শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সিঙ্গাপুর সারাবিশ্বের মধ্যে সেরা অবস্থানে রয়েছে। যৌথভাবে তাদের সাথে রয়েছে স্লোভেনিয়া। বেসরকারি সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সংগঠনটি ৮টি বিষয় নিয়ে সর্বমোট ১৭৫টি দেশে এই গবেষণা চালায়। উক্ত ৮টি বিষয় হচ্ছে– ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার, শিশু নির্যাতনের পরিমাণ, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশু ও যুবকদের হার, শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা ও শিশু হত্যার হার।
রিপোর্টে বলা হয়য়, সিঙ্গাপুর এই গবেষণায় ১০০০ এর মধ্যে ৯৮৭ পয়েন্ট লাভ করেছে। বিশেষত, অল্প বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধে তারা অত্যন্ত সফল। প্রতি ১ হাজার মেয়েদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৮ জন মেয়ে অসময়ে গর্ভধারণ করেন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৯ এর মধ্যে। যেখানে সারাবিশ্বে অসময়ে গর্ভধারণের পরিমাণ প্রতি হাজারে গড়ে ৫০ দশমিক ৪ জন।
সিঙ্গাপুর ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু হার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পয়েন্ট লাভ করেছে। এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন নরওয়ে, সুইডেন বা ফিনল্যান্ডের চেয়েও তারা এগিয়ে রয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, সিঙ্গাপুরের গতবছরের তুলনায় এ বছর র্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে। যেখানে গতবছর সিঙ্গাপুরের র্যাংকিং ছিল ৩৩ তম। যদিও সেভ দ্য চিলড্রেনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্তে কিছু অসঙ্গতি ছিল। ফলে সংগঠনটি সঠিক তথ্য উপাত্ত পাওয়ার জন্য তাদের পূর্বেকার গবেষণা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এনেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে এশিয়া থেকে ৩টি দেশ সেরা ২০ এর মধ্যে রয়েছে। বাকি দুটি দেশ হচ্ছে– দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান, তাদের র্যাংকিং যথাক্রমে ৮ম ও ১৯তম। এরপর এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে চীন, তাদের র্যাংকিং ৪০ তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ২য় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া, তাদের র্যাংকিং ৬৭ তম।
সেভ দ্য চিলড্রেনের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হাসান নূর সাদী সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, “সিঙ্গাপুরের এই ফলাফল বেশ অবাক করার মতো, যেখানে শিশুরা তাদের উপযোগী স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উপভোগ করতে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সিঙ্গাপুর একটি দারুণ জায়গা। এখানে তাদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুর বর্তমানে শিশুদের জন্য সারাবিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ। অন্যসব দেশে শিশুদের জন্য যেসব হুমকি রয়েছে যেমন, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার সুযোগ কম থাকা, শিশুমৃত্যু এবং যুদ্ধাবস্থা– এসব হুমকির কোনটিরই অস্তিত্ব সিঙ্গাপুরে নেই।”
সেভ দ্য চিলড্রেনের এশিয়া অঞ্চলের প্রচার ও প্রচারণা বিষয়ক পরিচালক মিশেল অ্যাংলেড সিঙ্গাপুরের এমন সাফল্য অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই সূচকেও সবকিছুর অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়নি। যেমন, শিশুদের অধিক একাডেমিক চাপ, শরীরের স্থুলতা– যা সিঙ্গাপুরের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
অ্যাংলেড আরও বলেন, ফের ইনডেক্স সংশোধন করার ক্ষেত্রে শিশুদের স্থুলতার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে পরিণত হতে পারে। এটি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ধরণের দেশেই এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
যখন এশিয়ার প্রায় সকল দেশ তাদের স্কোর ভালো করছে তখনও শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও অপুষ্টির সমস্যাটি থেকে যাচ্ছে। শিশুদের শারিরীক বিকাশ ও বৃদ্ধির বিবেচনায় এশিয়ার ৪টি দেশের অবস্থা সূচকের নীচের দিকের ১০ টি দেশের মধ্যে রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে– লাওস (৪৪%), পাকিস্তান (৪৫%), পাপুয়া নিউগিনি (৫০%), এবং লেসেথো (৫০%)।
সাদী উল্লেখ করেন, শিশুদের বৃদ্ধির হার ফিলিপাইনে খুব সামান্য পর্যায়ে রয়েছে এবং দেশটির প্রায় একতৃতীয়াংশ শিশু এই সমস্যায় ভুগছে। এটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এখন দ্রুত শিশুদের পুষ্টির মান উন্নত করতে হবে।
এশিয়ার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শিশুশ্রমে যুক্ত– যা সংখ্যায় প্রায় ৬২ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়।
আফ্রিকার বাইরে আফগান শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে। দেশটির স্কোর আশঙ্কাজনকভাবে মাত্র ১০ পয়েন্ট– যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন– এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সংঘাতময় পরিবেশ এবং স্কুলে যেতে না পারা। এখানে শিশু মৃত্যুর হার ও বৃদ্ধিও আশঙ্কাজনক।
শেষ ১০টি দেশের মধ্যে ৮টি দেশ রয়েছে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার অঞ্চল থেকে, বিশেষত নাইজারের অবস্থা খুবই শোচনীয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিশু সংঘাতপূর্ণ, দারিদ্র-কবলিত ও নারী বৈষম্যপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে, যা সংখ্যায় প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন।