পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ভালো কাজগুলোই সাধারণত আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু তাদের অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও নৃশংসতা সম্পর্কে আমরা প্রায় অন্ধকারেই থাকি। ওইসব কর্মকাণ্ডের সামান্যই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। আর আমরা এর বেশিও জানতে পারি না। অনেক দেশেরই রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষমতা গ্রহণের বিতর্কিত ইতিহাস রয়েছে। তা ‘জবান’-এর পাঠকের জন্য তুলে এখানে ধরা হলো–
চার্লস টেলর (লাইবেরিয়া, ১৯৯৭-২০০৩)
লাইবেরিয়ার এই শাসককে বলা হতো ‘মৃত্যুদূত’। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক চাপে ক্ষমতা ছেড়ে নাইজেরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টানা ৬ বছর তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সহিংসতায় উস্কানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমখি করা হলে বিচারক তাকে মানবতার ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে ৫০ বছরের সাজা দেন। এখন তিনি ওই সাজা খাটছেন।
ওবিয়াং মবাসগো (ইকুয়েটরাল গায়না, ১৯৭৯-বর্তমান)

পুরো টেওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমা মবাসোগো। নামটি রাশভারি। কিন্তু কাজটা ঠিক এর উল্টো। ১৯৭৯ সালে রক্তক্ষয়ী এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চাচা ফ্রান্সিস্কো ম্যাকিয়াস নওয়েমা-কে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করে করে দখল করে নেন ইকুয়েটরাল গায়নার ক্ষমতা। এরপর থেকে এখনো ক্ষমতায় আছেন তিনি। তাকে ধরা হয় আফ্রিকায় দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসকদের মধ্যে অন্যতম।
ওবিয়াং ক্ষমতায় এসেই রেডিওতে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন ‘দেশের ঈশ্বর’ হিসেবে। ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি বিচার করে যে কাউকে হত্যা করার ক্ষমতা রাখেন। এসব বলেই ক্ষ্যান্ত হননি, তা করেও দেখিয়েছেন। তার সময় অসংখ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা, অপহরণ ও নির্বাসন দেয়ার ঘটনা ঘটে। তার দেশ দরিদ্র হলেও তিনি মোটেই দরিদ্র নন। ফোবর্সের হিসাব মতে, তার সম্পদের পরিমাণ ৬০০ মিলিয়ন ডলার। ২০১১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রাবার্ট মুগাবে (জিম্বাবুয়ে, ১৯৮৭-২০১৭)

রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে একবার বলেছিলেন, “আমি শতবর্ষী হওয়া পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের শাসক থাকবো।” দাবি করতেন, “একমাত্র ঈশ্বর পারেন আমকে ক্ষমতা থেকে সরাতে।” কিন্তু ৯৩ বছর বয়সে এসে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ হারান সেনাবাহিনীর চাপে। বিশ্বে এ মুহূর্তে যত রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান আছেন তাদের মধ্যে সম্ভবত মুগাবের চেহারাই পৃথিবীবাসী সবচেয়ে বেশি চেনেন। ৩৭ বছর ধরে ছিলেন ক্ষমতায়। তাই ব্যাপক ঘটনাবহুল তার জীবন। প্রথম দিকে তকে বলা হতো ‘মুক্তিদাতা’ যিনি সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ রোডেশিয়াকে শ্বেতাঙ্গ শাসনমুক্ত করেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার খুব অল্প সময় পরই মুগাবে বিপ্লবী থেকে বনে যান স্বৈরাচার। তিনি রাজনৈতিক ভিন্নমতালম্বীদের পিষে ফেলেছেন। জাতিসংঘের মতে, জিম্বাবুয়ের বেকাত্বের পরিমাণ ৮০ শতাংশ। জিম্বাবুয়িয়ান ডলার এখন আর চলে না সেখানে। সব মিলিয়ে ক্ষমতা ছাড়লেও এর সঙ্গে বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন দেশটির জাতীয় অর্থনীতিরও।
কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার দায়ে ১৯৬৪ সালে মুগাবেকে আটক করা হয়। তার জীবনের পরের ১০ বছর পার হয় বন্দিশিবির বা কারাগারে। কারাগারে থেকেই তিনটি ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু ওই বন্দি জীবন ব্যাপক প্রভাব ফেলে তার ওপর। ১৯৭৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। তখন শ্বেতাঙ্গ শাসকদের বিরুদ্ধে গেরিলা সংগ্রাম চালাচ্ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে একটি ছিল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জেডএএনইউ)। মুক্তি পেয়ে মুগাবে দলটির রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। শাসক বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে তার অারেক অংশীদার ছিলেন জোসুয়া এনকোমো। তিনি ছিলেন জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান পিপল’স ইউনিয়নের (জেডএপিইউ) নেতা। ক্ষমতায় আসার পর ভিন্ন মতালম্বীদের বিরুদ্ধে তিনি যে দমন-পীড়ন শুরু করেন, এর প্রথম দিককার শিকার ছিলেন এনকোমা। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যাডর্যাক গুট্টো বলেন, ‘তিনি ছিলেন এক মহান নেতা। কিন্তু তার নেতৃত্বকে এমন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন যে, জিম্বাবুয়েকে তিনি নিঃস্ব করে ফেলেছেন।’
ফ্রান্সিস্কো ম্যাকিয়াস নওয়েমাকে (ইকুয়েটরাল গায়না, ১৯৬৮-১৯৭৯)

