শাকিব খান; প্রায় এক দশক ধরে ঢাকার ফিল্ম ইন্ডাস্টিতে এক তরফা রাজত্ব করা অভিনেতার নাম। অভিনেতা মান্নার মৃত্যুর পর মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশি চলচ্চিত্র শিল্পকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দেশের শিক্ষিত দর্শকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে সমালোচনা করলেও এ কথা স্বীকার করতেই হবে, শাকিব খানই দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকাই সিনেমার অক্সিজেন।
চলচ্চিত্রে অনেক নায়কের আগমন ঘটলেও শাকিবেরই একমাত্র বিশাল ভক্ত-দর্শক আছে। এবং তার ছবিই মুক্তি পেলে প্রযোজক, হল মালিক ও সংশ্লিষ্টরা লাভের প্রত্যাশা করে থাকেন। হাল আমলে আরিফিন শুভ ভালো কিছু কাজ করলেও দর্শকপ্রিয়তায় শাকিবের ধারে কাছেও নন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে অনন্ত জলিল ও বাপ্পী চৌধুরীর মতো নায়কেরা সম্ভাবনা জাগালেও সুবিধা করতে পারেননি বিনোদনের এই ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই সহজেই বলে দেয়া যায়, আগামী চার-পাঁচ বছরে শাকিবের আধিপত্যে কোনরূপ ভাটা পড়ার সম্ভাবনা নেই।
শাকিব খানের আধিপত্যের নতুন গন্তব্য এবার টালিউড। পশ্চিমবঙ্গের এই রূপালি ইন্ডাস্ট্রিতে দাপট রয়েছে জিৎ ও দেবের। টালিউডে বিকল্প ধারা বা ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের আলাদা কদর বা অবস্থান রয়েছে। তাই বাঘা বাঘা অভিনেতাদের সেখানে হর হামেশা দেখা যায়। আবীর চট্টোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, রাহুলরা ভিন্ন ঘরানার সিনেমায় রাজত্ব করছেন। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে তাই জিৎ আর দেব রাজা। সোহম, অঙ্কুশ, যশ, হিরণ, বনিরা মাঝে মধ্যে কমার্শিয়াল সিনেমার হাউসফুল নায়ক হলেও তা জিৎ দেবকে টক্কর দেবার জন্য যথেষ্ঠ নয়। অনেকে মনে করছেন, জিৎ-দেবের পর টালিউডের গুরুত্বপূর্ণ সুপারস্টার হবেন শাকিব খান।
বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তার জন্য যৌথ প্রযোজনার হাত ধরে শাকিব পদার্পণ করেন কলাকাতা ইন্ডাস্ট্রিতে। তার প্রথম ছবি ‘শিকারি’ বাংলাদেশে ছিল সুপারহিট আর ভারতে চলেছে কোন রকমে, কিন্তু আয় করেছে ৫ কোটি ৫০ লক্ষ। এরপর শাকিবের দ্বিতীয় ছবি ‘নবাব’ বাংলাদেশে সুপারহিট, ভারতে ছিল সেমিহিট, আয় করেছিল ৯ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। এবছর মুক্তি পায় শাকিবের যৌথ প্রযোজনার তৃতীয় ছবি ‘চালবাজ’ এখনো চলছে মহাসমারোহে। দর্শক পেয়েছে পূর্বের তুলনায় বেশি। কলকাতার বাইরের হল মালিকেরাও সন্তুষ্ট দর্শক সমাগমে। সবিশেষ ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছে শাকিব খানের ‘ভাইজান এলো রে’। ধারণা করা হচ্ছে এ সিনেমার মধ্য দিয়ে শাকিব টালিউডে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছে যাবে।
শাকিবের জনপ্রিয়তা যে জিৎ-দেবকে টক্কর দিতে যাচ্ছেন তার আরেকটি প্রমাণ, তার ‘শ্রী ভেঙ্কাটেশ ফিল্মস’ থেকে ডাক পাওয়া। শাকিবকে নিয়ে তারা লোকাল ফিল্ম বানাচ্ছে। নিসন্দেহে তা শাকিবের জন্য সুখবর। এসভিএফ অবশ্যই ভারতের প্রভাবশালী প্রোডাকশন হাউস এবং তাদের সিনেমার হল সংখ্যাও বেশি। এসভিএফের ব্যানারে চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে বাজেট কভারের জন্য বাংলাদেশে মুক্তি দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না শাকিবের চলচ্চিত্রের। সিনেমার গানগুলোও চলতে থাকবে টিভির পর্দায়।
টালিউডে শাকিব খানের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী। এবং সাফল্যও ঈর্ষণীয়। এভাবে চলতে থাকলে শাকিব খান হয়ে উঠবে দুই বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় সুপারস্টার। শাকিবের সাথে টক্কর দিতে হবে স্থানীয়দের। কতদিন? হয়তো বছর দুয়েক। হয়তো দু’ তিনটি ছবি।