্য রকম’ একজন হিসেবে। ব্যতিক্রম একজন হিসেবে। যাতে জনগণ মনে করেন, এমন না হলে কিম জং-উন হওয়া যায় না। বরং তাদের যেন মনে হয় আসলেই তো কিম জং-উনের মতো ‘অন্য রকম মানুষ’ বা নেতাতো আর একটাও নেই!