ম্যাকিয়াস নওয়েমা ছিলেন ইকুয়েটরাল গায়নার প্রথম প্রেসিডেন্ট ও টেওডোরো ওবিয়াং নওয়েমা মবাসোগো-এর চাচা। আধুনিক আফ্রিকার সব থেকে নৃশংস স্বৈরশাসকের তালিকা করা হলে তিনি বেশ ওপরের দিকেই থাকবেন। ১১ বছরের শাসন আমলে এমন কোনো অভিযোগ নেই যা তার ওপর ছিল না। নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন, ‘সরকার ও সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান’ হিসেবে। তবে তার সব থেকে ভয়ঙ্কর রূপটি ছিল নিজের পরিবারের প্রতি। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে তার পরিবারের অনেককেই হত্যা কিংবা দেশ ছাড়া করেছিলেন। শুধু তার সময়েই গায়নার তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। দেশ ত্যাগ ঠেকাতে তিনি দেশের সব জাহাজ, নৌকা বেচে কিংবা ধ্বংস করে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশ্য এতে লাভ হয়েছিল অল্পই।
জোসে এদুয়ার্দো দস সান্তোস (এঙ্গোলা, ১৯৭৯-২০১৭)

জোসে দস সান্তোস হলেন আফ্রিকার সব থেকে ধনী নারী ইসাবেলা দস সান্তোসের বাবা। ২০১৭ সালে এমপিএলএ দলের প্রার্থী জোয়াও লরেন্স-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ইকুইয়েটরাল গায়নার স্বৈরশাসক ওবিয়াং নগুয়েমার পর তিনিই ছিলেন আফ্রিকার দীর্ঘ মেয়াদে থাকা শাসক। ৩৮ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। তার ওপর সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল অর্থ কেলেঙ্কারির। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন ও প্রতিপক্ষ দমনে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।
ইদ্রিস দেবি (শাদ, ১৯৯০-বর্তমান)

