ঝুঁকিতে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী

বন্যা ও ভূমিধ্বসের আশঙ্কা

ঝুঁকিতে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী

শনিবার থেকে শুরু হওয়া মৌসুমী ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের মারাত্মক অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)। মিয়ানমার থেকে আসা ৩১ হাজারেরও বেশি শরণার্থী এই মুহূর্তে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধ্বস-প্রবণ এলাকায় বাস করছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মানবিক সংস্থাগুলো ৫৯টি ঘটনার প্রতিবেদন করেছে যেগুলো ভূমিধ্বস, জলপ্রবাহ, ঝড় ও বজ্রপাতের কারণে ঘটেছে। ইতোমধ্যে ৯ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবং এরকম ভারী বর্ষণ চলতে থাকলে তার সংখ্যা আরও বাড়বে।

ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ হওয়ায় ঝুঁকি বিশালাকার ধারণ করেছে। পাহাড়ী এলাকা প্রায় গাছপালা শুন্য হয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে মাটি তুলনামূলকভাবে নড়বড়ে হয়ে গেছে ফলে বন্যা এবং ভূমিধ্বসের ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বৃষ্টির আগে হাজার হাজার অসহায় পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করে আইওএম এবং তার সহযোগীরা সংস্থাগুলো।

জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক পরিবারকে বন্যা ও ভূমিধ্বস কবলিত এলাকা থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়েছে। আইওএম এবং তার সহযোগীরা জুনের শেষের দিকে আরও দেড় হাজার অসহায় পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে। টেকনাফের উনচিপ্রাঙ ক্যাম্প থেকে ৭৮৭টি পরিবারকে বৃষ্টির আগে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হলেও সেখানে এখনো ৬৫টি পরিবার ভূমিধ্বস ও বন্যা ঝুঁকিতে রয়েছে।

আইওএম এর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মানুন বলেন, “গতকাল আমরা ১৯টি পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছি। যাদেরকে শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশু-বান্ধব স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের সম্ভাবনা নেই কেননা ভারী বৃষ্টির মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না”।

কক্সবাজারে আইওএম-এর জরুরি সমন্বয়ক ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, “বৃষ্টির ফোঁটার সাথে সাথে ক্যাম্পের পরিস্থিতি আরও হতাশাজনক হচ্ছে”। তিনি আরও বলেন, “পাহাড়ে প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষ বাস করছে, যেখানে কোন গাছপালা নেই। বৃষ্টিতে মানুষ ও তাদের অস্থায়ী আশ্রয় ভেসে যাচ্ছে। আমরা জীবন বাঁচাতে দৌড়-ঝাঁপ করছি। বৃষ্টির এই সময়ে মানবিক সাহায্যের জন্য জরুরিভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হবে। এটি ছাড়া, আমাদের বর্তমান কার্যক্রম যা ২২ শতাংশ অর্থ পাচ্ছে এই মাসের শেষ নাগাদ শেষ হয়ে যাবে”।

আইওএম, ডব্লিউএফপি ও ইউএনএইচসিআর ক্যাম্প এলাকাতে ভারী নির্মাণ যন্ত্র স্থাপন করেছে। টিমটি ক্যাম্পের জমি বৃদ্ধিতে কাজ করছে এবং আইওএম ইতোমধ্যে ১৮৬.৮ একর নতুন জমি প্রস্তুত করেছে। যেখানে কমপক্ষে ৭ হাজার মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব।

বিদ্যমান শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে ঝড় ও ভারী বর্ষণে টিকে থাকার মতো উন্নত করা হয়েছে। এবং শরণার্থীদের যেকোন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে তাদের বিপর্যয়কে কমিয়ে আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রধান আশ্রয় এবং খাদ্য-দ্রব্য নয় এমন দ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। মোবাইল মেডিক্যাল টিম নিশ্চিত করা হয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবার জন্য। পানি নিষ্কাশনও বর্ষায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সংস্থাটি এবং তার সহযোগীরা স্বাস্থ্যসম্মত অবকাঠামো ও নিরাপদ পানির উন্নয়নে কাজ করছে।

তারপরও ভারী বর্ষণে দূর্ভোগ বাড়বে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। আশঙ্কা রয়েছে পানিবাহিত রোগ সংক্রামকের। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বন্যা, ভূমিধ্বস ও স্বাস্থ্যঝুঁকি -সব মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য অপেক্ষা করছে মানবিক বিপর্যয়।