স্রেফ সাকিবের ভুলের খেসারত দিল বাংলাদেশ

স্রেফ সাকিবের ভুলের খেসারত দিল বাংলাদেশ

• শেষ চার ওভারে ৭১ রান তুলেছে আফগানিস্তান
• প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নিয়েও অব্যবহৃত মাহমুদুল্লাহ
তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন শাপুর এবং রশিদ
• ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : রশিদ খান
প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হারল বাংলাদেশ
• তিন ম্যাচ সিরিজে আফগানিস্তান এগিয়ে গেল ১-০ তে

আশঙ্কাকে বাস্তবে রুপ দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বিদ্ধস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবের প্রশ্নবিদ্ধ বোলিং সিলেকশনের খেসারত দিয়ে বাংলাদেশ হেরেছে ৪৫ রানে। দেরাদুনের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে এ পরাজয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ০-১ এ পিছিয়ে পরলো বাংলাদেশ।

পাওয়ার প্লেতে আফগান পাওয়ার

সিরিজে কেন বাংলাদেশকে সন্দেহাতীত ভাবে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না পাওয়ার প্লেতেই যেন সেটি প্রমাণের সফল এক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন আফগান দুই ওপেনার। শেহজাদ এবং ঘানি মিলে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে চল্লিশের বেশি রান তুলেছেন দুজন। ছয় ওভারে সাকিব বোলিংয়ে এনেছেন চারজন বোলার। কেউই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ঝড়টা গিয়েছে বাহাতি স্পিনার নাজমুল অপুর ওপর দিয়ে। দু ওভারে দিয়েছেন ১৯ রান।

রুবেলের আঘাত, আসগর-শেহজাদের প্রতিরোধ

উদ্বোধনী জুটিতে ৬১ রান আসার পর প্রথম আঘাত হানেন রুবেল। ঘানির স্ট্যাম্প উপড়ে দিয়ে শঙ্কার মেঘ গাড় হবার আগেই স্বস্তি এনে দেন রুবেল। সে আঘাতের ধাক্কা বেশ ভালোমতই সামাল দিয়েছেন আসগর এবং শেহজাদ। দুজনের জুগলবন্দি যখন বড় কিছুর আশা দেখাচ্ছে আফগানদের তখনই আঘাত হানেন অধিনায়ক সাকিব। শেহজাদকে ব্যক্তিগত ৪০ রানের মাথায় ফিরিয়ে মোক্ষম আঘাতটি হানেন তিনি। আফগান ব্যাটিং এর অন্যতম ভরসা শেহজাদ রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

মাহমুদুল্লাহ ম্যাজিকের পর স্ট্যানিকজাই ঝড়

শেহজাদ এর বিদায়ের পর আফগানদের অন্যতম ভরসা ছিলেন নবী। একই ওভারে নাজিবুল্লাহ এবং নবীকে ফিরিয়ে দিয়ে আফগানদের রানের গতিতে লাগাম টেনেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তার ম্যাজিকে দুই উইকেটে ৮৬ থেকে মুহুর্তেই চার উইকেটে ৯১ এ পরিণত হয় আফগানিস্তান। নবী ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চওড়া হন সামিউল্লাহ শেনওয়ারী। রাহীর করা এক ওভারেই বিশ রান তুলে নেন তিনি। সে ওভারের শেষ বলে ফিরে গেলেও তার ব্যাটিংয়ে ভরসা করার মতন পুজি গড়ে আফগানিস্তান।

প্রশ্নবিদ্ধ অধিনায়কত্ব, অব্যবহৃত মাহমুদুল্লাহ

মাহমুদুল্লাহ নিজের করা একমাত্র ওভারে এক রানের বিনিময়ে আফগান মিডল অর্ডারের দুই ভরসা নাজিবুল্লাহ এবং নবীকে ফেরালেও কেন তাকে আর অাক্রমণে আনলেন না সে জওয়াব সাকিবই ভালো দিতে পারবেন। অপর স্পিনার মোসাদ্দেকও এক ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র তিন রান। তাদের বদলে পেসার ত্রয়ী আবুল, রাহী এবং রুবেলের ওপরই ভরসা রেখেছিলেন সাকিব। ম্যাচ শেষে বলা যায় কেউই সে অর্থে ভরসার প্রতিদান দিতে পারেননি। ১৬-২০ এই চারটি ওভারে এসেছে ৭১ রান! এ রানের বিনিময়ে চারটি উইকেট আসলেও সেটি কতটা কার্যকর হয়েছে তা বাংলাদেশের ইনিংসেই বোঝা যাবে। ম্যাচটি যদি বাংলাদেশের হাত ফসকে যায় তাহলে এই তিন ওভার যে তাতে মূখ্য ভূমিকা রাখবে বলাই বাহুল্য।

