এবারের বিশ্বকাপে তারা নিজ নিজ দলের স্বপ্নসারথি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করা তাও আবার ফুটবল মহাযজ্ঞে, মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়। ফুটবলার হওয়ার আগে একটা সময় তারাও ছিলেন ফুটবলভক্ত, আমাদের মতোই অধীর হয়ে থাকত বিশ্বকাপের অপেক্ষায়। বিশ্বকাপ নিয়ে তাদেরও আছে নানান স্মৃতি, আনন্দ বেদনার গল্প। সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন, ‘তারকাদের স্মৃতিকথা’…
লুকা মদ্রিচ (মিডফিল্ডার, ক্রোয়েশিয়া)
১৯৯৮ বিশ্বকাপটা আমি দেখেছি পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে। তখন আমার বয়স ১৩ বছর। প্রতিটি জয়ের পর আমরা উৎফুল্ল হতাম, উল্লাসে মাততাম। একই সঙ্গে গর্ব হতো এই ভেবে যে, বিশ্ব এখন আমাদের চিনে। আমার মনে আছে, এরপর থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি দেশের হয়ে খেলার, একদিন আমাকে ওই পর্যায়ে (বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা) যেতে হবে।
থিয়াগো আলকান্তারা (মিডফিল্ডার, স্পেন)
১৯৯৪ বিশ্বকাপের সময় আমার বয়স তিন বছর। কোন ম্যাচের কথা মনে নেই। কিন্তু, বিশ্বকাপ জিতে বাবা (মাজিনহো, ব্রাজিল এর ‘৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য) যখন বাড়ি ফিরল, তাকে সবাই বরণ করে নিল, তাকে ঘিরে আনন্দ উৎসব হলো সেসব স্পষ্ট মনে আছে। ২০১০ বিশ্বকাপও বিশেষ কিছু। আমি তখন স্পেন অনুর্ধ্ব-১৯ দলে। ফাইনালে ইনিয়েস্তার গোলের পর সবাই বাঁধভাঙ্গা বুনো উল্লাসে মেতেছিল। স্প্যানিশ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত ছিল তা!
আলীরেজা জাহানবক্স (মিডফিল্ডার, ইরান)
খুব পরিষ্কার মনে আছে ২০০৬ বিশ্বকাপের কথা। পরিবারের সঙ্গে ম্যাচগুলো উপভোগ করেছি। যখন ইরানের ম্যাচ দেখতাম বাবা তখন পাশে বসিয়ে বলত- ‘তোমাকে এই জার্সিতে (ইরান) বিশ্বকাপে দেখা আমার স্বপ্ন! ১২ বছরের এক যুবকের কাছেও তা স্বপ্ন হলেও মাত্র ৮ বছর পরেই (২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে সবকটি ম্যাচ খেলেছেন) যে সেটি পূরণ হবে তা ভাবতে পারিনি ওই সময়।
গ্যাব্রিয়েল হেসুস (স্ট্রাইকার, ব্রাজিল)
আগে বিশ্বকাপ আসলে বন্ধুরা মিলে এলাকার রাস্তায়, বাসার সামনে আলপনা আঁকতাম। এসব আমার কাছে দায়িত্ব মনে হতো। গত তিন বিশ্বকাপ ধরে এমনটি করে এসেছি। আশাকরি এবার দলে সুযোগ পেলে এখানেও নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারব।
রাদামেল গার্সিয়া ফ্যালকাও (স্ট্রাইকার, কলম্বিয়া)
১৯৯০-র আসরে জার্মানির বিপক্ষে আমাদের (কলম্বিয়ান) ফ্রেডি রিঙ্কনের গোলই আমার সবচেয়ে পুরনো বিশ্বকাপ স্মৃতি। আমার তখন সবে চার বছর! কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে সবকিছু। পুরো কলম্বিয়া গোলটি উদযাপন করেছিল। এটি এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, পরবর্তী (১৯৯৪) বিশ্বকাপ আসার আগ পর্যন্ত সেই গোল দেখে দেখেই বেড়ে উঠেছি।
হাভিয়ের হার্নান্দেজ (স্ট্রাইকার, মেক্সিকো)
আমি প্রথম বিশ্বকাপ দেখি ১৯৯৮ সালে। রোনালদো লিমা আমার আদর্শ। যেদিন ব্রাজিলের খেলা থাকতো সেদিন স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরতাম। ব্রাজিল নয়, রোনালদোর খেলা দেখব বলে!
হ্যারি কেইন (স্ট্রাইকার, ইংল্যান্ড)
২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ব্রাজিল বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচ। ফ্রি কিক থেকে রোনালদিনহোর গোল। সেই দৃশ্য এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। এরপর থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি, একদিন আমিও বিশ্বকাপ খেলব’। এভাবেই নিজের প্রথম বিশ্বকাপের স্মৃতি রোমন্থন করেন ইংলিশ তারকা হ্যারি কেইন।
আইগর আকিনফিভ (গোলরক্ষক, রাশিয়া)
ফুটবল সম্পর্কে বুঝতে শেখার পর প্রথম খেলা দেখি ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। সে কি শিহরণ জাগানো অনুভূতি! সেবার ক্যামেরুনকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয় রাশিয়া, যেখানে ওলেগ সালেনকো (সাবেক রুশ ফরোয়ার্ড) একাই করেন ৫ গোল! সেটিই বিশ্বকাপে এখন অব্দি আমার সেরা স্মৃতি।
সান হিয়ুংমিন (ফরোয়ার্ড, দক্ষিণ কোরিয়া)
২০০২ বিশ্বকাপ নিয়ে আমার প্রচুর স্মৃতি আছে। কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি শ্যুটআউটে জয়ের পর সকলে উন্মত্ত হয়ে উঠি, কারো যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না! সবার গায়ে কোরিয়ান জার্সি। আমার কাছে বিশ্বকাপের একক কোন স্মৃতি নেই, ২০০২ এর পুরো আসরই চমৎকার কেটেছে আমাদের।
নেইমার (উইঙ্গার, ব্রাজিল)
১৯৯৪ বিশ্বকাপ আমি টিভিতে দেখেছি। যদিও তখন আমার মাত্র দুই বছর! সম্ভবত হল্যান্ডের বিরুদ্ধে বেবেতোর পাসে রোমারিওর গোলই আমার দেখা প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ।
পল পগবা (মিডফিল্ডার, ফ্রান্স)
১৯৯৮-র ফাইনালে ফ্রান্সের ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচটা দেখেছিলাম। তখন খুবই ছোট ছিলাম, ছয় কি সাত বছরের। পরিবার এবং আরো অনেক মানুষের সঙ্গে একত্রে খেলা দেখেছি। বিশ্বকাপ জয়ের পর সকলে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামি, সবাই দারুণ খুশি ছিল।