আফগানরা যদি লজ্জা দিয়ে থাকে; কষে চপোটাঘাত করেছে মেয়েরা

আফগানরা যদি লজ্জা দিয়ে থাকে; কষে চপোটাঘাত করেছে মেয়েরা

দেরাদুনের ভরাডুবির শেষটা দেখে ফেলেছে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড। কোনো ব্যাখ্যাতেই ৩-০ হোয়াইট ওয়াশকে জায়েজ করা যাচ্ছে না। দেশে ফিরে খেলোয়াড়রা পালিয়ে বেঁচেছেন। মজার বিষয় হল, খেলাটা খেলোয়াড়দের নিয়ে হলেও বিচিত্র উপায়ে বোর্ড এবং কর্তা মশাই কোনো না কোনো উপায় মিডিয়ার শিরোনাম হবেনই।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্রমানুসারে পয়লা কর্তার দিকেই নজর দেই বরং। সিরিজের মধ্যপথেই ক্যামেরার সামনে দন্ত বিকশিত করার লোভ সামলাতে না পেরে যথারীতি জন্ম দিয়েছেন হাস্যরসের। অন্যান্যবার একটি তত্ত্ব দিয়ে কাজ সারলেও এবার দুটো তত্ত্ব হাজির করেছেন তিনি। পয়লা, দলের অভ্যন্তরে সমস্যা আছে, দ্বিতীয়ত, তিনি না যাওয়ার ফলেই এ বিপর্যয়।

বিস্ময়কর বটে। দলের অভ্যন্তরে যদি সমস্যা থেকেই থাকে তাহলে সে দল পাঠালেন কেন এ সাওয়ালের জওয়াবটা কে দিবে বোধগম্যি না। আর ধরণীর পয়লা বোর্ড প্রেসিডেন্ট বোধয় তিনিই, যাকে ছাড়া দল জেতে না। সিরিজের সময়কালে তো দেখলাম দিব্যি হাওয়া বাতাস গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তো, এ অলস সময়টুকু সাংবাদিকদের সাথে মধু বিনিময় না করে দেরাদুনের সোফা গরম করলে দলের এই বিপর্যয়টা আর দেখতে হত না।

বোর্ডের কথায় একটু আসি। এমন কোমর ভাঙা বোর্ড ধরণীতে দ্বিতীয়টা আছে কি না তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। আফগান সিরিজের জন্য ভেন্যু ঠিক হল ভারত। সেই ভারত যারা আর্থিক ক্ষতির বিবেচনায় আমাদের আতিথ্য দিতে বরাবরই অপারগ। অথচ, কি দেখা গেল? প্রত্যেকটি ম্যাচই হয়েছে হাউসফুল। এখন হয় ভারতের চেয়ে আফগানিস্তান বড় দল। নতুবা, তাদের খেলা দেখতে মাঠ ভর্তি দর্শক যাবে কেন? অথবা বিসিসিআই ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে আমাদের সাথে? এ প্রশ্নটি কি আমাদের বোর্ড থেকে উত্থাপিত হয়েছে? ভুলেও না। রাষ্ট্রের কর্তাই যখন ভারতের মূখ্যমন্ত্রীকে ঘাটাতে সাহস করেন না, সেখানে বোর্ডের ছাপোষা এক কর্তার কী হিম্মত?

মাঠে তো আফগানরা ইজ্জত যা লুটার লুটেছেই মাঠের বাইরেও কম যায়নি। কিন্তু তা নিয়ে ওঠা সওয়ালের জওয়াব দেবে কে? দ্বিতীয় ম্যাচে শুধুই আফগানদের জাতীয় সংগীত বাজলো, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। বলাই বাহুল্য তার এ সাওয়ালের জবাব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুধাবন করেননি। বেইজ্জতি যখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে জাতীয় সংগীত বাজলো কি বাজলো না সেটা নিয়ে কে মাথা ঘামায় বলুন?

এবার একটু আসা যাক অধিনায়কের প্রসঙ্গে। মাশরাফি বিন মুর্তজা যেমন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অনুরুপটি সাকিব আল হাসানও করেছেন। পার্থক্য হল, মাশরাফি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জয়ে আর সাকিব পরাজয়ে। যে দলের অধিনায়ক তিন ইনিংসে একবারো ত্রিশের কোঠা পার করতে পারে না, দলের বাকিদের কসুর কোথায় বলুন? বল হাতেও ছিলেন দলের মতই সাদামাটা। নেতার যখন এই হালত বাকিরা কতটা হতশ্রী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

এখানে থামেননি তিনি, র‌্যাংকিং নিয়ে নতুন তত্ব আবিষ্কার করেই দেশের মাটি ছেড়েছিলেন। র‌্যাংকিং দু ধাপ এগিয়ে থাকার কারণে আফগানরা যদি নিরুষ্কুশ ফেবারিট হয় তাহলে ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকাকে সিরিজ হারানো তো পাপ হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের হাতে হেনস্তা হবার পূর্বে প্রত্যেকেই র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের আগে ছিল। এমন অভূতপূর্ব তত্ব আবিষ্কারে সাকিবকে নোবেল দেয়া যায় কি না তা সমর্থরককূলেক বিবেচ্য।

আফগানরা যদি লজ্জা দিয়ে থাকে তাহলে কষে চপোটাঘাত করেছে আমাদের মেয়েরা। ছেলেদের অর্ধেক সুযোগ সুবিধা নিয়েই এশিয়া জয় করে ফেরে। তাতেও বোধ করি বোধোদয় হবে না। বাংলাদেশের একটি সহজাত সমস্যা হচ্ছে কোন কিছু ভালো হলে তাকে পঁচিয়ে না মারা পর্যন্ত ক্ষ্যান্ত না দেয়া। শত ব্যর্থতার পরও সৌম্য সুযোগ পাবেন, সাব্বিরও দর্শক পিটিয়ে অপরিহার্যই থেকে যাবেন। এদেশের ফুটবলের এক সময় ভরা জোয়ার ছিল, কিন্তু কর্তাদের কর্মদক্ষতায় এখন তার পথে বসার যোগাড়। বিসিবিও যে গতিতে আগাচ্ছে তাতে এমন হলে খুব বেশি অবাক হব না। নতুবা, কে কবে শুনেছে প্রেসিন্ডেন্টের উপস্থিতি জয় পরাজয়ের নির্ধারক হয়?

এ সিরিজ থেকে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট, সাকিব খেলোয়াড় হিসাবে দেশ সেরা হতে পারেন অধিনায়ক হিসাবে নন। তাই, বিপদের ষোলকলা পূর্ণ হবার আগেই এদিকটায় মনোযোগ দেয়া উচিত বোর্ডের।