পাওয়ার প্লেতে সাকিব তামিমের বিদায়, আশার আলো লিটনের ব্যাটে

বাংলাদেশ আফগানিস্তানের স্পিন জুজুতে কতটা আক্রান্ত তা দেখা গিয়েছে ইনিংসের প্রথম বলেই। মুজিবের বল খেলবেন কি আটকাবেন এই চিন্তাতেই জড়োসড়ো তামিম নিজের উইকেটটি যেন উপহারই দিয়ে আসলেন। তিন নাম্বারে নামা সাকিবও থিতু হতে পারেননি। বরং নবীর করা নিরীহ দর্শন একটি বলে অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটূভাবে। শুরুতেই দু উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন লিটন। তার সাবলীল ব্যাটিং এর কারণেই গলার ফাঁসটা চেপে বসাতে পারেনি আফগানরা। আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষের দিক, এবং নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই বিদায় নেয়া সাকিব ঠিক অধিনায়কোচিত ছিলেন না। তার আড়ষ্টতা বড়ং বিপদই বাড়িয়েছে বাংলাদেশের।

স্পিন বিষে নীল বাংলাদেশ

তামিম-সাকিবের পর পাওয়ার প্লের শুরুতেই নেই লিটন। তার উইকেটটা বোলারের নাকি আম্পায়ারের সে নিয়ে অবশ্য বিতর্ক হতে পারে। নবীর যে আবেদনে সাড়া দিয়ে আঙ্গুল তুলেছেন আম্পায়ার সেটি কোন বিবেচনায় আউট তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আম্পায়ারের ভুলে সম্ভাবনাময় ইনিংসটির অপমৃত্যু ঘটার আগে লিটন করেছিলেন ৩০ রান। লিটনের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মাহমুদুল্লাহ। জুটি বাধেন ভায়রা মুশফিকের সাথে। বাংলাদেশের বেশ কিছু স্বরণীয় জয়ের ভিত্তি রচিত হয়েছে এ দুজনের ব্যাটে। কিন্তু স্পিন জুজুতে কাতর মুশফিক সুযোগ পেয়েও পারলেন না কাজে লাগাতে। রশিদের বলে উচ্চাভিলাষী রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরলেন সাজঘরে। সাথে বাংলাদেশের সম্ভাবনাও কী? এমনটা মনে হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মুশফিকের বিদায়ের পরের বলেই তার দেখানো পথে হেটেছেন সাব্বির। মুহুর্তেই বাংলাদেশ পরিণত পাঁচ উইকেটে ৭৯ তে। এমন অবস্থাতেও ঘুরেফিরে আসছিল শেষের ওভারগুলোতে সাকিবের পেস নির্ভরতার বিষয়টি। পিচ যেখানে স্পিনারদের জন্য দু হাত বাড়িয়ে বসে আছে সেখানে কেন পেসারদের ওপর ভরসা করতে গিয়ে ম্যাচই তুলে দিয়ে আসা হল?

চতুর স্ট্যানিকজাই, রশিদে আটকালো বাংলাদেশ

সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অধিনায়কত্ব বলা যায় এটিকে। সাকিব যেখানে অপশন হাতে থাকার পরও তা ব্যবহার না করে ম্যাচ তুলে দিয়েছেন আফগানদের হাতে; সেখানে স্ট্যানিকজাই নিজের রসদগুলো ব্যবহার করেছেন দারুণ বুদ্ধিমত্তার সাথে। পেসে সাবলীল বাংলাদেশকে একপ্রান্ত থেকে টানা স্পিনার ব্যবহার করে চাপে রেখেছিলেন বাংলাদেশকে। আর নিজের সেরা অস্ত্র রশিদকে বোলিংয়ে এনেছেন এমন সময় যখন চার্জ করা ব্যতীত ভিন্ন কোনো পথ ছিল না সামনে। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। টি টোয়েন্টির এক নাম্বার বোলারকে চার্জ করতে গিয়ে উদার হাতে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। মুজিবে শুরুতেই পথ হারানো বাংলাদেশকে আর ম্যাচেই ফিরতে দেননি তিনি।

লেজটুকু ছেটে দিলেন শাপুর

আক্ষরিক অর্থেই যেন আগুন ঝরিয়েছেন শাপুর। প্রথম তিন ওভারে সুবিধা করতে না পারা এই পেসার শেষ ওভারে যেন উগরে দিলেন জমে থাকা সব বিষ। তাতে দংশিত বাংলাদেশ একই ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত করল তেতো পরাজয়ের স্বাদ। নিজের শেষ বলে রুবেলকে বোল্ড করার সাথে সাথে স্ট্যাম্পটাও ভেঙ্গে দিয়েছেন তিনি; যেটিকে চাইলে ম্যাচের প্রতীকী চিহ্নও বলা যায়। পরের ওভারেই ১২২ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। ললাটে লজ্জার পরাজয়।

শেষ চার ওভারের আক্ষেপ

এটা সত্য যে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে কখনোই সম্ভাবনাময় মনে হয়নি। কিন্তু তাতেও প্রশ্ন থাকবে সাকিবের সে সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতার। যেটি দিন শেষে বাংলাদেশের পরাজয়ের অন্যতম প্রধাণ কারণ। একই সাথে অধিনায়ক হিসাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে না পারাটাও আসবে সামনে। এদিন যেন বাংলাদেশ ভীষণভাবেই টের পেয়েছে মাশরাফির অভাব।