গত বৃহস্পতিবার ৭ জুন ২০১৮ প্রকৃত বিরোধীদলবিহীন জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের পঞ্চম বাজেট আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ১২তম বাজেট। নিজের বাজেটের রেকর্ড ভাঙার দিনে অর্থমন্ত্রী ভেঙেছেন বাজেটের আকারের রেকর্ডও। দাঁড় করিয়েছেন পাহাড় সমান এক বাজেট; যার পরিমাণ ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন বাজেট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি এবং অনুন্নয় বাজেট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধির মাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৮ শতাংশ।
বাজেটের অর্থ সমাগমের ক্ষেত্রে রাজস্ব লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্য দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা।
প্রাক্কলিত রাজস্বের মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে মোট বাজেট ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ লক্ষ্য দেশের মোট জিডিপির জিডিপির ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় ৭১ হাজার ২০১ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে এনবিআরকে!

অর্থমন্ত্রী তার উর্ধ্বমুখী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাকে বাস্তবসম্মত প্রমাণ করতে এনবিআর এর জনবল ও কর্মপদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কারকে উল্লেখ করেন। তিনি বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ নিবন্ধিত করদাতা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা এক কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ৮০ লাখে উন্নীত করা হবে।
২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার লক্ষ্যের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এ খাতে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, যা এনবিআরের মোট লক্ষ্যের ৩৭ শতাংশ। আয়কর খাতে লক্ষ্য ১ লাখ দুই হাজার ২০১ কোটি টাকা বা ৩৪ শতাংশ এবং শুল্ক খাতে ৮৩ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, যা এনবিআরের লক্ষ্যের ২৮ দশমিক সাত শতাংশ।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর এনবিআরের মাধ্যমে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে সংশোধন করে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। পরিস্থিতি বলছে এবারও লক্ষ্যমাত্রা নামিয়ে আনতে বাধ্য হবে সরকার। বিশ্লেষকরাও বলছেন, এনবিআরএর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অসম্ভব একটি লক্ষ্যমাত্রা।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজধানীর রামপুরার আবদুল আউয়াল বলেন, প্রত্যেক বছরই শুনি বাজেটের পরিমাণ বাড়ে, বরাদ্দ বাড়ে কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো বাড়তেই থাকে।
বেসরকারি চাকুরিজীবী আবদুল আউয়াল বলেন, ঢাকা শহরে টিকে থাকাই দায় হয়ে যাচ্ছে, সরকার বড় বড় বাজেট ঘোষণা করে ঠিকই কিন্তু তার সুফল আমরা পাই না। সবকিছু বাড়লেও আমাদের বেতন তো সে হারে বাড়ে না।
রাজস্ব আদায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষজনের ওপর চাপ বাড়ছে দিনকে দিন। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা রকম সুবিধা দেয়ার চেষ্টা থাকলেও জনসাধারণের জীবনমানে উন্নতি হয় এমন উদ্যোগ বা পরিকল্পনা চোখে পড়ছে না এই বাজেটে। একারণে জনগণের মধ্যেও হতাশা তৈরি হচ্ছে।
বাজেট হলেই জনসাধারণের চিন্তা যায় বেড়ে। কোন পণ্যের দাম বাড়ছে কোন পণ্যের দাম কমছে তাই নিয়ে তৈরি হয় নতুন ভাবনা। প্রতিবারের মতো এবার বাজেটেও সেই দাম বাড়া-কমার বিষয়টি রয়েছে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে
এনার্জি ড্রিংক, প্রসাধন সামগ্রী, সানস্ক্রিন সানগ্লাস, আফটার শেভ লোশন, সিগারেট, সিরামিক বাথটাব, ফিলামেন ল্যাম্প, পলিথিন, ১ হাজার থেকে ১৬০০ স্কয়ার ফিট ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি, লিপস্টিক, পুরনো ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি, আমদানিকৃত মোবাইল ফোন, বিদেশি চকোলেট, কফি, গ্রিন টি, আমদানি করা বাদাম, আমদানিকৃত মধু, ইউপিএস, আইপিএস, স্টাবিলাইজার, ছাপাখানার পণ্য, প্লাস্টিক ব্যাগ, মোবাইল ব্যাটারি চার্জার, নেলপলিশ, অ্যালকোহল বিক্রয়কারী হোটেল রেস্তোরাঁর সেবার মান, হেলিকপ্টার সেবা, বিড়ি, জর্দা, গুল, সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন কেনাকাটা।
যেসব পণ্যের দাম কমবে
কৃষি জমির রেজিস্ট্রেশন ফি, রড, সিমেন্ট, হাইব্রিড মোটরকার, ক্যানসারের ওষুধ, টায়ার-টিউব তৈরির কাঁচামাল, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ, ডে-কেয়ার হোম সার্ভিস, দেশি মোটরসাইকেল, আমদানি পোল্ট্রি খাদ্য, দেশিয় রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার, গুঁড়ো দুধ, পাউরুটি।