কলকাতায় স্ত্রী-কন্যা নিয়ে দিব্যি রয়েছেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’

কলকাতায় স্ত্রী-কন্যা নিয়ে দিব্যি রয়েছেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছেড়ে যেতে পারেন না। বাংলা প্রকৃতির প্রতি যার এমন ভালোবাসা ছিল। যে বাংলাকে তিনি ভাসিয়েছেন গীতিকবিতার ভাবোচ্ছাসে সে বাংলা ছেড়ে তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। আর সত্যিই তিনি যাননি। সশরীরে বিচরণ করছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। প্রিয় শহর কলকাতাতেই। নিজের জন্মদিনে সূর্য ওঠার আগেই হাজির হয়ে যান জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। তাকে ঘিরে তৈরি হয় মানুষের ভীড়। তার সাথে ছবি তুলে উচ্ছসিত হন ভক্তরা। কিন্তু তিনি আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন। অবিকল একই চেহারার একজন মানুষ। নাম সোমনাথ ভদ্র। তিনি একজন চাকুরিজীবী। কাজ করেন টেলিকম কোম্পানি বিএসএনএল-এ। স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে বাস করেন কলকাতার হেদুয়া পার্কের কাছে। সোমনাথ ভদ্রের চেহারার সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেহারার এত মিল যে কেউ না জানলে ভূত বলে চমকে উঠতে পারে। পঞ্চাশোর্ধ এই ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবেও রবীন্দ্র অনুরাগী।

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে সোমনাথ ভদ্র। ছবি: আজকাল.ইন

সোমনাথ ভদ্র ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র-অন্তপ্রাণ। রবীন্দ্রনাথের গান শুনতেন পাগলের মতো। যেখানে রবীন্দ্রনাথের গান হতো ছুটে যেতেন সব কাজ ফেলে। আর গায়কগায়িকাদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করতেন ডায়রিতে। সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়সহ বাঘা বাঘা শিল্পীদের অটোগ্রাফ রয়েছে তার সংগ্রহে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতেই রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। আর এভাবেই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অফিসের চাপ সামলে আজও সোসাইটির যে কোনও কাজে নিবেদিতপ্রাণ সোমনাথ। বসন্ত উৎসব, পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণ- সব অনুষ্ঠানেই দেখা মিলবে তার। তাছাড়া নিয়ম করে প্রতি বুধবার রবীন্দ্রভারতীতে আসেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির পাশে সোমনাথ ভদ্র

সবখানেই সোমনাথকে রবীন্দ্রনাথের সাজেই দেখা যায় তাকে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার চেহারা যে হুবহু মেলে সেটা ভাল করেই বুঝতে পারেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “একটা কথা বলতে চাই, আমি কিন্তু কখনওই রবীন্দ্রনাথকে নকল করার উদ্দেশ্য নিয়ে চলি না। আমাদের চেহারা, চুল, দাড়ি- সবই একেবারে রবীন্দ্রনাথের মতো। এখানে আমার কোনও হাত নেই। ছোটবেলাতেও আমাকে রবীন্দ্রনাথের মতো দেখতে। বেশ কয়েকবার রবীন্দ্রনাথের যৌবনের চরিত্রে অভিনয়ের ডাকও পেয়েছি। কিন্তু করিনি।’ তবে, সায়ন্তন সেনের পরিচালনায় ‘এ কোন রবি’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সোমনাথ।

পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সোমনাথ ভদ্র: অবিকল এক মুখাবয়ব

চেহারায় অনেক মিল থাকলেও তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য। রসিকতা করে সোমনাথ বলেন, এ যুগের ‘রবীন্দ্রনাথ’ গান শুনতে ভালোবাসলেও গাইতে পারেন না। পারেন না কবিতা লিখতেও। তবে ছবি আঁকায় আগ্রহ থাকলেও রংতুলি নিয়ে বসা হয় না বহুদিন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সবটা মর্মার্থ বুঝতে পারার আকাঙ্খাই সোশ্যাল মিডিয়া আর রবীন্দ্রানুরাগীদের মধ্যে জনপ্রিয় সোমনাথ ভদ্রের চাওয়া। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পুরো সময়টাই দিতে চান রবীন্দ্র-ভারতীতে।