পপগুরুর চলে যাওয়ার সাত বছর

পপগুরুর চলে যাওয়ার সাত বছর

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে বধ করেছিলেন পাক বহিনীকে, স্বাধীন দেশে হাতে তুলে নেন গিটার, উপস্থাপনায় নতুনত্ব আর পশ্চিমা  ধাঁচের গান নিয়ে পৌঁছে যান মানুষের ঘরে ঘরে, আর হয়ে ওঠেন পপ সম্রাট। হ্যাঁ তিনিই সেই আযম খান, আজ ৫ই জুন কালজয়ী পপ সম্রাটের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালে দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজম খান ১৯৫০ সালে ঢাকার আজিমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান, মা জোবেদা খাতুন এর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। পেশায় তার বাবা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন।

১৯৫৫ সালে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে বেবিতে ভর্তি হন তিনি। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানে বসতি তাদের। সেখানে তিনি কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীতে অংশ নেন। বাবার অণুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে স্থির হন তিনি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে, তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। আগরতলার পথে সঙ্গী হন তার দুই বন্ধু। এ সময় তার লক্ষ্য ছিল সেক্টর দুইয়ে খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধে যোগদান করা। আজম খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সময় তার বয়স ছিল ২১ বছর। তার গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণ যোগাত। ভারতের মেলাঘরের শিবিরে তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সমুখ সমরে অংশ নেয়া শুরু করেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার আগরতলায় ফিরে যান। এরপর তাকে ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইন-চার্জ।

তরুণ বয়সের আজম খান

আজম খানের কর্মজীবনের শুরু ষাটের দশকের শুরুতে। ১৯৭১ সালের পর তার ব্যান্ড দেশব্যাপি সঙ্গীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকাল করে শুরু করলেন অনুষ্ঠান। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে সেই অনুষ্ঠানের ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ এবং ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি প্রচার হল। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিল এ দু’টো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে গেলেন আজম খান। তার আরো কিছু জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে– ‘বাংলাদেশ (রেল লাইনের ঐ বস্তিতে)’, ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’ ইত্যাদি।