জেনারেল ইদ্রিস দেবি ২৭ বছর ধরে আফ্রিকার দেশ শাদ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯০ সালে পূর্ববর্তী স্বৈরশাসক হাবরে’র বিরুদ্ধে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে শাদের ক্ষমতা দখল করেন। এ পর্যন্তই যা। এরপর তিনিও হয়ে ওঠেন আরেক স্বৈরশাসক। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকাকালে একাধিকবার সাফল্যের সঙ্গে লিবিয়ান সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করে দেশটি রক্ষা করেন। ফলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবরে-কে ক্ষমতা থেকে নামানোর সময় তিনিই ছিলেন বীর। পরে অবশ্য গাদ্দাফির সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করেন।
ইদ্রিস দেবির শাসন আমলে ২০০৬ সালে শাদ বিশ্বের সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। জনসেবা আর দাতব্যের নামে প্রচুর অস্ত্র ক্রয় করেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো, তিনি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের আয়োজন করে আসছেন। তবে সেসব নির্বাচনে প্রার্থী থাকেন একাই। ফলে প্রতিবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তাই সমালোচদের চোখে তিনি ‘গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার’।
পল কাগামে (রুয়ান্ডা, ১৯৯৪- বর্তমান)

পল কাগামে ২০০০ সাল থেকে গত ১৭ বছর ধরে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন। তার প্রতি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, তুতসি বংশোদ্ভূত পল কাগামে এক স্বৈরশাসকের মতোই দেশ চালান। অন্যদিকে জাতিসংঘ সদ্য পুনর্নির্বাচিত রুয়ান্ডার ওই নেতাকে অভিহিত করেছে আফ্রিকার উন্নয়নের এক তারকা হিসেবে। প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ‘টাইম’ তাকে বলেছে ‘রেবেল রিফর্মার’ বা ‘বিদ্রোহী সংস্কারক’। এসব পাল্টা-পাল্টি মিলিয়েই তিনি পল কাগামে।
পল কাগামে ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তখনই তাকে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট মনে করা হতো। যুবক বয়সে ইওয়েরি মুসেভেনির অধীন প্রথমে বিদ্রোহী সেনা এবং পরে উগান্ডার সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে লড়াই করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি ‘রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফোর্স’-এ যোগদান করেন। রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধের সময় তারা হুতুদের পরাজিত করে গণহত্যার অবসান ঘটান। পরে তার নেতৃত্বেই হুতুদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। ওই ঘটনা কেন্দ্র করেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত উগান্ডিয়ান লেখন মাহমুদ মামদানি তার বিখ্যাত বই ‘ভিক্টিম বিকামস কিলার’ রচনা করেন। কাগামের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ শোনা যায়।
পল বিয়া (ক্যামেরুন, ১৯৮২- বর্তমান)

১৯৩৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ক্যামেরুনে জন্মগ্রহণ করেন পল বিয়া। ক্যাথলিক ধর্মে অনুসারী বিয়া প্রথম জীবনে এদেয়া ও ইয়াউন্ড ক্যাথলিক ধর্মীয় স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯৫৬ সাল থেকে পর পর ফ্রান্সের প্যারিসের অর্থনীতি ও আইন বিষয়ক একাডেমি, প্যারিসের রাজনীতি গবেষণা একাডেমি এবং বৈদেশিক উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা একাডেমিতে লেখাপড়া করেন। আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক স্কলার ও উচ্চ পর্যায়ের গবেষণার যোগ্যতার স্বীকৃতিপত্র লাভ করেন। ১৯৬২ সালে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্টের বিশেষ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পল বিয়া ৪২ বছর ধরে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আছেন। ১৯৭৫ সালে প্রথম তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদু আহিদজোর অধীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রথমদিকে আহিদজোর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো থাকলেও অতি দ্রুতই এর অবনতি ঘটে। ১৯৮৩ সালে আহিদজো ক্যু করার চেষ্টা করলে তা দমনের অজুহাতে তার সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হন। এরপর থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে পুনর্নিবাচিত হয়ে আসছেন। অবশ্য প্রতিটি নির্বাচনেই বিপুল কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ আছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগও রয়েছে।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি (১৯৪২-২০১১)

লিবিয়ার স্বৈরশাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি দীর্ঘ ৪২ বছর একক ক্ষমতায় দেশ শাসন করেছেন। ১৯৬৯ সালে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজা ইদরিসের রাজতান্ত্রিক শাসনকে বিদায় জানিয়ে ক্ষমতায় আসেন সেনাবাহিনীর তৎকালীন তরুণ অফিসার ২৭ বছর বয়স্ক সুদর্শন গাদ্দাফি। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। বিলাসপ্রিয় রাজা ইদরিসের স্থলাভিষিক্ত গাদ্দাফিকে সেদিন লিবিয়ার মানুষ বিপুলভাবে স্বাগত জানিয়েছিল। লিবিয়াকে নতুন করে গড়ে তুলেছেন তিনি। কিন্তু একনায়কতন্ত্রের ক্ষমতার মোহে পড়ে যান। এক সময় হয়ে ওঠেন ভয়াবহ জেদি এক স্বৈরশাসক। অভিযোগ আছে, বিরোধী বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের একদমই সহ্য করতে পারতেন না তিনি। তার গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত ও সর্বত্র সম্প্রসারিত। কারো আচরণে সন্দেহ হলে কিংবা কাউকে তথাকথিত বিপ্লবের বিরোধী মনে হলেই তার ওপর নেমে আসত নির্যাতনের খড়গ। প্রায়ই এর পরিণতি ছিল মৃত্যু। বিশ্বের তাবৎ স্বৈরশাসকের মতো তারও পরিণতি হলো মর্মান্তিক ও ভয়াবহ। পাশ্চাত্য সমর্থিত ন্যাটো বাহিনী ও লিবিয়ার বিদ্রোহী ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল-এনটিসি গেরিলাদের আট মাসব্যাপী যৌথ আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় ‘লৌহমানব’ গাদ্দাফির ৪২ বছরের একচ্ছত্র শাসন। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর নিজ জন্ম শহর সির্তে-তে দু’মাস ধরে পাইপের মধ্যে লুকানো থাকা অবস্থায় বিদ্রোহী সেনাদের হাতে ধরা পড়েন ও গুলিতে মারা যান তিনি।
ইদি আমিন দাদা (১৯৭১-১৯৭৯)

১৯২৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন কোবোকো-তে ‘কাকওয়া’ নামে ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছোট্ট একটি আদিবাসী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন ইদি আমিন। ১৯৪৬ সালে ২১ বছর বয়সী আমিন যোগ দেন আফ্রিকান ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনী তথা কিংস আফ্রিকান রাইফেলস-এ। ১৯৫১ সালে যিনি হয়েছিলেন সাধারণ সার্জেন্ট সেই ইদি আমিন মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ১৯৬১ সালে লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ওবেতে রাষ্ট্রীয় সফরে সিঙ্গাপুর থাকাকালীন আমিন ক্যু করে দেশের ক্ষমতা দখল করে নেন। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর যে উপাধি গ্রহণ করেন এতে তার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। উপাধিটি হলো, ‘হিজ অ্যাক্সেলেন্সি প্রেসিডেন্ট অফ লাইফ, ফিল্ড মার্শাল আলহাজ ডক্টর ইদি আমিন বিসি, ডিএসও, এমসি, লর্ড অফ অল দি বিস্টস অফ দি আর্থ অ্যান্ড ফিসেস অফ দি সি অ্যান্ড কনকুয়েরার অফ দি ব্রিটিশ ইম্পিয়ার ইন আফ্রিকান জেনারেল অ্যান্ড উগান্ডা ইন পার্টিকুলার’। এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘উগান্ডা তথা আফ্রিকায় ব্রিটিশ আধিপত্য ক্ষুন্নকারী, দুনিয়ার সব পশু এবং সাগরের মৎস্যকুলের অধীশ্বর মহামান্য আজীবন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আলহাজ ডক্টর ইদি আমিন ভিসি, ডিএসও এমসি’। তবে এই স্বৈরশাসকের মৃত্যটা রাজকীয় হয়নি। বিদ্রোহের ফলে পালিয়ে যেতে হয়েছিল দেশ থেকে। লিবিয়ায় ১০ বছর থাকার পর সেখান থেকে চলে যান সৌদি আরবে। সেখানেই নির্বাসন জীবনে ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন ‘বুচার অফ উগান্ডা’ খ্যাত একনায়ক ইদি আমিন দাদা।